অনুরাগ দাস

অনুরাগ দাসের পৃথিবী গদ্যময়। গদ্যের ডানায় ভর করে উনি এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে, এক শতাব্দী থেকে অন্য শতাব্দীতে উড়ে বেড়াতে ভালবাসেন। ওঁর সবচেয়ে পছন্দের উড়াল – ফুটনোট।  ভারি কোনো গদ্যের পুঁচকে কোনো ফুটনোটের পালকের ওম নিতে নিতে প্রায়ই উনি হারিয়ে ফেলেন নিজেকে – অচেনা কোনো স্পেসটাইমে। ওর লেখা মানে একটু জিরোনো – ওই গদ্যেই।

কণিকা দূরে কোথাও চলে গেছে। বা, কণিকা হয়তো কলকাতাতেই,আমি জানি না। প্রায় বছর দুই আগে ওকে শেষ দেখেছিলাম। গোলপার্কে। ফোন করে আমাকে ডেকেছিল কণিকা। একটা গাছতলায় দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ কথা বলেছিলাম আমরা। তারপর গোলপার্কের-ই একটা রেস্তরাঁয় ঢুকে খেয়েছিলাম। সেদিন পেট পুরে চিলি চিকেন খেয়ে রেস্তরাঁ থেকে বেরিয়ে কণিকা ঘোষণা করেছিল, “এই শেষ, এই আমাদের শেষ সাক্ষাৎকার।” একেবারে আচমকা ঘোষণা; আর একতরফা। আমি অবশ্য চমকে যাইনি। বা, আমার তরফে পাল্টা কোনো ঘোষণা করিনি। আমি বরং খুশি হয়েছিলাম। কেননা, ওর উচ্চারণের ভঙ্গিটা ছিল চমৎকার সাবলীল। অনুপ্রাসহীন, দ্ব্যর্থহীন। ওরকম স্পষ্ট উচ্চারণে আমি হাজারবার প্রত্যাখ্যাত হতেও রাজী। ঘোষণার সময় কণিকাকে বেশ সপ্রতিভ দেখাচ্ছিল। একরাশ সোনালি আভার চুল, নিখুঁত মুখের রেখা, চোখের তারায় আশ্চর্য ছিনিমিনি। আর সবচেয়ে বড় কথা – দারুণ আত্মপ্রত্যয় ছড়ানো ছিল ওর শরীরী বিভঙ্গে। আমি হেসে বলেছিলাম, “বেশ তো। কিন্তু এই আনুষ্ঠানিক শেষের দরকার ছিল কিছু? নাহয় না-ই দেখা হত আর।” কণিকা একবার চোখ তুলে তাকিয়েছিল আমার দিকে। একবার-ই। উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। রোদচশমায় চোখদুটো ঢেকে সটান হাঁটা দিয়েছিল লেকপাড়ের গাছগাছালির তলা দিয়ে। আর দেখিনি কোনোদিন। বছর দুই কেটে গেছে, একবারও না। স্বপ্নেও না, কল্পনাতেও না। 
আজ ফার্ন রোডের মুখটাতে বাস ধরার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। খামোখা-ই কণিকাকে মনে পড়ে গেল। সেই কবেকার তামাদি কণিকা! স্মৃতির পাতায় দু’বছরে কতই না ওলটপালট ঘটে গেছে! আজ দুম করে বিস্মৃতির ধূলট আস্তরণ ফুঁড়ে স্মৃতির উপরিতলে ভেসে উঠল। উটকো আগন্তুকের মতো। অবাঞ্ছিতের মতো। নিজেকে ভীষণ বুরবক মনে হল আমার। একটা সিগারেট ধরালাম। অথচ ফার্ন রোড ধরে হেঁটে আসার সময় পুরানো বন্ধু অরুণের বাবার কথা ভাবছিলাম। কী মানুষ কী হয়ে গেল!  কোটি টাকার ব্যবসা লাটে তুলে দিয়ে স্কিজোফ্রেনিয়ায় জড়িয়ে পড়ল। গতকালই অরুণের কাতর আহ্বান, “একবার আসিস। একা সামাল দিতে পারছি না। ফ্যাটাল কিছু যখন খুশি ঘটে যেতে পারে।” যাবার ইচ্ছা ছিল না। এইসব লোক আত্মহত্যা করে না কেন? গিয়ে দেখি ধুন্ধুমার কাণ্ড। ভদ্রলোক একখানা ধারালো ছুরি নিয়ে ঘরময় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। বাড়ির দলিলখানা বুকের সঙ্গে সাপটে ধরে রাখা। সামনে কেউ এলেই খুন করে ফেলবেন। দুনিয়াসুদ্ধ লোক সবাই নাকি চক্রান্ত করে ওঁর শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নেবে! পরিবারের কাউকেও বিশ্বাস নেই! এই পরিবেশে আমার বিবমিষা হয়। কিন্তু ,অগত্যা। নাক চোখ বুজিয়ে সহ্য করলাম। অনেকক্ষণ তক্কে তক্কে থেকে অরুণ আর আমি চকিত আক্রমণে ওঁর হাত থেকে ছুরিটা ছিটকে দিতে পারলাম। তারপর ভদ্রলোকের হাতদুটো পিছমোড়া করে বেঁধে একটা ট্যাক্সিতে তুলে নিয়ে গেলাম দত্তপুকুর মেন্টাল অ্যাসাইলামে। লোহার খাটের সঙ্গে বাঁধা হল। ইলেকট্রিকের শক দেওয়া হল। শক থেরাপি চলবে।
একটা ফাঁকা মিনিবাস বেরিয়ে গেল। আশ্চর্য! টেরই পেলাম না! ওটা নিশ্চয়ই কসবা-গার্ডেনরিচ,নইলে অতো ফাঁকা হত না। অফিসে অ্যাটেন্ডেসের বেশ কড়াকড়ি। দৌড়ে পরের স্টপে ধরব কিনা ভাবলাম। দৌড়লাম না।
রাস্তার ওপারে টেমস হোটেল। গেটে প্রচুর বেগনি রঙের বুগানভেলিয়া। ওই লতানে ছায়ায় এক প্রেমিক-প্রেমিকা গায়ে-গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা চুমু খাচ্ছে। প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া আর অবৈধ নয়। কেন খাচ্ছে? হয়তো ওরাও জানে না। নিরর্থক চুমু। ইউরোপীয় চুমু নয়, বেশ বাংলা চুমু। বাংলা চুমুও রসকষ হারিয়ে জুতোর সুকতলা বনে গেল। আর প্রেম করতে গেলে অত চুমুরই বা প্রয়োজন কীসের? একটা নিরর্থক রিচুয়াল বৈ তো নয়। ক্লান্তি নেই ওদের? আমি ওদের চেহারাদুটো দেখছিলাম। চমৎকার চেহারা, চমৎকার পিছন। শরীর কত ফোরফ্রন্টে এসে গেছে এখন!
মেয়েটা একটু ঘুরে দাঁড়াল এবার। একেবারে ফুলফ্রন্টাল ভিউ পাওয়া যেতে পারে এখন। চোখ তুলে দেখি, একী, এ যে প্রায় কণিকাই! আর তাই বুঝি উদো অ্যাসোসিয়েশনে কণিকা মগজের একেবারে অ্যাকটিভ জায়গাটায় এসে হানা দিয়েছে! হাউ এবসার্ড! আর এদিকে আমি ভেবে মরছি , আনকন্সাস আর ফ্যান্টাসি আমার এই কলকাত্তাইয়া রিয়ালিটির ভিতর গাঁথা হয়ে কোনো একটা আস্ত সাররিয়ালিটিই গড়ে তুলল কিনা! না, তেমন কিছু না।  এই মেয়েটাই কণিকাকে ফিরিয়ে আনল। তার মানে, ফার্ন রোডের মুখটাতে এসে দাঁড়ানোর মুহূর্তটাতেই মেয়েটার মুখটা এক ঝলক আমার চোখের ভিতর দিয়ে ঢুকে গিয়ে থাকবে। তাই যাকে বছর দুই আগে অপাঙক্তেয় জঞ্জাল বোধে বিস্মৃতির পগার পার করে দিয়েছিলাম, কোথাকার ফালতু একটা মুখের মিলে সে ধাঁ করে ফিরে এল। কী বলব , জাস্ট মেনে নেওয়া যায় না। এত সস্তা, এত খেলো চেতনার কারবার! খুবই বিরক্ত হয়ে উঠছি। শরীরের ভিতরে কি যেন একটা পাক দিয়ে দিয়ে উপরে উঠছে, টের পাচ্ছি। কণিকাকে ভোলা দরকার। এই মুহূর্তে ভোলা দরকার।

আবার একটা কসবা-গার্ডেনরিচ এসে গেছে। এটাও ফাঁকা। জানালার ধারেই সিট পেলাম। এগোতেই গড়িয়াহাটের মোড়ে সিগন্যাল লাল। পারাপার করছে মানুষ। পুরো মোড়টা যেন একটা র‍্যাম্প! নারী পুরুষ কচি কিম্বা ধাড়ি সব্বাই হাই ফ্যাশানে সাজগোজ করে যেন ক্যাটওয়াক দিচ্ছে। গড়িয়াহাটের বাসাংসি কখনো জীর্ণ হতে পায় না। গড়িয়াহাটের সাইক্লোরামায় সারাক্ষণই খলবল করতে থাকে বুর্জোয়া সুখ। মিনিবাস এগিয়ে যায়, সুখের বগল ঘেঁসে। পথে যেতে লাল শিমূলের দেখা মেলে। অশোক ফুটেছে বাঁদিকের ফুটপাথে। দেশপ্রিয়র ফুটপাথে রাস্তার কলে চালচুলোহীনেদের স্নান ইত্যাদি চলছে। কলকাতা লন্ডন হতে হতে পিছলে মোগাডিষু হয়ে পড়ছে। আরে বললেই হবে? আমাদের ভবঘুরে-ভিখিরির দেশ। কোনো আইন করেই কলকাতাকে লন্ডন করা যাবে না।
চেতলা পেরিয়ে ডায়মন্ড হারবার রোডে পড়েছি। ধাবমান কলকাতা নগরের গাঁজলা ওগরাতে ওগরাতে পিছু হটছে। গার্ডেনরিচ শিল্পাঞ্চলের ধুলো এখান থেকেই টের পাওয়া যায়। বছর খানেক হল রাজস্থান টী-তে জয়েন করেছি। প্রাইভেট সেক্টর, হাড়মাস কালি করে দেয়। তার উপর কোম্পানি নতুন প্ল্যান্ট খুলছে, এখন যুদ্ধকালীন তৎপরতা। ম্যানেজিং ডিরেক্টর সলিল চোখানি ফ্রন্টে নেমে সবকিছুর তদারকি করছেন। কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের ব্রুকলিন শেড লিজে পাওয়া গেছে। বিরাট স্পেস, একলাফে কোম্পানির রানিং ক্যাপিট্যাল দ্বিগুণ হল বলে। চোখানির আশা রাজস্থান টী দেশের লার্জেস্ট টী প্রসেসিং ইউনিট হবে। ঘন ঘন নর্থবেঙ্গল-আসাম ছুটছেন চোখানি। কোম্পানির নিজস্ব চা বাগানগুলোর এক্সটেনশান করতে হবে। নতুন কয়েকটা বাগানও এই ধাক্কাতেই কোম্পানি কিনতে চায়। আমি মেইনটেনেন্সে আছি। সারাদিন বিল টেন্ডার কোটেশানে মগজ ভরা থাকছে। এক এক সময় মাথায় বোঁ ধরে যায়। মনে হয়, সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে পালাই। ফ্যাকাল্টিতে থাকাকালীন কত সব স্বপ্ন পিং পং বলের মতো ড্রপ খেয়ে বেড়াত! সেই সব যাদবপুরের দিনগুলি!
যাদবপুরেই কণিকার প্রেমে পড়েছিলাম। ঠিকঠাক পড়েছিলাম কিনা জানি না, ভাবতে ভালবাসতাম, পড়েছি। যাদবপুরে এটা বেশ চলত, যে, স্পষ্ট প্রেমে না পড়ে আবছা রকমের প্রেমে পড়ে যাওয়া যেত। মানে, প্রেমের লক্ষণগুলো , বলা ভাল, সিম্পটমগুলো সব একই, কিন্তু ভিতর ভিতর একটা গা-ছাড়া ভাব। আমি তো বেশ জানতাম, আমার ওই প্রেমে পড়ায় শরীরের বা মনের একবিন্দু গরজ ছিল না। তবু যে প্রেমে পড়েছিলাম তার কারণ আমি বাঙালির ছেলে। বাঙালির ছেলের হাজার বছরের কাব্যকবিতার উত্তরাধিকার – একবার অন্তত প্রেমে না-পড়াটা অন্যায়। ঐতিহ্যের হানি। কণিকা কী ভেবে পড়েছিল, জানি না। জিগ্যেস করিনি। স্পষ্টই হোক বা আবছা, ঢের কথা হত কিন্তু আমাদের প্রেমে, ঢের হাঁটাহাঁটি হত হাতে হাত ধরে। কী চেয়েছিলাম আমরা? কিছু চাইতাম কি? জানি না। কেননা, তেমন কোনো অঙ্গীকার প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে কখনো আমরা উচ্চারণ করিনি। যদ্দূর মনে পড়ে, একবারই, এক প্রলম্বিত বসন্তবিকেলে ত্রিকোণ পার্কের বেঞ্চে বসে বেলাশেষের ম্লান আলোয় কণিকাকে আমি ‘ডিয়ার’ বলেছিলাম। তারপর ওকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমুও খেয়েছিলাম। সে চুমুর কথা ভাবতে গিয়ে আজ গা রি রি করছে আমার। কী করে পেরেছিলাম! চুমুর মতো নঞর্থক অনুভূতি আর কিছুতে নেই।
অফিসে ঢুকছি, জিভ আর ঠোঁটটা তেতো হয়ে রইল। চেয়ারে গা এলিয়ে ঢিলে হয়ে বসলাম। “সাতসকালে অমন মরা আরশোলার মতো লেপটে গেলে যে!” বিতস্তা বলল। বিতস্তাও মেইন্টেনেন্সে। একই সঙ্গে একইদিনে জয়েন করার সুবাদে ও আমার অফিসবন্ধু। অফিসের বাইরে বিতস্তা কী, আমি জানি না। শুনেছি মফস্বলের মেয়ে, খড়গপুরে নাকি বাড়ি। চেতলায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকে।
“মুখটা তেতো হয়ে গেল।” আমি বললাম।
“মুখের আর অপরাধ কি? মুখে মধু যোগানোর কাউকে তো ডাকলে না।”
“বিষ, শুধু বিষ। এ এক মধুহীন বিশ্ব।” বললাম আমি। বিতস্তা খিলখিল করে হেসে উঠল।
শঙ্কর দা ব্রুকলিন থেকে ফিরে খুব উচ্ছ্বসিত। “দেখ, কোম্পানির গ্রোথ ট্র্যাজেক্টারিটা দেখ। ফুলে ফেঁপে উঠছে। যাকে বলে এক্সপোনেনসিয়াল।”
বিতস্তা বলল, “কাকের্কী?”
অমনি সবকটা কিউবিক্যাল থেকে স্লোগানে সাড়া দেওয়ার মতো করে আওয়াজ উঠল – “কাকের্কী কাকের্কী কাকের্কী  কাকের্কী।” বিতস্তার কাকের্কী থিওরি বছর খানেকের পুরানো। বেশ ক্লিশে হয়ে গেছে। তবু মানুষ সাড়া দেয় এখনো। বিতস্তা বলল, “আরে, কোম্পানির বেল পাকলে এম.ডি.-র বউ হনুলুলু যাবে, তোমার আমার তো যে গড়ের মাঠ সেই গড়ের মাঠ।”
এ কথায় সবাই নিজের নিজের ফুট কাটল। সবাই কিন্তু জানে কোম্পানির ব্যাল্যান্স সিটে নজর লাগানো মানা। কোম্পানির নেট ওয়ার্থ হু হু করে বাড়বে, এমপ্লয়িদের জেনেও না জানার ভান করে থাকতে হবে। কী চমৎকার নৃশংস ব্যবস্থা!
বিতস্তা বলল, “কারণ, প্রাইভেট সেক্টরে চাকরির স্থায়িত্ব নেই। কোম্পানি চাইলে এই মুহূর্তে তোমাকে টারমিনেট করতে পারে। এটাই সব। এই আতঙ্কটাই কোম্পানির মূলধন। এই আতঙ্কটাকে ক্যাশ করেই কোম্পানির পারফরমেন্স এক্সপোনেনসিয়াল হলে এক্সপোনেনসিয়াল, অ্যাসিম্পটোট হলে অ্যাসিম্পটোট।”
চোখানি সাহেবের তলব। বিতস্তা উঠে গেল।
কণিকা ভেসে উঠেছে সঙ্গে সঙ্গে। আবার! প্রায় কঁকিয়ে উঠেছি আমি। এবার আমি নিজের উপরেই প্রচণ্ড ক্ষেপে গেলাম। আমার সন্দেহ হল, নিজের কাছেই আমি কিছু লুকোতে চাইছি কিনা? নিজের কাছেই গভীর গোপন কোনো আকাঙ্ক্ষা লুকিয়ে আসছি নাকি আমি? গভীর গোপন মনে হতে অবশ্য হাসি পেয়ে গেল আর রবিঠাকুরকে মনে পড়ল। অমনি একখানা দাড়ি নইলে গভীর গোপন কিছু লুকোনো যায়? কণিকা কিন্তু সরছে না। আমাদের ওই শেষ সাক্ষাৎকারের আগেই কি আমরা বুঝতে পারিনি, যে, এ গোঁজামিল টিকবে না? কণিকা কথায় কথায় বলত, “তোদের পুরুষ জাতটাকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি।”  আমি পাত্তা দিতাম না। ওর ওই নোংরা ইঙ্গিতটাকে একটা ইউনিভার্সাল মেয়েলি ফোবিয়া ধরে নিয়ে নিরুত্তর-ই থাকতাম। আজ বুঝছি – একটা উত্তরের হয়তো প্রয়োজন ছিল।
বিতস্তা ফিরল অনেক দেরি করে। আমি তো প্রায় ভুলেই গেছিলাম ও এম.ডি.-র চেম্বারে গেছে। তাকিয়ে দেখি, থমথম করছে ওর মুখচোখ। “কী হল?” জিগ্যেস করলাম।
“পুরুষ জাতটাই এরকম। মেয়ে দেখলেই ওদের  ছিনেজোঁক লাফাতে শুরু করে।”
সবাই হো হো করে হাসছে। আমি বললাম, “সর্বনাশ! রক্ত টক্ত শুষে নেয়নি তো?”
“তার আগেই মুখে নুন দিয়ে দিয়েছি। ঠাস ঠাস করে আচ্ছা কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিলাম। ক’দিন বারে গিয়ে ওর পানভোজনে সঙ্গ দিয়েছি তো। ধরে নিয়েছে, আমাকে দিয়ে যা খুশি করিয়ে নেওয়া যাবে। কী আবদার! বলে কিনা  –  চলো, নর্থবেঙ্গল-আসাম ঘুরে আসি”’
“তবে ! তবু তুমি হনুলুলুর খোঁটা দেবে ! আরে বাবা, হনুলুলু তো জলপাইগুড়ি থেকে হাঁটাপথ!” শঙ্কর দা বলল।
“এসময় ওনার একজন ভাল সেক্রেটারিরও তো দরকার।” আমি বললাম।
বিতস্তা মুখভঙ্গি করল, “হ্যাঁ, একজন ভাল সিক্রেটারিরও” আমি আর কথা বাড়ালাম না।
তুরন্ত অ্যাকশান। ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই পরওয়ানা এসে গেল। “ইওর সার্ভিস ইজ নো লংগার রিকোয়ার্ড।” বিতস্তা একটুও ঘাবড়ে না গিয়ে জুতোয় খট মট শব্দ তুলে কোম্পানি থেকে বেরিয়ে গেল। যাবার আগে বলে গেল, “কেয়ার করি না। কাজটা যখন ঠিকঠাক শিখেছি ,অমন চল্লিশখানা এম.ডি. আমার পায়ে ধরে সাধবে।” সাধলেই ভাল, মনে মনে বললাম। একবার মনে হল, ওকে ফেরাই। বলি যে, দুনিয়াটা অতো সোজা না। চাই কি, ওর হয়ে এম.ডি.-কে  গিয়ে বলতেও তো পারি। যত হলেও বিতস্তাকে বন্ধু বলে মানি।ওর বিপদে পাশে দাঁড়ানো কর্তব্য। কিন্তু এমন হুড়মুড় করে বেরিয়ে গেল মেয়ে, কোনোদিকেই কিছু করার উপায় থাকল না। ভাবলাম, যাক গে, ওর ভবিষ্যৎ ওকেই ভাবতে দাও।  তবু কীসের একটা খোঁচ কাঁটার মতন ভিতরে গিয়ে বিঁধছে। স্মোকিং জোনে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম। গতকাল থেকে একটার পর একটা অ্যাকসিডেন্ট ঘটেই চলেছে। আর যত এসব ঘটছে ততই বোধের জায়গাটা ভোঁতা হতে হতে অদ্ভুত একটা, কী বলব, নির্বেদ – হ্যাঁ,  নির্বেদই আমাকে গ্রাস করছে। ধীরে ধীরে সংবেদনাই হারিয়ে ফেলব নাকি?
কণিকা! কণিকা সহজে আমাকে ছাড়বে না দেখছি। কণিকা একদিন বলেছিল, “আমাকে তুই আর পাঁচটা মেয়ের মতো ভাবিস না। শরীরটাকে আমি সন্ধ্যাকুসুম ভাবি না,যে, আমাকে চটকে ফেলবি।  অবশ্যই ভায়োলেট করতে পারিস, অবশ্যই আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে চালিত করতে পারিস আমার শরীরটাকে,  তাতে আমার আমি-টাকে ছুঁতেও পারবি না। আমি আমার শরীরটাকে উতরে এসেছি।” কণিকার ওই শরীর সংক্রান্ত কমপ্লেক্স আমাকে ভীষণ বিরক্ত করত। আর পাঁচটা মেয়ের মতোই ও ওর শরীরের জালে বন্দী ছিল। ওর শরীরের সামান্যতম উপেক্ষাও কখনো ওকে স্পোর্টিংলি নিতে দেখিনি। আবার সামান্যতম আগ্রহও ওকে করে তুলত আতঙ্কিত। তবু জাহির করা চাই, ও নাকি শরীরী চেতনার ঊর্দ্ধে! ওর শরীর আমি কোনোদিন স্পর্শ পর্যন্ত করিনি, শরীর বলতে যদি শরীরের আবৃত অংশকেই বোঝায়।
মোবাইলে বিতস্তা  – এখুনি একবার আমি ওর সঙ্গে দেখা করতে পারি কিনা জানতে চায়। বেরিয়ে এলাম অফিস থেকে। বিতস্তা অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা ওর গড়ের মাঠেই পৌঁছে গেছে। একা একা ভাল লাগছে না নাকি ওর ! আমাকে এখন ভাল লাগাতে যেতে হবে !জগতে কত রকমের যে কাজ থাকতে পারে! চোখানি এখনই হয়তো খোঁজাখুঁজি করবে। একটা কিছু অজুহাত খাড়া করে হাফ-ডে লিভ নিয়ে গেলেই হত। ইচ্ছে করছে না। আমি বরাবর এরকম দায়িত্বহীনের মতো কাজ করি  – এমন নয়। আজ একটু বেপরোয়া হতে ইচ্ছে করল।
বিতস্তা উদাস হয়ে বসে আছে ভিক্টোরিয়ার গেটের পাশে, কুইন্স ওয়ের ধারে, একটা বিশাল দেবদারু গাছের ছায়ায়। মুখের থেকে একটু আগের ডোন্ট-কেয়ার ভাবটা উধাও। বলল, “জয়দীপ, তোমাকেই আমার ডিসিশানটা নিতে হবে।”
“মানে?” আমি জানতে চাইলাম।
“এখন আমি কী করি?  কোথায় যাই?”
“দুটো পথ। হয় এম.ডি.-র আবদার মেনে নাও, নয় কাল থেকেই খবরের কাগজের ক্ল্যাসিফায়েডে চোখ রাখ। প্রথমটার ক্ষেত্রে আমি মিডিয়ামের কাজটা করতে পারি।”
বিতস্তা বোধহয় কোনো তৃতীয় পথের আশা করছে, আমার বলা দু’টোর একটাও ওর মনে ধরেছে বলে মনে হল না। একটা চটজলদি কোনো সমাধান হয়তো ও চায়, অথচ চোখানির কাছেও মাথা নোয়াতে না হয়, এরকমই বোধহয় ওর মনোবাসনা। “তোমার কোনো পরিচিতকে ধরে কিছু হয় না?” বিতস্তা বলল।
“একটা আস্ত চাকরি করিয়ে দিতে পারি, অতবড় উমেদার এখনো হতে পারিনি।”
আমি ওকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, চোখানির কাছে ফিরে যাওয়াটাই কেন সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। এভাবে জীবনটাকে নিয়ে জুয়ো খেলা উচিত কেন নয়। আর চোখানি যে বাজে মতলবেই ওকে নর্থবেঙ্গলে নিয়ে যেতে চাইছে, তা তো নাও হতে পারে। আর বাজে মতলবই বা কি? ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওকে সেক্সচুয়ালি হ্যারাস করবে, অতখানি ছোটলোক নিশ্চয় চোখানি নয়। আরে বাবা, বাড়িতে বৌ-বাচ্চা আছে বলেই কারোর আর মেয়েবন্ধু থাকতে পারবে না, একথা কোন মহাভারতে লেখা আছে?
বিতস্তা সহজে ভোলার নয়। ওকে নিয়ে ফারপোর একটা বারে অনেকটা বিয়ার খেলাম। বিতস্তা মাত্রা রাখতে পারল না। কী করি? ওকে ফার্ন রোডে আমার ফ্ল্যাটে নিয়ে এলাম। নেশাটা একটু কেটে গেলে একাই ওর চেতলার ফ্ল্যাটে ফিরে যেতে পারবে। আমার সিঙ্গল-রুম সিঙ্গল-বেড ফ্ল্যাট, টয়লেট কিচেন। একা থাকি, এক এক সময় এটাকেও বাহুল্য মনে হয়। বিতস্তাকে আমার বেডেই শুইয়ে দিলাম। বিতস্তা জড়ানো গলায় বলল, “বেহুঁশ না হলে তো কোনোদিন আনতে না। বিয়ারের সৌজন্যে তবু তোমার ফ্ল্যাটটা দেখা হয়ে গেল।”
বিতস্তা এই বিকেল বেলাটায় ঘুমিয়ে পড়েছে। অতএব – অবধারিত – কণিকা। একটা কিছু করা দরকার। কণিকার কোনো স্মারক এখনো আমার কাছে থেকে গেছে কিনা মনে করার চেষ্টা করলাম। পুরানো ডায়েরিগুলোর পাতা উল্টে পাল্টে অনেক খুঁজলাম। কোনো ট্রেস পাওয়া গেল না। ল্যাপটপে খুঁজলাম, পেলাম না। ওকে চিরতরে ভুলে যাবার প্রক্রিয়ায় কোনো খাদ মেশাইনি, এটা স্পষ্ট। অথচ! অথচ, একটা তীক্ষ্ণ শ্লেষের মতো কণিকা আমাকে দিনভর  জ্বালাচ্ছে। অরুণকে ফোন করে, অরুণ ওর বন্ধু বিকাশকে ফোন করে, শেষমেষ একটা ই-মেল আইডি পাওয়া গেল, যেটা কণিকার হলেও হতে পারে। হলেও, সেটা এখনো লাইভ আছে কিনা, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
আমি কিন্তু ওকে প্রথমেই কিছু মেল-টেল করছি না। সোশাল নেট-ওয়ার্কিং সাইটে প্রথমে নারী-শরীর ও আমি বিষয়ে একটা নাতিদীর্ঘ নিবন্ধ লিখে ফেললাম। তারপর, ওকে মেলে লিখলাম, তুই পুরুষ জাতটার সম্পর্কে কিছুই জানিস না। সেন্ট হল। কিন্তু, কার কাছে গেল, জানি না। একটু যেন আমোদই পেলাম। সত্যিই যদি এতদিন পরে কণিকা আমার মেল রিসিভ করে, কী হবে ওর রিঅ্যাকশান? খুব চটে যাবে নিশ্চয়। চটুক। আমি তো ওকে চটাতেই চাইছি। সারাদিন ধরে যেভাবে ও আমাকে জ্বালাচ্ছে, তার তুলনায় এ তো কিছুই নয়। এখন আমি খুব নিশ্চিত, আমার মেলে উত্তেজিত হয়ে একবারও যদি ও রিঅ্যাক্ট করে, তাহলেই ওকে আমি স্মৃতি থেকে নির্মূল করে দিতে পারব। ফর এভার। কেন আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হলাম, জানি না। কিন্তু, হলাম। এখন কাজ যেটুকু পড়ে রইল, যে, ওকে দিয়ে রিঅ্যাক্ট করানো। বিতস্তা ঘুম ভেঙে ওঠা পর্যন্ত আমি কণিকাকে মোট পাঁচটা মেল পাঠালাম। বাকি চারটে এরকম :
তোর শরীরী অবসেশানই পুরুষ সম্পর্কে তোর ভুল মূল্যায়নের কারণ।
তোর পুরুষ সম্পর্কিত স্টিরিওটাইপটা তুই আমার ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করেছিলি কী করে? আমি তো বরং তোর মনটাকেই বুঝতে চেয়েছিলাম।
পুরুষ, আর পাঁচটা মেয়ের মতোই, তোর কাছেও একটি লিঙ্গ-অতিরিক্ত কোনো স্বত্বা নয়।
আসলে তুই কি আমার শরীরটাই চেয়েছিলি?
বিতস্তা ঘুম ভেঙে উঠে আমার টাওয়েলটা নিয়ে টয়লেটে ঢুকে গেল। সন্ধে নেমে গেছে কিছুক্ষণ আগে। টয়লেটে জোরে অনেকক্ষণ ধরে জল পড়ছে। বিতস্তা স্নান সারছে বোধহয়। হ্যাঁ। স্নান সেরে টাওয়েল জড়িয়ে ও বেরিয়ে এল, চুল সপসপে ভেজা। বিতস্তা বলল, “তোমার একটা সার্ট দাও তো।” বলে, আমার অপেক্ষায় না থেকে কাবার্ড থেকে আমার একটা সার্ট বের করে পরে – প্যান্টির নীচে ঊরু সমেত পা দু’টো খোলাই রইল – বিছানায় বসে পা দোলাতে লাগল। বললাম, “কী হল? বাড়ি ফিরবে না?” বিতস্তা বলল, “না, আজ রাতটা থেকে যাব।”
“আমার সঙ্গে বিছানা শেয়ার করতে তোমার আপত্তি নেই দেখছি।” আমি বললাম।
“না, আপত্তি কীসের? তাছাড়া জয়দীপ, আমরা পুরুষ চিনি।”
“তবে যে তখন বললে, পুরুষ মানেই ছিনেজোঁক না কী?”
“তোমাকে আমি সেই পুরুষ মিন করিনি।”
“সে কী ! আমি তোমার চোখে সেক্সলেস নাকি?”
বিতস্তা হি হি করে হাসল। বলল, “যাও, টিজ করো না তো।”
আমি দু’জনের মতো রান্না করলাম। বিতস্তা এটা ওটা টিপস দিচ্ছিল। একসঙ্গে খেলাম।
এক বিছানায় শুয়েছিলাম। বিতস্তাকে কণিকা এপিসোড পুরোটা শোনালাম। ও এ কাহিনীকে কোনো গুরুত্বই দিতে চাইল না। মনে যদি পড়েই, পড়ুক না। অমন কত মনে পড়বে, কত মন থেকে বেরিয়ে যাবে, তা নিয়ে ভাবনার কী হল? বিতস্তাই ঠিক। কিন্তু, কণিকার স্মৃতি আমাকে কিছুতেই শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। আমি বিছানা থেকে উঠে মেলবক্স চেক করলাম। কোনো রেসপন্স নেই। আবার শুতে গেছি, বিতস্তা উঠে বসল।
“তুমি তো কিছু করলে না?” বিতস্তা বলল।
“কী করলাম না?” আমি বললাম।
“বা রে! তা’বলে আমাকে একটু আদর টাদর-ও করতে নেই?”
“ওরে আমার খুকু রে। আয়, তোকে আদর করি”, বলে একটু গায়ে হাত বুলিয়ে দিতেই বিতস্তা আমার উপর চড়ে বসল। তারপর কী সব যেন করছিল। বোধহয় আমার জামাকাপড় খুলে দিয়েছিল। বোধহয় ওর জামাকাপড়ও খুলে ফেলেছিল।। বোধহয় একবার চুমুও খেয়েছিল। আর আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন হতে হতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
সকালে উঠে দেখি, বিতস্তা চলে গেছে। একটা কাগজে লেখা – আজ অফিসে দেখা হবে। চোখানির কথা মেনে নেব। কেমন হ্যাং হয়ে রয়েছে মাথাটা। টয়লেটে গিয়ে ফ্রেশ হওয়ার চেষ্টা করলাম। মাথার ভিতরটা ভীষণ ফাঁকা মনে হল। একটা বড়সড় শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে মগজের ভিতরটায়, টের পেলাম। বিছানার পাশে এসে বড় আয়নাটায় মুখটা দেখতে চাইলাম। আয়নার ভিতরটা ধূ ধূ ফাঁকা। আয়নায় আমার কোনো প্রতিবিম্বই নেই। আশ্চর্য! একফালি ছাই-রঙের আকাশ জানলা গলে ঢুকে কিউবিক ছবি এঁকেছে আয়নায়। সে ছবিতে আমার চিহ্ন পর্যন্ত নেই!
জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম। শূন্যতার দিকে তাকিয়ে রইলাম। মৃত্যুর দিকে তাকিয়ে রইলাম। কতক্ষণ জানি না। মোবাইলে ফোন এল একটা, ধরা হল না। অনেকবার বাজল ফোনটা, ধরা হল না। জানলা থেকে সরে এসে বিছানায় বসলাম। আবার এল ফোনটা। কণিকার ফোন। ফোন ধরে উত্তর দেওয়ার কোনো ইচ্ছে রইল না। শুধু বুঝতে পারলাম, কণিকা আমার সঙ্গে একবার দেখা করতে চায়। আজ বিকেলেই দেখা হতে পারে। গোলপার্কে।
অফিস গেলাম না। দুপুরবেলায় একবার বিতস্তা ফোন করে জানাল, ও আজ বিকেলেই চোখানির সঙ্গে নর্থবেঙ্গল-আসাম ট্যুরে বেরিয়ে যাচ্ছে। ফিরলে দেখা হবে।
বিকেলে গেলাম গোলপার্কে। কণিকাকে আমি চিনতেই পারিনি। বেশ বুর্জোয়া রকমের দেখতে হয়েছে। ও আমার মেলগুলোর প্রাপ্তিস্বীকার করল। পাশে দাঁড়ানো ভদ্রলোকটির সঙ্গে পরিচয় করাল ওর স্বামী বলে। তখনই অনতিদূরে দাঁড়ানো একটা পুলিশ ভ্যান থেকে নেমে, একজন সাদা পোশাকের পুলিশ নিজের আইডেনটিটি ডিসক্লোজ করে জানালেন – তিনি সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসার। তাঁর সঙ্গে একবার আমাকে থানায় যেতে হবে। কণিকা, কণিকার স্বামী আর আমাকে নিয়ে অফিসার থানায় এলেন। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আমি ওই স্বামী ভদ্রলোকটির স্ত্রীকে ই-মেলে উত্তক্ত করছি। আমি বললাম, কণিকা আমার পুরানো প্রেমিকা। তাতে আমার কৃতকর্মের কোনো যৌক্তিকতা প্রমাণিত হল না। পুলিশ বলল, “দেখে তো ভদ্রলোকের ছেলে বলেই মনে হচ্ছে। নেট-ওয়ার্কিং সাইটে আর্টিকেলটাও জব্বর লিখেছেন দেখলাম।  রেপিউটেড কোম্পানির মেই্নটেনেন্স অফিসার! তো,  এই সব ইতরামিগুলো ছাড়তে পারেন না?  ভদ্রলোককে সকালের ফ্লাইটেই কত কষ্ট করে সুদূর সুরাট থেকে উড়ে আসতে হল! গড নোজ, হীরের ব্যবসায়ী না হয়ে আম আদমির মতো হলে,  ভদ্রলোকটির কী অবস্থাই না হত!”
আমাকে অ্যারেস্ট করা হল।
আমি বরং খুশিই হলাম। একারণে যে, কণিকার হাত থেকে আমি চিরকালের জন্য মুক্তি পেয়ে গেলাম। ফর এভার। ও আর কোনোদিন আমার স্মৃতিতে ভেসে উঠবে না। ওকে আমার এতদিনের না বলা কথাগুলো বলে আমি নিজেকে খালাস করে নিয়েছি।
একটা রোদচশমায় চোখদু’টো ঢেকে, গুজরাটিটার হাত ধরে, একটা চেরি-রঙের কোয়ালিসের ভিতরে ঢুকে, হুশ করে কণিকা হারিয়ে গেল।

(চিত্রণ – রু)

1 thought on “কণিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.