এলিশিবা কই!
ইশকাপনের রাতে আরেকটা কবিতাও আত্মহত্যা করেনি
রাজপথ জুড়ে সব পথবাতি নেভানো ছিল
ছিঁচকে চোরের দল সাইরেন শুনে ভয় না-পেয়ে ইঁট ছুঁড়ল টহলরত পুলিশ গাড়িতে
কলকাতার খেলনাহীন শিশুরা কেউই সেদিন খেলনার বায়না ধরেনি
হার্দিক আয়োজনে কমতি বড়, তাই খেলনার শো-রুমে – বার্বিপুতুলের গায়ে
আগুন দেয়া হলো চুল্লু ঢেলে!
শহর জুড়ে পার্ক করা প্রত্যেক অডি আর শেভ্র আর টাটা আরো যত
প্রত্যেকের গায়ে শিরিষ কাগজ ঘষে শহরের টয়লেটহীন জনতা
স্টিয়ারিং জুড়ে প্রাতঃক্রিয়া সারার যোগাড় করেছে;
আর একটাও কারখানা চলবেনা ,
অনির্দিষ্ট হরতালের প্রহরে বাস্তুহীন শ্রমিক পেটো মারল প্রপাগান্ডার পতাকায় ;
দাগী আসামী – রাস্ট্রঘোষিত জঙ্গি – যাবজ্জীবন কারাবাসপ্রাপ্ত লেখক
স্তম্ভ অবমাননার দায়ে ধৃত নাগরিক – জাংশনের ওয়াগন চোর – বাদুং পাহাড়ের গণজাগরণ-মঞ্চ-সদস্য প্রমুখ
জেলছুট;
গুপ্তহত্যা বাহিনী পথে নামল উদগান্ডু সং-‘বিধান’ পোড়াবে বলে!
তেলমাখা কাগজের এডিটর -সংবাদদাতা – টেলিভিশন চ্যানেল মালিক
আর বিজ্ঞাপনের অফিস-কর্তাদের চোখে ঠুলি বেঁধে পাঠানো হল সংশোধনাগারে
সবকটা হোর্ডিং আর দেয়ালে শিশুরা ছবি আঁকতে বসল ;
ন্যাংটো চাষা সেদিন ফসল ফেলেনি আড়তে অভিমান করে
বীজের দোকান – সারের গুদাম – ভান-করা কৃষি অফিস –
গবেষণা গাঁড়ে মর্টার ছুঁড়ে ক্যাম্পফায়ারের আয়োজন হয়েছে প্রবল!
স্টেশনমুখী ট্রেনে – লোকাল বাস সেদিন ভীড়হীন
অটোর কোনো লাইন হয়নি ইশকাপনের সন্ধেয়
টাইপরা আইটি শ্রমিক – শপিংমলের কোষাধ্যক্ষ্য
আইলাইনার আর সযত্নে লিপস্টিক মাখা
প্রসাধনের দোকানের মেয়েরা সেদিন মেকআপহীন
দক্ষিণে আর বামে আর শহরতলির রাত্তিরে কেউ ঘরমুখো হয়নি
মহল্লার ঋতুমতী মেয়েরা সেদিন স্যানিটারি প্যাড – ব্রায়ের দোকানে
কালো রঙা ঠোঙ্গা ছিঁড়ে ফেলে হাতে বয়ে ভীড় ভেঙ্গেছিল।
এ-পৃথিবী মুক্ত বিহঙ্গের রক্তে উতরোল তাই
ট্রামে বসে জয়েন্ট রোল করেছে অফিসফেরত কেরাণী;
আর সমস্ত ট্রাফিক ব্যস্ততা – প্রসাধন সভ্যতা জোকার বলে
এসপ্ল্যানেড – টেকনোপোলিস – নিউটাউনের
সবুজবাতি সিগন্যাল ইঁদুরদৌড়ে
ঘাড় কাত করা দ্রুত ফোর-ফিফ্থ গিয়ারে ছুট-প্রস্তুত গাড়ির সারিতে
মুখ ভাঙিয়ে ধোঁয়া ছেড়েছে মাঝরাতে ফুটপাথ বদলের ইঙ্গিতে;
সেদিন কেউ অবস্থান করেনি ; মশালমিছিল বা মৌনব্রতে কেউ পথ হাঁটেনি;
অনশন করে পরিহাস করেনি কেউ শতাব্দীর ভুখাপেটোদের
কেউ ট্রামে আগুন দেয়নি -রাস্তা আটকে বর্ষাহীন দিনে কেউ কুশপুতুল পোড়ানোর নাটক করেনি;
ডেপুটিশন – বনভোজন ময়দান সমাবেশ কিচ্ছু নয়
নাহ বোমা মেরে আর একটাও নেতা – মন্ত্রী – পুলিশ মারা হয়নি!
রেডরোড ধরে আলো করে দেয়া পথবাতির চারপাশে
শতাব্দী ধরে ওড়া গঙ্গাফড়িং থমকে হঠাৎ
সমস্ত রাজপথ থেকে জনতার ঢিল এসে
মিথ্যে অন্ধকার ভাঙ্গা ফিলিপসের টিউব ফাটায়;
কলকাতার বুড়ো ভ্লাদিমির
ক্ষুধার্ত মাশা
টেকো কেরানী সান্যাল
লেবুজল বিক্রেতা ইলিয়া
কগনিজেন্টের ফুকো
রিলায়েন্সের চাভেজ
বাগবাজারের প্লেখানভ
বান্দয়ানের চাষা মিন দাদু
হাড় কাটা গলির কোলোন্তাই
প্যান্তালুন্সের সিগার খেঁকো চে-মামা
পানুর পোস্টারের ক্লারা জেটকিন
ষাটের খুন হওয়া কবি পাভেলের বংশধর প্রমুখ
হাতুড়ি আর শাবল নিয়ে ইট ভাঙ্গতে চলেছে
দলে দলে
পুলিশের স্মারকস্তম্ভ
রাষ্ট্র আশ্রিত দালাল রাজমিস্ত্রিদের ঠেক
নেতার সিংহাসন তাদের বাগান আর রাষ্ট্রের হৃৎপিণ্ড ফুটো করবে বলে!
1 thought on “ইশকাপনের রাত”