সুব্রতা দাশগুপ্ত

“ভানুর আব্দারেই গল্প বলা শুরু। কিন্তু সব গল্প তো আর আট বছরের ছেলেকে বলা যায়না! তাই এখানে …” -সুব্রতা

আজ আবার বিস্কুট। এরা বিস্কুট ছাড়া আর কিছু দিতে পারে না। শুকনো শুকনো বিস্কুট কি চিবোনো যায় ? তা এদের বোঝাবে কে ? না খেলে আবার কি রাগ ? আমাদের নাকি ‘বাবুয়ানি’ হয়েছে। এনার মা অবশ্য লোক ভালো। মুড়ি বা চিঁড়ে জলে ভিজিয়ে দেন। তবে সেখানে আবার ছোটদের ভিড়, যেতে লজ্জা করে। এদের কাজের মেয়েটার দয়ার শরীর। মাছের তেল, কানকো, তরকারীর খোসা, পচা আলুর টুকরো, এঁটো পাতের মাছের অংশ, মাংসের হাড়গোড় বেছে রাখে আমাদের দেবে বলে। তাতেও এনার আপত্তি আছে। ঘর নোংড়া হবে। যখন ছেলে ঘর নোংড়া করে তখন কিছু না। আমাদের বেলা যত বাহানা। এনার ছোটবেলার গল্প শুনেছি, আমাদের দাদু ঠাকুমার কাছে। ইনি ছোটবেলায়ও নাকি শুকনো মুড়ি বিতরণ করতেন। অথচ ওনার বাবা বারান্দায় বসে চায়ে মুড়ি ফেলে চামচ দিয়ে চায়ে ভেজানো মুড়ি খেতেন। আমাদের জন্য এক বাটি চা দিলে কি ক্ষতি হোত ? এনার ছেলের মনটা সাদা। মনে করুন সে ফ্রিজ থেকে চকলেট বার করল, তখন আমি জানালায় বসে আছি। খানিকটা খেয়ে আমায় বাকিটা দিল। অমনি পেছন থেকে ডাক। ‘‘বাবু ——-। চকলেটটা জানালার বাইরে ফেললে কেন ? পিঁপড়ে হবে না ? আরে, পিঁপড়ে হবে কি করে ? তার আগেই তো আমি খেয়ে ফেলব। এরকম কিপ্টে, সন্দেহ পরায়ণ, কঠোর স্বভাবের মহিলা আমি আগে দেখিনি।

লোকে বলবে, তুমি বাপু তাহলে এদের জানালায় আস কেন ? অন্য বাড়ি কি নেই ? সে বলতে গেলে অবিশ্যি একটা গল্প বলতে হয়। একদিন দুপুর বেলা ওনার শোবার ঘরের জানালায় বসে এসির জমা জলটা খাচ্ছি এমন সময় দেখি তিনি জানালার দিকে এগিয়ে আসছেন। নিশ্চয়ই তাড়াবেন এবার। হু—শ। না ইনি তো চুপচাপ এগিয়ে আসছেন। হাতে স্মার্ট ফোন। কি করবে রে বাবা। পালাবো ? না ভয় কি ? হাতে লাঠি তো নেই। ও বাবা মোবাইল ফোনটা সোজা করে তাক করেছে। কি সব টেপাটেপি করছে। হঠাৎ আলোর ঝলকানি। ও মা ছবি  উঠেছে। আমায় আবার দেখাচ্ছে। কি রূপ আমার। ভগবান কি আমাকে আর একটু রূপবান করে পাঠাতে পারতেন না ? গলায় আবার গান ভাঁজছেন। ‘‘কাগবা বোলে মোরি আটারিয়া টার-ওয়া সগুন ভইল বা’’ আরে এতো আমারি গান ? আমি গৃহস্থের বাড়ির ছাতে বসে ডাকলে গৃহস্থের কল্যাণ হবে। এতো জানা ছিল না ? বাঃ কি সুন্দর গান। আমাদের সম্প্রদায়ের জাতীয় সঙ্গীত করলে কেমন হয় ? কিন্তু গাইতেন বা কে ? কোকিল ভাড়া করতে হবে। নিদেন পক্ষে বুলবুলি। সেদিন তো এই কান্ড গেল।
এর দুদিন পর হঠাৎ আমার পিসতুতো দাদার সঙ্গে দেখা। ওর ভাগ্যটা খুবই ভালো। ও এক বাড়ির পোষা। সে বাড়িতে বাবুর কম্পিউটারে আমার ছবি দেখে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। অবাক কান্ড। কি সব ফেসবুক-টেসবুক আছে নাকি। যেখানে ছবি উঠে গেছে। এই মহিলার হাতযশ। না এনার মনটা বড্ড উদার। ছেলের ছবির পাশেই আমার ছবি তুলে দিয়েছেন। সবাই দেখছে। সেই থেকে এ বাড়ির জানালা থেকে নড়ি না। শুকনো বিস্কুট আর মুড়ি খেয়েই পড়ে আছি। ফেসবুকে ছবি দেওয়ার ব্যাপারে ইনি যে উদারতার পরিচয় দিলেন সেটা যদি খাবার দেওয়ার বেলায় থাকতো তাহলে ষোল কলা পূর্ণ হোতো। তবে কম খেয়ে আমার ফিগারটা আরো সুন্দর হয়েছে। এবার ছবি উঠলে আমি আরো বিখ্যাত হব। বৌদের লাইন লেগে যাবে- এই আশায় আছি।

*

চিত্রণ: মধুশ্রী বসু

1 thought on “কাকেশ্বর কুচকচে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.