মৈত্রেয়ী সরকার

২৪ পরগণার এক মফস্বল শহরে বড় হয়ে ওঠা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনো। আপাতত বাংলা ছোট গল্পে কৃষক বিদ্রোহ ও কৃষক আন্দোলন নিয়ে গবেষণা চলছে। পেশায় দমদম মতিঝিল কলেজে বাংলা বিভাগে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোফেসর ও নানা ইন্সটিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্ট লেকচারার। লেখার চর্চা ছোটবেলা থেকে – কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প প্রকাশিত হয়েছে নানা পত্রিকায়, নিয়মিত লেখা চালু এখনও – কথা সাহিত্য, আরম্ভ, অহর্নিশ, শিলালিপি, কবিজন্ম ও আরও নানা পত্রপত্রিকায়। প্রকাশিত বইগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সত্য পীরের পাঁচালি – মধ্য যুগের ভিন্ন স্বর, বাংলা ছোটগল্প – নানাস্বরের কোলাজ, বাংলা উপন্যাস বহুবর্ণ বহু ছটায়, সময়ের পরিপ্রেক্ষিত ও বাংলা ছোটগল্প। বর্তমানে রবি ঠাকুরের শেষের কবিতা নিয়ে বইয়ের কাজ চলছে।

joy2
মেয়েটা কাঁদছিল। মেয়েটা কাঁদছিল জামরুল তলায় দাঁড়িয়ে। চোখদুটো জলে ঝাপসা। চারপাশটা বড় বেশি কাঁপছিল। ঠিক যেমন ভূমিকম্প হলে চারপাশের গাছপালা দুলতে থাকে, মাটি এপাশ থেকে ওপাশে দুলতে থাকে, ঠিক তেমন ভাবেই কাঁপছিল ওর চারপাশটা, পায়ের তলার মাটিটা।জামরুল গাছের গোড়ায় দাঁড়িয়ে মুখ লুকোতে চাইছিল কোনো অন্ধকারে। ওর ভয় করছিল। দূর থেকে ভেসে আসছিল ওর মায়ের চিৎকার, ভেসে আসছিল জ্যাঠামশাই-এর তীব্র গলা। তার মায়ের গলায় ছিল অনেকটাই ভয় আর বেশিটা সেই ভয়কে ঢাকার তীব্র আস্ফালন। আর জ্যাঠামশাই-এর গলায় ছিল পুরুষোচিত গর্জন আর তীব্র আক্রোশ মেশানো ভয়াল হুঙ্কার। ইঁদুরের গর্তে হঠাৎ সাপ ঢুকে গেলে ইঁদুর পালাতে না পারলে শেষমেশ যে মরণ চিৎকার দেয়, মায়ের গলাতেও ছিল তেমনই চিৎকার।
ছোট্ট পার্বতীকে তার মা বিকেলবেলা ঘর থেকে সাজিয়ে, টিপ পরিয়ে মাঠে খেলতে পাঠিয়ে দেয়। পার্বতীর মা তাকে বেশির ভাগ সময়ই ঘরের বাইরে রাখতে পছন্দ করে। পার্বতী অনেকটাই বোঝে আবার অনেকটাও বোঝে না। এ গ্রামে এখনো বিদ্যুৎ আসে নি, কুপির আলোয় পার্বতী যখন ঘুম ঘুম চোখে ইতিহাস বইয়ের উপর ঢুলে পড়ে তখন তার মা চুলো জ্বালিয়ে কাঠের জ্বালে রান্না করে। মাটিতে পাটের বস্তা পেতে তার উপর কুপি রেখে বই পড়তে পড়তে পার্বতী মায়ের রান্নার কৌশল দেখে। কি নিপুণ তার রন্ধনশৈলী, কি সুন্দর তার গন্ধ। আজ তার মা কই মাছ রান্না করছে। কাঁচালঙ্কা কালো জিরে দিয়ে মানকচু ও কইমাছের সুবাস ছড়িয়ে পড়ছে পার্বতীর চারপাশে। পার্বতী মানকচু খুব ভালো খায়। পাতে পড়লে ছিন যেন মাখনের মতো গলে যায় মানকচুগুলো।
পার্বতীর বাবা ধানকলে কাজ করে। গ্রামের বাইরে হাটের শেষে যে ধানকল আছে, পার্বতীর বাবা সেখানে স্টোর কিপারের কাজ করে। পার্বতীর বাবা খুব সহজ, সরল মানুষ। নিতান্তই সাদাসিধে। খানিকটা পাগলও বটে। একটা বড়ো ব্যাগ নিয়ে সে কাজে যায়। ফিরে এসে অনেক খুচরো পয়সা মাটিতে ঢালে। পয়সার আওয়াজ শোনে, এক টাকা, চার আনা, আট আনা, দশ পয়সা, পাঁচ পয়সা, কুড়ি পয়সা আলাদা করে, পয়সার উপর পয়সা দাঁড় করায় এক মাপের, এ তার এক খেলা। রোজই সে এই খেলা খেলে। আর গান লেখে। রাস্তায় পড়ে থাকা নোংরা কাগজ জোগাড় করে সে তার বড় ব্যাগটাতে ভরে। তারপর ওই নোংরা সাদা কাগজগুলোতে সে গান লেখে। একথালা করে ভাত খায় আর মাঝে মাঝে পাড়া প্রতিবেশির বাড়ি গিয়ে চেয়ে চেয়ে রুটি, মুড়ি, ভাত খায়। সবাই এই ভালো মানুষটাকে করুণা করে, দয়া দেখায়। তার যে ক্ষিদে অনন্ত সে সবাই জানে। তাই শুধু খেতে ভালোবাসা মানুষটাকে কেউ ফেরায় না। সারাদিন খাওয়ার কথা ছাড়া সে বউ-এর সঙ্গে আর কোনো কথা বলে না। পার্বতীর মাও তিনবেলা এই মানুষটিকে পেট ভরে, থালা উঁচু করে খেতে দেয়, সে নুন দিয়েই হোক আর ডাল চচ্চড়ি দিয়েই হোক। মাঝে মাঝে জল দেওয়া ভাতও সে একথালা পেট পুরে খেয়ে নেয়। পার্বতীর বাবার জন্য কামরায় একটা ছোট্ট চৌকি বরাদ্দ আছে। সে চৌকি রাস্তার কাগজে ভরা আর সে কাগজে লেখা হাবিজাবি সব গান, কথা। পার্বতী জানে তার বাবা পাগল। তার বন্ধুরা তাকে এ নিয়ে কম হাসি মশকরা করে না। কিন্তু পার্বতীর বন্ধুরা আরো একটা কথা জানে না, যেটা জানে শুধু পার্বতী। পার্বতী জানে তার বাবা নপুংশক। একদিন জেঠুর সঙ্গে যখন পার্বতীর মায়ের প্রবল ঝগড়া চলছিল তখন পার্বতী তাদের বড়ো ঘরটার পিছনের বেড়ার নিচে মাটির দাওয়ায় ভয়ে লুকিয়ে বসেছিল। সেদিন জ্যাঠামশাই বলছিল তারা বাবা নাকি নপুংশক। এই শব্দটা সে স্কুলেও শুনেছে। রাধার স্বামী আয়ান ঘোষও নপুংশক ছিলো। নপুংশক শব্দের অর্থ সে শুনেছিল স্কুলের এক দিদির কাছে। যে সন্তানের জন্ম দিতে পারে না সে নপুংশক।

পার্বতী আগে বুঝতো না মায়ের সঙ্গে জেঠুর ঝগড়া কিসের? সে শুধু গণ্ডগোলের চিৎকার শুনতো আর ভয় পেত এই বুঝি জেঠু মাকে মারে। কিন্তু এখন সে ক্লাস সেভেনে। গ্রামের স্কুল ছেড়ে বড়ো স্কুলে ভর্তি হয়েছে। অনেক সম্পর্কের এখন সে মানে বোঝে। পার্বতী কোনদিন তার বাবা ও মাকে এক বিছানায় ঘুমোতে দেখে নি। তার চারপাশের সবুজ শ্যামল গ্রাম মাঝে মাঝে ধূসর হয়ে যায়, পার্বতী খোঁজে নিজেকে, খোঁজে নিজের পরিচয়কে।
পার্বতীর রং বেশ ফর্সা, একেবারে কাঁচা হলুদের মতো। চোখদুটো টানাটানা, পটলচেরা। বেশ রোগাটে গড়ন। মাথায় একরাশ কালো চুল। পার্বতী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাঝে মাঝেই ভাবে তাকে একদম তার মায়ের মতো দেখতে নয়, ভাগ্গিস, মায়ের মতো সে দেখতে হয় নি। মায়ের গায়ের রং বেশ কালো। চোখগুলোও ক্ষুদে ক্ষুদে, পিটপিট করে। মাকে সুন্দরী তো বলা যায়ই না তবে চেহারার মধ্যে একটা সুঠাম সৌন্দর্য আছে।পরিপূর্ণ নারী বটে। চুল ছেড়ে দাঁড়ালে তাকে বেশ লাগে। ওই ইতিহাস বইয়ের পাতায় মন্দিরে গায়ে পাথরের দেওয়ালে মেয়েদের যেমন ছবি থাকে। অনেকটা তেমন। পার্বতীর বাবাকেও খুব একটা পার্বতীর পছন্দ হয় না রূপের দিক থেকে। বেঁটে-খাটো নির্বিষ সাপের মতো তার চেহারা। পার্বতী তার বাবার মধ্যে এক অসহায় মানুষকে দেখতে পায়। যে পয়সা গোনা, ধানকলে চাল পাহারা দেওয়ায় আর রাস্তায় কাগজ কুড়িয়ে গান লেখা ছাড়া আর কিছু বোঝে না। একেবারে শিশুর মতো সরল সে। পার্বতীর তার খাওয়া-দাওয়া দেখলে দেখলে বড়ই করুণা হয়। মনে হয় হাঁড়ির সমস্ত ভাত উপুড় করে খাওয়াতে পারলে পার্বতীর বড়ো শান্তি হয়। বাড়ির ঝগড়া, অশান্তি কোনো কিছুতেই তার কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। সে যেন এক ভিন্ন জগতের বাসিন্দা।
পার্বতীর স্কুলে গিয়ে এক নতুন অনুভূতি হয়। সে স্কুলে গিয়ে দেখেছে, তার সঙ্গীরা অনেকেই বাবার হাত ধরে স্কুলে আসে, স্কুলের বাইরে যে শশাওয়ালা ঝুড়িত শশা নিয়ে বসে, বাবারা তাদের সেই শশা কিনে দেয়। মেয়েরা চারফালি করে নুন মেশানো শশার এক টুকরোতে পরম লোভে কামড় বসায়। পার্বতীর ইচ্ছে করে তার বাবাও তাকে হাত ধরে একদিন স্কুলে নিয়ে আসুক। সেদিন স্কুলের বাইরে যতরকম খাবার বসবে, শশা, চিট গুড়, হাওয়াই মিঠাই সব তার বাবা তাকে কিনে দেবে, মিনুর কাছে একদিন পার্বতী একটুকরো শশা চেয়েছিল, খুব লোভ হয়েছিল তার, মিনু দেয় নি।পার্বতীর এখনো মনে পড়লে রাগ হয়। তার বাবা যেদিন এসে ওই সব খাবার একসঙ্গে কিনে দেবে, সেদিন সেও মিনুকে ওইভাবে দেখিয়ে দেখিয়ে খাবে, চাইলেও তাকে এক টুকরোও দেবে না।
পার্বতীর মা পার্বতীকে বলেছিল, সে নাকি জনম দুঃখিনী সীতার মতোই বন্দিনী। আচ্ছা সীতারও কী এত কষ্ট ছিল? সীতার কথা ভেবেও পার্বতীর চোখে জল ভরে আসে, সে কল্পনা করতে চেষ্টা করে, অশোকবনে দুঃখিনী সীতা বসে আছেন, কিন্তু সীতার সুন্দর মুখটা কল্পনা করতে গেলেই পার্বতী সে মুখে তার মায়ের মুখের আদল দেখতে পায়। পার্বতী ভাবে, কেন এমন হয়? সীতাকে রামচন্দ্র উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছিল রাবণের কারাগার থেকে, পার্বতীর চোখদুটো চকচক করে ওঠে। তার মনে হয়, তার মাকে বাঁচাতেও হয়তো রামচন্দ্র আসবে, আর রাবণের মতো জেঠুটাকে খুব জব্দ করে দিয়ে যাবে। পার্বতী অপলক দৃষ্টিতে গ্রামের লাল মাটির পথটা ধরে সুদূরের দিকে চেয়ে থাকে।
পার্বতীদের বাড়িতে একবার এক দূর সম্পর্কের মামা এসেছিল। পার্বতীর মা বলেছিল সেই মামা নাকি পার্বতীর মায়ের গ্রামের প্রতিবেশী। পার্বতী আরও শুনেছিল তার মা যখন ওই গ্রামে ছিল তখন সে মামাকে রান্না করে খাওয়াতো, মিষ্টি পান সেজে দিত। একবার মামার হাতে ধারালো অস্ত্রের কোপ লাগলে মা তাকে দেড়মাস ধরে বিছানায় বসে সেবা করেছিল। মামা নাকি নকশাল না কী একটা পার্টি করত, সে ছিল বড়ো নেতা, গ্রামের সবাই তাকে খুব ভয় পেত আবার ভক্তিও করত। সে ছিল লেখাপড়া জানা, অনেক পাশ দিয়েছে, গড়গড়িয়ে ইংরেজী বলত। মামাকে দেখতেও খুব সুন্দর। মামা অনেক লম্বা। মাথায় একরাশ ঝাঁকড়া চুল, মুখে একগাল মিষ্টি হাসি। কি সুন্দর গায়ের রং! যেন পাকা মটরের ডাল, সেদিন পার্বতীর সঙ্গে খুব গল্প করেছিল তার মামা। কিন্তু ওই একদিনই। তারপর আর কোনও দিন আসেনি। মা বলেছিল পার্বতীকে যে মামার নতুন বিয়ে হয়েছে, তাই সে বাড়ির কাজে ব্যস্ত। পার্বতী ভাবে রামচন্দ্রের কথা। এই মামা যদি রামচন্দ্র হত তাহলে কতো ভাল হত। তার মা জনম দুখিনী সীতা থেকে রাজরানি হয়ে যেত। পার্বতী শুনেছিল এই মামার সাথেই নাকি তার মায়ের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কেন হল না কে জানে? পার্বতী আকাশ-পাতাল ভাবে।
পার্বতী মায়ের কোলে যখন স্তনে মুখ লুকিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোয় তাদের দরজায় মাঝে মাঝে ধাক্কা পড়ে। পার্বতীর মা শিউরে ওঠে, পার্বতীকে জড়িয়ে ধরে রাখে, দরজা খোলে না। পার্বতী বুঝতে পারে তার জেঠু এসে গেছে, কারণ মাঝে মাঝে এমন ঘটনা ঘটতে দেখেছে পার্বতী। সে মাকে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে জড়িয়ে রাখে। সে কিছুতেই মাকে ছাড়বে না, তার ভয় হয় জেঠু মাঝরাতে তাদের ঘরে ঢুকে তার মাকে হয়ত আবারও মারবে, বিশ্রী গালিগালাজ করবে।
পার্বতীর চোখ খুঁজে বেড়ায় রামচন্দ্রকে। সে কবে আসবে সীতা উদ্ধার করতে অশোক বনে? পার্বতী ভাবে রামচন্দ্র যদি না আসে তবে একদিন বড় হয়ে সে নিজেই পুলিশ অফিসার হবে। নিজেই উদ্ধার করবে তার মাকে। রাবণরূপী জেঠুকে ঠিক জেলে পুরে দেবে। পার্বতী স্কুলে গল্প শুনেছিল, পুকুরে ডুব দিয়ে জলের তলায় গিয়ে নাকি যা চাওয়া যায় তিনবার চাইলে তাই-ই পাওয়া যায়। জলদেবী নাকি শুনতে পান! ওই যে কাঠুরিয়া আর জলদেবীর গল্প আছে না? ওই রকম।পার্বতীয় সাঁতার দিয়ে মাঝ পুকুরে গিয়ে ডুব দিয়ে পুলিশ হতে চেয়েছে তিনবার, ভেবেছে জল থেকে সে যখন উঠবে, তার গায়ে থাকবে খাঁকি পোশাক, কিন্তু তেমনটা হয়নি। অনেকদিন পার্বতী এমন করেছে।
পার্বতীদের বাড়ির একটু দূরেই পার্বতীর এর দূর সম্পর্কের মাসির বাড়ি। মেসোও খুব আসে তাদের বাড়িতে, খকখক করে কাশে। হাতে-পায়ে চুলকানি আছে। পার্বতীদের খাটে বসে পা মেলে দিয়ে বসে সে হাত পা চুলকায়। পার্বতীর খুব ঘেন্না করে। কিন্তু মেসোমশাইকে কিছু বলতে পারে না। পার্বতীকে একদম সহ্য করতে পারে না এই মেসো। পার্বতীকে দিয়ে হাত পা টেপায়, কপালে তেল মালিশ করায়, মাঝে মাঝে বুক নিচু করে শুয়ে থাকে আর পার্বতীকে পিঠে তুলে দিয়ে শিরদাঁড়া টেপায়। পার্বতীর খুব রাগ হয়। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় পিঠে উঠে পা দিয়ে খুব জোরে লাথি মারার, কিন্তু পার্বতী সেসব কিছু করে না। জেঠু যখন থাকে না, তেমন সময়গুলোতেই লোকটির বেশি আনাগোনা, মায়ের দিকে সে কেমন যেন চকচকে চোখে তাকায়, পার্বতীর মনে হয়, মেসোর চোখ যেন ঠিক বাঘের চোখের মতো জ্বলজ্বল করে।
পার্বতী খুঁজে বেড়ায় রামচন্দ্রকে। লবকুশও তো রামচন্দ্রকে খুঁজেছিল। সীতামায়ের কাছে গল্প শুনেছিল যে, তাদের পিতা নাকি বিরাট যোদ্ধা, ভূ-ভারতে তার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তারপর একদিন রামচন্দ্রকে যুদ্ধে হারিয়ে লব-কুশ তাদের মায়ের প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল। পার্বতীয় চায় আবার আসুক রামচন্দ্র। বিদ্যাবুদ্ধির লড়াই করুক তার সাথে। পার্বতীও লব-কুশের মতো বুঝিয়ে দিক তার প্রতিভা! রামচন্দ্র তারপর হার স্বীকার করে নিক! উদ্ধার করুক তার মাকে।
পার্বতী মাঝরাতে এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে। সে একটা ভিড়ে ঠাসা মেলায় হারিয়ে গিয়েছে। সে মেলায় কোন নারী নেই সবাই পুরুষ। সব পুরুষই যেন কলের পুতুল। তারা সবাই যে যার মতো হেঁটে যাচ্ছে, কারো সঙ্গে কেউ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলছে না। আর পার্বতী তাদের মধ্যে একা ঘুরে বেড়াচ্ছে। নাগরদোলা আর মৌমাছির বনবন শব্দ মিলে একটা অদ্ভুত শব্দ এসে একসাথে তার কানে বাজছে। অসহ্য একটা শব্দ। সব মানুষগুলোর মুখেই সাদা মুখোশ। সবারই একই মুখোশের নীল চোখ, একই মুখোশের লাল রং করা ঠোঁট, একই রকম রং করা নীল চুল। পার্বতী সে মুখোশ খুলে খুলে প্রত্যেকের মুখ দেখছে। কোনো মুখ তার বাবার, কোন মুখ তার জেঠুর, কোনটা তার মেসোর, কোনোটা তার গ্রামের মামার। অক্লান্তভাবে সারা মেলা জুড়ে সে শুধু মুখোশ খোলার খেলা খেলে যাচ্ছে। মেলার ভিড় বাড়ছে, পার্বতী আরও আরও মুখোশ খুলছে। মুখোশ খুলেই চলেছে পার্বতী।
চিত্রণ – জয়ীতা করণ

2 thoughts on “পার্বতী কথা

  1. এক চিলতে চাঁদোয়ায় মুখোশ যত
    প্রশ্নগুলো জাপটে ধরে আঙ্গুলের ফাঁকে
    মুখোশ মুখোশ মানুষ তুই কোথায়
    যন্ত্রণার প্রহর বসে দিন গোনে
    একফালি চাঁদ, মুখোশ, নীল পদ্দ
    এই মাত্র চিহ্নহীন হবে ✍

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.