সৌমালী চৌধুরী
সৌমালী পেশায় ফ্রিল্যান্সার ইন অডিও ভিসুয়াল মিডিয়া, গতবছর ঢাকায় ডিপ্লোমা ইন ফটোগ্রাফি করতে যান।
এখানে দুটি মুখোমুখি আত্মার আলাপ লেখা হয় ছবিতে। যারা একসাথে খায়-দায়, ওঠে, বসে, ঘুমায়। যে কথা বাস্তবে শব্দে প্রকাশ করা যায় না, সেই অপর এর কথা, কিছু ইশারায়, কিছু ভঙ্গি, কিছু ঠাট, কিছু অনুভূতি।
যার কোনো অভাব অভিযোগ নেই,যে কোনো প্রত্যাশা রাখে না, যার কোনোদিন বাড়ি ফেরার তাড়া নেই, শপিং মল, নাচের স্কুল, মাল্টিপ্লেক্স, পপকর্ন-এর বায়না সে করে না, কাঁদলেও চোখ ভেজে না, ইচ্ছে হলে গান গায়, সমুদ্রের সাথে যার সংসার তাদের চাইলেও এড়াতে পারি না। আমরা অচল। আমরা রোজদিন মেলামেশা করি। নিজের অজান্তে তার সাথে নির্বাক সংলাপ চলে। তিনি রেসপন্স করছেন। কখনো গড়িয়ে, কখনো চলকে উঠে, কখনো টুং টাং, কিংবা কিছু ঠান্ডা বাতাস। যেদিন জলতরঙ্গ বাজে রোদ্দুরে।
ডায়ালগ আমার নিজের সঙ্গে ক্যামেরার কথাবার্তা। এটি এক দিশাহারা, প্রান্তিক জনের ডায়রি। দুই বছর আগে প্রথম ছবিটি তুলি, কিছু না ভেবেই । এপার বাংলা, ওপার বাংলা মিলিয়ে বিগত সময়ে অধিকাংশ আমার একা থাকা, রান্না, খাওয়া, ঘুমানো সবটাই। কখনো রাস্তায়, কারোর বাড়ির ছাদে, বারান্দায়, ইনস্টিটিউট এর লাইব্রেরী রুমে। ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে বেশ কয়েকদিন গৃহবন্দি কাটাতে হয়।
জানলা দিয়ে একটা অতিকায় নারকেল গাছ এর প্রবল হাতছানি এড়িয়ে যেখানে দিনযাপন বৃথা । যেখানে কিছুই ঘটছে না, মাথার উপর পাখা ঘুরছে বনবন করে, কোথাও শাঁখের আওয়াজ, বাচ্চা কাঁদছে, ইতিউতি আরশোলা, টিকটিকি সব নিঃশব্দে বেড়ে উঠছে।
কিছুক্ষন অন্তর টিকটিক হচ্ছে, সন্ধ্যা এলে চন্দ্র সূর্যের টান জোয়ার ভাটায় উথাল পাথাল করছে, মোবাইলের চার্জ ফুরিয়ে আসছে, আমার ক্ষিদে পাচ্ছে, কারুর লেবার পেইন উঠছে।
আমি বসে আছি একটা সবুজ রঙের চুনকাম করা দেওয়ালের মুখোমুখি। মোমেন্ট ক্যাপচারের মজা আসে। ডি।এস।এল।আর এ যা অসম্ভব। প্রতিদিন ই কিছু না কিছু তুলি , এডিট করি, মুছে দিই, আবার তুলি এইভাবে একটা প্রসেস এর মধ্যে পড়ে যাই।
কলকাতায় এসে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এখানে অনেক বেশি রাস্তায় ঘোরাঘুরি হয়, কলেজস্ট্রিট, চিৎপুর, গঙ্গার ঘাট, এসব চত্ত্বরে জমজমাট, ভিড়, গুঁতাগুঁতির মধ্যে চাইলেও হারিয়ে যাওয়া যায় না। পাঁচ মিনিট অন্তর কে যেন কলার ধরে টান দেয়। পরে থাকা কলার খোসায় পা হড়কাতে হড়কাতে বেঁচে যায়। এত্ত চেনা জানা মাপজোক এর মধ্যে সব চিনি চিনি লাগে।
এত সব গতরাতের প্রজেকশন। দৃশ্য কেবল বেলগাছিয়া তরফ ধায়। বিকেলের ট্রেনটা নিয়মিত আসা যাওয়া করে। সেখানে গা- ঘেষে নির্জন গলিটার রাস্তায়। যে দেশে একটা ভাঙা মিটারবক্স ছাড়া কেউ কথা বলতে পারে না। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ক্যারাম বোর্ড পাতা থাকে।
একদল উট ডানা মেলে উড়ে গেলে, লিলুয়া কার্শেডে পরপর তিনবার তালি দিয়ে ওঠেন বিলায়েত খাঁ। সেখানে শুনশান রাস্তায় ট্র্যাফিক সিগন্যাল থেকে যখন আলো চলকে পড়ে, সেই মায়া জমে জমে একদিন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি আসে এপার বাংলায়। আমরা তখন সুতো ছাড়ি আর সুতো ছাড়ি, যেহেতু লাটাই এর খোঁজ কেউ রাখে না।
2 thoughts on “ডায়ালগ”