দেবাশিস আইচ

বর্তমানে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনে কলকাতার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রধানত জেলা ও গ্রামীণ সংবাদ প্রচার ও সম্প্রচারের দায়িত্ব পালন করেছেন। মানবাধিকার, পরিবেশ, বন্যপ্রাণ, প্রান্তিক মানুষের কথা লেখালেখির প্রিয় বিষয়।  দ্য স্টেটসম্যান অ্যাওয়ার্ড ফর রুরাল রিপোর্টিং, ২০১২ পুরস্কার পেয়েছেন।  সাম্প্রতিক প্রকাশিত বই ‘মায়াবন্দরের রূপকথা’। প্রথম বই, ভাগলপুর দাঙ্গার প্রেক্ষিতে গল্পগ্রন্থ ‘দহননামা।’ কবিতার বই, ‘আমাকে জাগিয়ে রাখো’ ও ‘রাত্রিকাল রাত্রিকথা।’ ১৯৮৯-১৯৯৭ মানবাধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (পিইউসিএল)-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।


ভাঙা ভাঙা বৃষ্টি সঙ্গে নিয়ে চলেছি। এ পাহাড় থেকে ও পাহাড়। এ চূড়ায় বৃষ্টিকে তাড়া করি তো, ও চূড়ায় বৃষ্টি আমায় তাড়া করে। শৈলশিরার বাঁকে কোথাও দু’চার ঘরের গ্রাম। দু’চারজন মানুষের হঠাৎ দেখা মিলছে সেখানে। বাজরা-ভুট্টা, স্কোয়াস-শালগমের খেত-খিদে-বৃষ্টি এ সবই তাদের রোমাঞ্চিত করে তোলে নিশ্চিত। গুরুং, ভুটিয়া, লেপচা, তামাংদের লোকগাথায়-গানে-কবিতা-ছড়ায় এ পাহাড়ে সে রোমাঞ্চ লেখায়-রেখায় থাকলেও পড়তে চাইনি কখনও। পড়তে পারিনিও। পাহাড় জুড়ে চাপচাপ মেঘ। দুপুর বারোটা এখন। ঘড়ি বলছে। প্রকৃতি বলছে অন্যকথা। সে নির্দেশ মান্য করেই ফগলাইট-হেডলাইট সবই জ্বালিয়ে রেখেছে সোনম। তবুও সামনে ধূসর-কালো মেঘের পর্দায় কেবলই সে এক মায়া তৈরি করে চলেছে। বাঁকের মুখে হেডলাইটের আলোয় পথের ধারে কিংবা খাদ থেকে উঠে আসা চিলুনি, শিমুল, টুন, চাপ, গোগুলধূপ, পানিসাজ গাছগুলোকে দেখি মেঘের বোরখায় ঢাকা। খুব কাছে থাকলে তাদের ডালে ডালে ঝুলন্ত অর্কিড, শরীরে চাপ চাপ শ্যাওলা চোখে পড়ে। দূরে চোখ যায় না। পাহাড়িয়া বৃষ্টি ছিনে জোঁকের মতো, একবার নামলে কবে যে থামবে-সে তার মর্জি। তখন গুম মারে মন। ও মন মানুষের। পাহাড়ে-পাহাড়ে, শিরায়-চূড়ায়, খাদে-খাদে, নদী-ঝোরায়, পাতায়-পাতায়, ডালে-ডালে তখন কী স্ফূর্তি! কীট-পতঙ্গের রাজত্ব, সাপ-ব্যাঙের রাজত্ব তখন। নেওড়া উপত্যকার আদিম অরণ্যে তখন প্রেমের শিহরণ। নতুন জীবনের ডাক। সবটাই যে এমন তা নয়। হিমালয়ের এ পাহাড়ে যত পাথর, ততই মাটি। বৃষ্টিতে কখন যে মাটি আলগা হয়ে নেমে আসবে ঘর-সংসার নিয়ে-সে আশঙ্কা মাথায় নিয়ে গরিব-গুর্বোদের দিন কাটে। সোনম অ্যাক্সিলেটারে চাপ বাড়ায়। পথটা অনেকটা খাড়া হয়ে উঠেছে। মনের মতো দুর্যোগ মাথায় নিয়ে ঝান্ডি পৌঁছে গেলাম প্রায়।

চুলের কাঁটার মতো এক বাঁক নিয়ে এক্কেবারে পাহাড়ের মাথায়। এখানেই এ পথের শেষ। গ্রামের নাম ঝান্ডি দাঁরা। হাতে গোনা কয়েকটা ঘর। তার একপাশে ছোট্ট টিলা জুড়ে এক রিসর্ট। হ্যাভারস্যাক পিঠে ঝুলিয়ে রেনকোট জড়িয়ে নিলাম। নিমা একটা প্রকান্ড ছাতা নিয়ে ছুটে এসেছিল বটে। লটবহরের আরও প্রকান্ড খামতি দেখে বোধহয় হতাশই হল। সহসা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট আমি। সীমানা প্রাচীরহীন এই শরণগৃহে দেবী এক। পাথরে পাথরে বাঁধানো নামনি পথ বেয়ে নেমে আসছেন। আমি পাথরের সিঁড়ি গুনে গুনে উজানি পথে এগোতে লাগলাম এক পা এক পা। মনে হল, বহু যুগের ওপার হতে টেথিস সাগর ফুঁড়ে যেন উঠে এল এক নবীন কন্যা। যেন তার পায়ের নীচে পাথরে পাথরে লক্ষ লক্ষ বছরের ফসিলের শিলালিপি। অতীত-অক্ষর জ্ঞানহীন আমি সেই মুহূর্তেই স্থির করলাম- এ অজ্ঞাতবাসে সোনার হরিণের খোঁজে আসিনি। এ শপথ নিশ্চিতি দিল। পায়ে পায়ে এসে দু’ধাপ নীচে দাঁড়ালাম। মৃদু হেসে ডানহাত বাড়িয়ে দিল সে। অস্ফুটে বলল, ঝান্ডুতে স্বাগত। সনাতন ভদ্রলোকের মতো আঙুল স্পর্শ করলাম। দেবী এবার মানবী হয়ে উঠলেন।
নিমার প্রতি নির্দেশ গেল। আমার ঘর দেখিয়ে দেওয়ার। মৃদু ভাষ্যে জানালেন, লাঞ্চ তৈরি। দুপুরের খাবার, রাতভর ছুটে চলা আর আবহাওয়া উষ্ণ বিছানার ডাক শোনাল। কফি হাতে নিমা ফের যখন দরজায় টোকা দিল, তখন সন্ধ্যা নেমে এসেছে। কফির মাগ হাতে নিয়ে পায়ে পায়ে চলে এলাম রিসর্টের ভিউ-পয়েন্টে। বৃষ্টি ধরেছে বটে, তবে আকাশ জুড়ে মেঘের রাজ। মেঘের পর্দা সরিয়ে চাঁদ কখনও-সখনও উঁকি মারছে। যেন এক পর্দানশীন। যেন এক অবগুণ্ঠনবতী। চাঁদের চোখের আলোতেই দেখি মেঘের আনাগোনা। সে মুখ ঢাকলেই আবার সেই নিকষ কালো আকাশ। চরাচর স্তব্ধ। সাঁঝের ঝিঁঝি-ঝিঁঝিনির একটানা প্রেমালাপ ছাড়া আর কোনও জাগতিক শব্দ নেই। দুর্যোগের আশঙ্কায় সকলেই যেন মুখে কুলুপ এঁটেছে। এই নিস্তব্ধতা আকণ্ঠ পান যোগ্য।
_DSC0204
ঘোর কাটল আচমকা। আরও কফি, চলবে তো। মৃদু পায়ে কখন যে রিসর্ট কর্ত্রী উঠে এসেছেন বুঝতে পারিনি। সঙ্গে ট্রে ভরা ফ্লাক্স, কাপ, টুকিটাকি খাবার। এক-দুই কথায় শুরু হল আলাপ। আপনার মনসুন ভাল লাগে তাই না?
কেন বলুন তো?
নাহ! বর্ষায় তো তেমন পাহাড়ে কেউ আসে না। দেখছেন না কোনও ট্যুরিস্ট নেই।
বলতে পারেন, বৃষ্টি আমাকে টানে। সে পাহাড় হোক কিংবা জঙ্গল। সাগর হোক কিংবা কলকাতার ময়দান।
লেখকরা বর্ষা পাগল হয় তাই না?
সব লেখকের কথা বলতে পারব না। মেঘদূতের কথা অল্পসল্প জানি। শান্তিনিকেতনে বৃষ্টির গন্ধ পেলেই রবীন্দ্রনাথ শিশুর মতো হয়ে উঠতেন। তা নিয়ে বেশ মজার ঘটনাও রয়েছে।
কী মজার ঘটনা?
শান্তিনিকেতনের ভয়ংকর গ্রীষ্ম এড়াতে প্রায়শঃই তিনি পাহাড়ে বেড়াতে যেতেন। সেইবার ঠিক হল দার্জিলিং যাবেন। বোলপুর স্টেশন থেকে উঠবেন দার্জিলিং মেলে। লোক-লস্কর, আত্মীয়, সচিবরা লটবহর নিয়ে আগেই স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছেন। ট্রেন এসেছে। মালপত্র উঠেছে। তিনি আসছেন। তিনি আসছেন কিন্তু কোথায় তিনি। হঠাৎ দেখা গেল স্টেশনের পথ থেকে গাড়ি ঘুড়িয়ে সটান ফিরে এসেছেন আশ্রমে। ফিরে এলেন যে? নাহ! যাওয়ার পথে কৃষ্ণকলি মেঘে ছেয়ে গিয়েছে আকাশ। বাদল হাওয়ায় ভর করে বৃষ্টি নামল বলে। শান্তিনিকেতন ছেড়ে এ সময় কী আর দার্জিলিং যাওয়া চলে! তাই স্টেশন থেকে ফিরে এসেছেন। বৃষ্টি নামেনি সে যাত্রায়। ফের দু’দিন বাদে দার্জিলিং যাত্রা করেন তিনি।
আপনিও তো লেখক।
সে আবার কে বলল?
কেন দাদা।
ওহঃ! কাগুজে লেখক।
মানে?
মানে হল, কাগজে কাজ করি কি না। তাই কাগুজে।
মোটেও না, দাদা কিন্তু অন্যকথা বলল। আপনি এখানে কোনও একটা লেখার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন।
তা ঠিক। তবে আপনি যেভাবে ভাবছেন তা নয়।
একটা ছুটির সুযোগ মিলল। চলে এলাম। অনেকদিনের ইচ্ছা। এখানকার এক লেপচা রাজার কাহিনি পড়েছি। তার রাজত্ব দেখতে আসা। পাহাড়ে বৃষ্টি তাও একটা টান বলতে পারেন।
ডামসাঙ-এর কথা বলছেন। এখান থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার।
ঠিক তাই। আমি এক আশ্চর্য আদিবাসী গোষ্ঠীর কথা বলছি। আমরা যেভাবে প্রকৃতির কথা বলি, তার মধ্যে মিথ্যে অনেক। প্রকৃতিকে আমরা প্রতিপক্ষ বানিয়েছি। আপন করে নিইনি। যারা নিয়েছিল, তারাই বলতে পারে… ‘আমরা  ঈশ্বর ও প্রকৃতি মায়ের প্রিয় সন্তান, / যখন ধরণীতে প্রথম জন্ম নিল বাঁশ,/ জন্ম নিল ঝাড়ু ঘাস,/ তেমনই জন্ম নিয়েছি আমরা,/ তোমরা ভালভাবেই বুঝবে, যদি বলি/ লেপচা, বাঁশ আর  ঝাড়ু  ঘাস মিলেমিশে এক।’ এটা একটা লেপচা লোকসংগীত। আমার অক্ষম অনুবাদ। আমাকে বল এ ভাষায় আমরা আর কথা বলি কি না?
সময় রাতের দিকে গড়াচ্ছে। নিমার ডাক এল। লঘু পায়ে রাতের খাবারের তদারকি করতে চলে গেলেন কর্ত্রী। অন্ধকার আরও একটু ঘন হল।
ভোর হল। বৃষ্টি খ্যামা দিয়েছে, কিন্তু হালকা মেঘের চাদরে শরীর ঢেকে জড়সড় দিন। ফের এসে বসলাম ভিউ-পয়েন্টে। কফির পট এল সাথে সাথে। এই পর্বতশীর্ষের দক্ষিণ দিকটি খাড়া নেমে গিয়েছে। দূরে হরেক রকম সবুজ। বনের সবুজ, ধান ক্ষেতের সবুজ, চা-বাগান, ধাপ চাষের সবুজ। দিগন্ত বিস্তৃত এই প্যানোরামার মাঝে সরু-মোটা গেরুয়া সুতোর আঁকাবাঁকা লম্বাটে বুনোটগুলো আসলে নদী। ওইখানে তরাই ও ডুয়ার্সের আদিগন্ত ভূমি। ব্রেকফাস্টের ডাকে ঘোর ভাঙল। জানা গেল ডামসাঙ যাওয়ার গাড়িও তৈরি। যা আবহাওয়া দুপুরের মধ্যে ফিরে আসতে চায় চালক। রওনা দিলাম।
ডামসাঙ-ডালিং। শেষ লেপচা রাজা পানো গেবো আচোক-এর রাজধানী। ছবির মতো সুন্দর সিলারি গাঁও পেরিয়ে এলাম। শাল-পাইনের বন পেরিয়ে গাড়ি এগিয়ে চলল। থামল এসে এক বিস্তীর্ণ এলাকা জোড়া খণ্ডহরের সাম্রাজ্যে। ইতিহাস এখানে মৌন-মুখর। এক প্রাচীন ইতিহাসের ধ্বংস-গৌরবের হাহাকার পাথর ও মাটির স্তূপ ভেঙে বেরিয়ে আসছে। পাইনের মর্মর ধ্বনি তা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে উপত্যকা জুড়ে। সে বাতাসে সাম্রাজ্য পতনের দীর্ঘঃশ্বাস। এক আশ্চর্য আদিবাসী গোষ্ঠী এই লেপচারা। বড় সজ্জন মানুষ তারা। নিজেদের যাঁরা বলেন ‘মতঞ্চি রংকুপ রামকুপ,’ যার বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায়, ‘ধরিত্রী মা ও ঈশ্বরের প্রিয় সন্তান।’ দার্জিলিং-সিকিম-ইল্লাম হিমালয়ের বুকে নিজেদের প্রিয় দেশকে ওঁরা বলেন, ‘নে মায়েল রেনজিং লিয়াং।’ আক্ষরিক অর্থ, ‘সজ্জন মানুষদের পবিত্র, অন্তরালবর্তী, শাশ্বত দেশ।’ মায়েল লিয়াং-এর পতন হয়েছে ১৮২৬ সালে। ধীরে ধীরে শাসকের কন্ঠে ও কলমে দোর্জেলিং বা বজ্রভূমি হয়ে গেল দার্জিলিং। লেপচা রংনিয়েৎ (দু’টি ধারা) হয়ে গেল রঙ্গিত; রং ন্যু (সোজা নদী) হয়ে গেল তিস্তা। সিলিং লা বা পাহাড়ি পথ বা বার্চ গাছের দেশ হয়ে গেল সিঙ্গালিলা। পা-জো.ক (বাঁশ চেরাইয়ের স্থান) আজ পেশক। জ্বলা পাহাড় মানে মিরেক, ভিনদেশিদের উচ্চারণে আজ মিরিক।
_DSC0408
পাথুরে সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে উঠে এসেছিলাম দূর্গের মাথায়। চারপাশটাই নজরে পরে এখান থেকে। মেঘের আড়ালে যদিও দৃষ্টিপথ ক্ষীণ। দুর্গ ও প্রাসাদ গড়তে প্রকৃতির অন্তরালে ডামসাঙ-কেই বেছে নিয়েছিলেন রাজা গেবো আচোক।  শেষরক্ষা হয়নি। ভূটানিরা তার রাজত্ব দখল করল। রাজা নিহত হলেন। তবে শেষ পেরেকটা মেরেছিল তিব্বতিরা। ১৮২৬ সালে লেপচা-তিব্বতি ‘রক্তবন্ধনের অঙ্গীকার’ নসাৎ করে সিকিমের তৎকালীন লেপচা প্রধানমন্ত্রী ভো লোদকে হত্যা করে তুং-ইক-মেঞ্চু। শেষ হল মায়েল লিয়াং রাজত্ব।  সবশেষে সকলকেই হেলায় হারিয়ে দার্জিলিং-ডুয়ার্সের দখল নেয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। মনে মনে ইতিহাসের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে কখন যেন আকাশ ঘোর কালো হয়ে এসেছে। চালক নীরজের হাঁকেডাকে সংবিৎ ফিরল। খণ্ডহরের পাথর ও মাটির স্তূপে ক্ষমাপ্রার্থিত চুম্বন রাখলাম।
হেডলাইট জ্বালিয়েও দেখা যাচ্ছে না পথ। অঝোরে বৃষ্টি নেমেছে। সেই অন্ধকারে হাতড়াতে হাতড়াতে অবশেষে পৌছলাম কটেজে। এবার শুধু বৃষ্টি নয়। বজ্রের দেশে শুরু হল এ মাথা ও মাথা ঝলসে যাওয়া বিদ্যুতের আস্ফালন সঙ্গে প্রবল বিস্ফোরণের মত বজ্রপাত। চারদেওয়ালের মধ্যে অসীম একা। বাইরে মত্ত হাতির মত ফুঁসছে প্রকৃতি। চেয়ার টেনে নিয়ে এসে বসলাম কটেজের ভেনেসিয়ান উইন্ডোর সামনে। বৃষ্টির ছাঁট যেন ছররা গুলির মতো বিঁধছে বিশাল কাঁচের শার্সির উপর। আমি মূক, বজ্রপাতের শব্দ বধির করে দিচ্ছে। কতক্ষণ যে বসেছিলাম কে জানে। কতগুলো যে বাজ পড়ল হিসাব রাখিনি। ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ মাতাল প্রকৃতির সামনে নতজানু আমি শুধু দেখেছি আলোর ঝলকানি, শুনেছি বারুদে আগুন লাগার শব্দ, তার পর গুরু-গুরু কড়-কড়-কড়াৎ মেঘের আছড়ানি। বাজকে লোভ দেখিয়ে টেনে মাটির নীচে বন্দি করে যে বিদ্যুৎ ত্রি-শলাকার ফাঁদটি, তা না থাকলে কতবার যে ঝলসে যেতাম কে জানে। বর্ষায় ঝান্ডু বড় রোমাঞ্চকর। বড় রোমাঞ্চ এই পাহাড়ে। সব আগুন, সব জল ঝরাতে ঝরাতে অবশেষে শান্ত হল দুর্মর আকাশ। পশ্চিম আকাশে আলো এল।
শেষ বিকেলে দিনের মতো পাটে বসার পথে সুয্যি মামা। দক্ষ্ণিণে-উত্তরে, পুবে-পশ্চিমে মেঘদের রাজ্যপাট। স্তূপ স্তূপ মেঘ। পাহাড়ের মাথায় মুকুটের মতো বিরাজ করছে। আমি অধীর আগ্রহে মাখামাখি হয়ে আছি। রবিরশ্মির শেষ বর্ণপাতের অপেক্ষা। এমনই এক সময় সে এসে দাঁড়াল ভিউ পয়েন্টে। মনে হল কবির কল্পনা নয়, মেঘেরা সত্যি সত্যি এখানে গাভীর মতো চড়ে বেড়ায়। সহসা কোনও নারীর শরীর ছেড়ে ভেসে পড়া ওড়না স্বচ্ছ কুয়াশা হয়ে যায়। আর এক মরালগ্রীবা নারী রাজহংসীর মতো পদচারণা করে সেই দেশে। যেখানে বনের মাথা ছাড়িয়ে ওঠা সূর্য কাঞ্চনজঙ্ঘার শিরে আগুন ধরিয়ে দেয়। উত্তাপ পায় এলাচ বাগিচা। অন্তিম আলোয় তরুণী কন্যার মুখ দেখলাম। পরনে গোলাপি লং স্কার্ট, কালো টপ, কালো সিফনের ওড়না। প্রকৃতই টেথিস সাগর ফুঁড়ে উঠে আসা দীর্ঘাঙ্গী নবীনার নরুণ চেরা মোঙ্গল আঁখি, দীর্ঘ আর্য নাসা, কাঁচা হলুদ বরন। সে হাসল। ঝোরার জলে জ্যোস্নার স্নান দেখে যে হাসি ঝরে পূর্ণিমার। সে কথা তাকে মনে মনে জানাতে না জানাতে তপ্ত সোনার হ্রদে ডুব দিল শ্রাবণ-তপন। পুবের আকাশে আধখানা চাঁদ। বিভাবরী তার আধেক ছটাতেই না কি গলিত রূপো ছড়িয়ে দেবে দক্ষিণ উপত্যকায়। তিস্তা-চেল-নেওড়ার বর্ষা-স্রোতে ফোঁটা ফোঁটা রূপালি রশ্মি ঝরে পড়বে। হা হতোস্মি। আমাকে বুভুক্ষু রেখে ফের শ্রাবণ মেঘের বোরখার আড়ালে মুখ লুকালো আধপোড়া চাঁদ।
_DSC0058
বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী লালসায় প্রিয় দেশ, জল-জঙ্গল-পাহাড় লুঠ হয়ে গেল। আর জন্ম প্রকৃতিবিদ এক জাতিগোষ্ঠী কোণঠাসা হতে হতে দেখল, দেশের অধিকাংশ মানুষেরা এবার গোর্খাল্যান্ড নিয়ে আত্মহারা। দর্জো লিং কবেই দার্জিলিং হয়েছে। এবার গোর্খাল্যান্ড হবে। মনে পড়ল অন্নদাশংকর রায়ের কথা, যেটা হতে পারত লেপচা ল্যান্ড, সেটা নাকি নেপালিদের মুখের কথায় গোর্খাল্যান্ড। নিলুই মুখ খুলল। বলল, কেমন ঘুরলেন? একটা জাতির দীর্ঘঃশ্বাস কীভাবে পাথর-মাটির স্তূপ হয়ে রয়েছে শাল-পাইনের জঙ্গলে আশ্রয়ে দেখে এলাম তো তাই। সে কথা ব্যাখ্যা করি কী করে! বললাম, জানো নিলু, বৃটিশদের যখন দার্জিলিং দান করতে বাধ্য হল সিকিমের রাজা, সেই দানপত্র লেখা হয়েছিল হিন্দির সঙ্গে সঙ্গে লেপচা ভাষায়। অর্থাৎ, লেপচারা একধরণের স্বীকৃতি পাচ্ছে। সালটা ১৮৩৫।  আবার দেখো, বৃটিশরা এবার সেখানে জঙ্গল সাফ করে সেনাদের জন্য স্বাস্থ্যনিবাস, ঘরবাড়ি, প্রাসাদ বানাতে শুরু করল। শুরু হল চা বাগান পত্তন, চাষবাস। শুরু হল জঙ্গল সাফ করা। কে করবে? এল গোর্খারা। ১৮৩০ সেই সময়ের ডেপুটি সার্ভেয়ার জেনারেল ক্যাপ্টেন হারবার্ট বলছেন, ‘পাহাড়ের মাথা থেকে পা পর্যন্ত আরণ্যক পোশাকে ঢাকা।’ ঠিক একই কথা লিখেছেন, জেনারেল লয়েডস সেই ১৮৩৭ সালে। সামান্য কয়েক বছর পর শোনা গেল কর্নেল ওয়াডেলের হাহাকার, ‘সমস্ত অরণ্য নিকেশ করে ফেলা হয়েছে। এখানে ওখানে একটা-দুটো গাছ দাঁড়িয়ে আছে একাকী। গভীর উপত্যকায় সামান্য কয়েক সারি গাছ জানান দিচ্ছে একসময় সেখানে অসাধারণ অরণ্য ছিল। সর্বগ্রাসী খেত-খামারের হাতে তাদের বলি হয়েছে।’ নেপাল থেকে এখানে সবচেয়ে সবচেয়ে বেশি এসেছে গোর্খারা। তার পর তীব্বতিরা। আজ যে দার্জিলিং তার জন্য সবচেয়ে রক্ত-ঘাম ঝরিয়েছে তারাই। সে কথা মেনে নিয়েই বলছি, লেপচারা কিন্তু তাদের বাসভূমি এভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তা মেনে নিতে পারেনি। জঙ্গল সাফ করাদের দলে তারা নাম লেখায়নি। তারা পালিয়ে গেছে আরও গভীর জঙ্গলে।  লেখাবেই বা কেন? জল-জঙ্গল-পাহাড়-নদী-বীজ-ফুল-পাতা-পশুপাখি-কীটপতঙ্গ সবই প্রকৃতিগত ভাবে তাদের জীবনধারার অঙ্গ। এ সবই তাদের কাছে পূজনীয়। তাঁদের ভাষা – রং-রিং। আর সেই ভাষার মধ্যে ধরা রয়েছে সেই আশ্চর্য বীক্ষা। যেখানে রয়েছে অরণ্যপ্রকৃতির অফুরান ভাঁড়ার। ভাষা আর প্রকৃতি এই দুইয়ের চরিতার্থতার মধ্য দিয়েই একজন লেপচা হয়ে ওঠে ‘মতঞ্চি রঙ্কুপ’ – ধরিত্রীমায়ের সন্তান। ও’ম্যালি বলেছিলেন, বাঁধা চাকরি ওদের না পসন্দ। অরণ্যের অন্তরালে থাকতে পারলে ওরা সবচেয়ে খুশি। জন্ম প্রকৃতিবিদ। প্রতিটি পাখি,গাছ, লতাপাতা,অর্কি্‌ড প্রজাপতি্র ভিন্ন ভিন্ন নাম ওরা জানে।
একবার এক লেপচা গ্রামে থাকতে হয়েছিল, জানো নিলু। সে ছিল কর্তব্যের তাগিদে। কার্শিয়াঙের সিটং। কাছে-দূরে চারপাশে সবুজ পাহাড়ের মাঝে অনেকখানি ছড়ানো-ছিটানো গ্রাম। কী শান্ত নিরিবিলি সেই গ্রাম। যেন বিশ্বের সব প্রশান্তি দিয়ে গড়া। একটু আঁচড় কাটলেই দেখা যায় দারিদ্রের হাঁ-মুখ। একটা চা বাগান, ভুট্টা আর এলাচের খেত বাড়ির লাগোয়া জমিতে। ফুলের স্তবক সাজাতে  যে ফার্ন লাগে আছে তার চাষও। আঁটি বেঁধে শিলিগুড়ি যায়। কমলার বাগানের জন্য সিটং বড় মনোময়। তবে সে মায়াকাল শীতের জ্যোৎস্না রাত। গ্রামে তেমন কাজ নেই বলে কাজের খোঁজে পাড়ি দেওয়া আছে। নুন আনতে যাদের পান্তা ফুরোয়, তাদের ছেলেমেয়েরা চড়াই-উতরাই পার করতে করতে স্কুলে যায়। ক্লান্তি আর একরাশ অবসন্নতায় তাদের হোমটাস্ক করার সামর্থটুকুও থাকে না। দুধ থেকে ছুরপিও তৈরি করে কেউ কেউ, মৌমাছির চাষ করে। আর ইদানীং হোম-স্টের দৌলতে একটু ভাল থাকা-ভাল পড়ার মুখ দেখা যাচ্ছে।
ফিরে আসার সময় বেশ মন খারাপ হয়েছিল। আবার সেই মলিন শহরে ফেরা। ফেরার দিন সে কথা লিখেছিলাম কাব্যে। শুনবে নিলু?
সিটং
পাহাড়ের মন খারাপ, তোমাকে ছেড়ে চলে যাব
কালো মেঘের চাদরে দিয়েছে সে মুড়ি
এলাচ বনের মাথা নীচু, চলে যাব অসময়ে
ক্যামেলিয়া ফোঁটেনি, গোঁজেনি কেউ খোপায়
সাদা মেঘের ওড়না জড়িয়ে হল না দেখা
জ্যোৎস্নায় কমলার স্নান,
এই যাওয়ার ক্ষণে বড় নিঃস্ব একাকী কমলা বাগান
*
চলে যাব, পথ আটকিয়ে দাঁড়িয়েছে বৃষ্টি
গর্জন করছে রিংয়া খোলা
পথ আটকিয়ে দাঁড়িয়ছে
আম্মার হাসি, সন্ধ্যা লেপচার ভাত বেড়ে দেওয়া হাত।
দাঁড়িয়েছে আটকিয়ে পথ
থুম্বার বাঁশ পাত্র, নিংরোর শাক
শরীর গরম করা খোরসানির স্বাদ।
*
চলে যাচ্ছি…
বিদায় ভুট্টার খেত… বিদায় সিঙ্কোনার বন…
বিদায় দুধ-মধু-ছুরপির গ্রাম,
বিদায় ঝাড়ুঘাসের শাশ্বত গ্রাম- মায়েল লিয়াং
*
চলে যাচ্ছি…
হাড়ে-মজ্জায়, পাঁজরে-পাঁজরে বাজে সিটং-সিটং।
***
এখানে ভোর হয় মেঘের ভেলায় ভাসতে ভাসতে। দূরে কাঞ্চনজঙ্ঘা সোনামাখা। সাদা মেঘগুলোতেও সেই স্ফূর্তি। কথাগুলো তখন আর শুধু শব্দ নয়। মুখ থেকে বেরিয়ে সাদা বাষ্পের অবয়ব নিচ্ছে। কাল রাতে খুব বকবক করেছি তাই না? নিলুর চোখে-মুখে সোনালি রোদ্দুর। আসলে সে হাসে।  আপনি তো আমাদের কথা কিছু বললেন না! মনে মনে বলি, ‘তোমাদের নয়, তোমার কথা আমি বলবই পর্বতদুহিতা। এই যে এত কথা বলছি, এই ভয়েই যে, যে কোন মুহূর্তে বাক্যহারা হয়ে যেতে পারি। পাহাড় শীর্ষ হতে নেমে আসা বরফ আমাকে সমাহিত করতে পারে। রূপের আগুনে আমি জ্বলে যেতেও চাই না। তোমার কথা বলার জন্য অসীম নিস্তঃব্ধতা জরুরি। তোমাকে ডাকব বলে খুঁজছি প্রিয় নাম। খুঁজে খুঁজে শুকিয়ে গিয়েছে কলমের কালি। আমি তো সেই গতকালের প্রাণ, টেথিস সাগর সে যেন কত যুগের কথা।’ মুখে বলি, ‘গোর্খার দেশপ্রেমের কথা বলতে পারি, পারি বীরত্বের জয়গান গাইতে, তার সরল জীবন-যাপনের কাহিনিও অজানা নয়। তোমার ভাষা-সংস্কৃতি, তোমার জীবন প্রবাহ, তোমার স্বাধীকার, আত্মমর্যাদা, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার – বাঙালির প্রভুত্ব মানতে অস্বীকার করছে – এ নিয়ে আমি আদৌ বিচলিত নই। জয়ী হও তোমরা। আমি ছোট ছোট সুখ খুঁজছি। ছোট্ট ছোট্ট শান্তি।’
_DSC0416
জানো, মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এলিস বুন্ডিঙ বিশ্বের ২৫টি হিংসা-দ্বেষহীন ও শান্তিকামী জনগোষ্ঠীর তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ভারতের তিনটে আদিম জনগোষ্ঠী, জন্মু-কাশ্মীরের লাদাখিরা, পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের বীরহোড় আর দার্জিলিং ও সিকিমের লেপচারা। কী সৌভাগ্য জানো, এই তিন জনগোষ্ঠীকেই তাদের ভূমিতে আমি দেখেছি। আমি বলছিনে তাদের আমি চিনেছি, বুঝেছি। আমি বলছিনে, ভাষা তাত্ত্বিকেরা বলেন, সহনশীল লেপচা সমাজে, তাদের ভাষায় এমন একটিও শব্দ নেই যাকে বলা যায় রূঢ়-অসামাজিক-অভদ্র-অপমানকর।  তাদের ভাষার মধ্যে ধরা রয়েছে,’ এক আশ্চর্য বীক্ষা, অরণ্যপ্রকৃতির অফুরান ভাঁড়ার, আলো জল ও হাওয়ার চিত্রকল্প, কুয়াশায়ময় ইন্দ্রিয়ানুভূতির ধরা ছোঁয়া রূপ। এই ভাষা এক স্বচ্ছ্ব পোশাকের মতো ঘিরে থাকে ওদের মন, ওদের দেহও।’
এই যে দেখো, আমার শহরের ঘরালু-চড়ুই মানে হাউস স্প্যারো। আধুনিকতা উদযাপনের সঙ্গে সঙ্গে ওরা ঠাঁই হারা । দেওয়ালে ফোঁকর নেই, বারান্দায় ঘুলঘুলি নেই। নেই এমন কোনো ঠাঁই যে বাসা বাঁধবে। ওরা তো মানুষের বাসাতেই বাসা বাঁধে, তবু মানুষের পোষ্য হয় না। স্বাধীনচেতা। এই এতটুকু বাসা চাই ওদের জন্য। বারান্দায় কিচিরমিচির। এই শান্তিটুকু চাই। বীরত্ব, ক্ষমতা, আগ্রাসন -চাই না, প্রকৃতির আশ্চর্য বীক্ষা চাই। তোমার পাহাড়ে, এই বর্ষায় আমি তাকেই খুঁজছি নিলু।
_DSC0205
***
কথায় না কথায় বেলা গড়াল। আজ আর কালো মেঘের দাপাদাপি নেই। এই শরণগৃহে প্রতিটি কুটিরের গায়ে, টুকরো টুকরো জমিতে অজস্র লাল, নীল, বেগুনি, গোলাপি ফুলের সারি সারি টব। না ওরা নাম জোগান দিতে পারল না। গোলাপি ফুল দেখিয়ে সোনম বলল বেগোনিয়া। আমার শহরেও তার দেখা মেলে। কিন্তু, এমন উজ্জ্বল রূপ দেখিনি। ফ্ল্যাট বাড়ির খোপের এক চিলতে বাগানে সে বড় ম্রিয়মান। বেগোনিয়া নাম হতেই পারত। মনে ধরল না। লিলি, অ্যাঞ্জেলিয়া নাঃ , সোনম একের পর এক গাছ আর ফুল চেনাচ্ছে। আমি মনে মনে আওড়াচ্ছি, বেজে উঠছে না। কোথায় যেন সুর কেটে যাচ্ছে। অবশেষে সোনম আমাকে ধরে নিয়ে গেল এক চালার নীচে। সেখানে সারি সারি কালো পলিথিনের টব। সেই টব থেকে লম্বা লম্বা পাতার সারি মাথা তুলেছে। সোনম বলল, এগুলো অর্কিডের চারা, শীতে ফুল আসবে। সোনা মুখ করে জিঞ্জাসা করলাম একটা পটের দাম কত? কলকাতায় নিয়ে যাব। থাকবে আমার বাগানে। বাঁচবে না স্যার, কলকাতায় এই গাছ বাঁচবে না।
অর্কিড…অর্কিড…অর্কিডি…অর্কিডি…অর্কিডিয়া…  অবশেষে নাম রাখলাম অর্কিডিয়া। দীর্ঘাঙ্গী কন্যার নরুণ চেরা চোখ। মোঙ্গল আঁখি, দীর্ঘ আর্য নাসা, কাঁচা হলুদ বরন।
এ কথা তাকে জানাতে জানাতে তপ্ত সোনার হ্রদে ডুবে গেল শ্রাবণ তপন । দূর আকাশে গুরু গুরু মেঘের ধ্বনি। প্রথমার চাঁদের মতো এক চিলতে হাসি ছড়িয়ে ফিরে গেছে ঘরে অর্কিডিয়া। অঝোর বৃষ্টির ধারায় ভাসছে ঝান্ডি দাঁরা। এই বুঝি শেষ রাত। এই বুঝি হিমালয় ফের ডুব দেবে টেথিস সাগরে। নোয়ার নৌকা ভিড়ল ঝান্ডির শরণগৃহের পাড়ে। আমি চেয়ে রয়েছি অর্কিডিয়ার বাংলোর পানে। অশেষ অন্ধকারে বাংলোর জানালা চুঁয়ে আসা আলোটিকে মনে হয় অকূল সমুদ্রের তীরে এক লাইটহাউস যেন। অশেষ তৃষ্ণা নিয়ে আমি সেই দিকে চেয়ে আছি। ভিজছি আমি। নোয়ার নৌকাকে ফিরিয়ে দেওয়ার সাহস আমার নেই। আবারও ভেসে যেতে হবে। পরের বন্দর আমায় ডাকছে যে।

কৃতজ্ঞতা: পরিমল ভট্টাচার্য

*

ছবি: আবীর বসু, সৌমিত্র ঘোষ ও অন্তর্জা‌ল

2 thoughts on “নাম রেখেছি অর্কিডিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.