সংহিতা বন্দ্যোপাধ্যায়

কবি, গীতিকার, সুরকার-গায়িকা এবং “কবিতা ” পত্রিকা-র সম্পাদক

একে একে জড়ো হয়ে হয়ে
কিছু কাছাকাছি বসে আছি
আঁধার তাড়াতে
কাঠকুটোর বদলে কয়েকজোড়া হাত

হেমন্তের সন্ধেবেলা,বলো,
এর বেশী কিছু চেয়েছিলাম কি?

শিশিরের শব্দের মতো, এ আগুনকে
লিপিবদ্ধ করে যাওয়া ছাড়া?

খুলে যাচ্ছে দিন
স্পর্শ করি অন্য কোনো হাত!
এফোঁড় ওফোঁড় চটি নিয়ে
শূন্য পকেট ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে, সামনে
শুধু রাস্তা আর রাস্তা, আজ
যা হবার তা হোক, বুকের মধ্যে তাকে চাই।

রাস্তাকে রক্তে তুলেছি, আর
তার খানা-খন্দে জমা জলে
মুখ দেখছি নিজের, দেখি
মেঘের রঙগুলি আলো করছে
অশ্রুপাতটুকু।

বিষণ্ণতা, কিছু কি বলার ছিল তাকে?
দীর্ঘ ছায়া সরিয়ে সরিয়ে
কিছু কি বলার ছিল? বলো –

রাস্তা স্তব্ধবাক হল।

সন্ধে হয়ে এলে
এক অন্ধকার চোখ গুছিয়ে বসেছে।
বেঁচে থাকবার এই সেই খেলা
ভেতরে ভেতরে তবু কিছু একটা ঘটেই চলে।
শিউরে উঠছি আমি, এই
রক্তের ভেতর, কুয়াশার ভেতরেও
যে বাতাসকে বন্ধু ভেবেছি
সে আজ নির্মম ঘাতক, আর আমার
প্রিয় রাস্তাগুলো, সব ভেঙে যাচ্ছে ব্যথায়,
বিক্রি হয়ে যাচ্ছে মানুষের হাতে মানুষের নিষ্পাপ জীবন –
এরকমই হয়,আলো মরে আসে, রক্তে বিষাদ।

এর মাঝে একমাত্র ধর্ম বলে মেনেছি প্রেমকে
আর অন্ধকারে ধর্মভীরু লুকিয়ে বেড়াচ্ছি এগলি ওগলি
তোমার মুখের আলো আসবেই বলে

উপুড় করো তোমার চোখ
নিবিড় লন্ঠন!

ফিরতে পারোনি, তাই ভালোবাসা, তুমি
কাঁটাতারের গায়ে থেঁতলে আছো আর
তুমুল বৃষ্টিতে ধুয়ে যাচ্ছ।
যাও – ধুয়ে ধুয়ে, গলে গলে
ওই মৃত্যুশয্যার কাছে, যাও, তোমাকে
দু-একটা আশ্চর্য মূহূর্ত দিয়েছিল,
যে মানুষ, তার কপালের কাছে মুখ নিচু করো।

হলোই বা বারোশ মাইল ব্যবধান,

যে পথে যাবার, সেই পথে
কবে আবার জলকাদার তোয়াক্কা করেছ তুমি!

আলো থেকে সরে আসি পাশে
ঝোপঝাড়, কুহক জঙ্গলে
দাগ খুঁজি, চোখের জলের দাগগুলো,
বিদ্রোহের দাগগুলো
ও বাতাস, তুমি এখনই আটকাও তাকে, না হলে
আজ ঝাঁপ দেবে এই অবাধ্য কবিতা
অতল জলের থেকে চাঁদ নয়, শুধু
চাঁদের ছায়াকে ধরে লুটোপুটি খাবে।

যার আসাবার কথা, তার
বয়স তো কয়েক হাজার হল আজ

মানুষের ঘরে ঘরে জজ্ঞাল বেড়েছে
সে কি ভুলে গেছে তার কাজ?

.

সাপ্লিমেন্টারি

তুমি ঠিক করে দিলে
আদর্শ ব্রেকফাস্ট কোনটি

তুমি ঠিক করে দিলে
ছুটির বিকেলে কার কার গান শোনা আবশ্যিক।

তুমি ঠিক করে দিলে
কখন কেমন রুপটান আমাকে মানাবে,
কী ভাষায় এস এম এস করলে নিশ্চিত প্রেম।

তুমি ঠিক করে দিলে
অন্য‌ের ব্য‌াপারে নাক গলানো কুরুচিপূর্ণ
অতএব ফ্ল্য‌াটের দরজা বন্ধ রাখুন সর্বদা।

তুমি ঠিক করে দিলে
শহরকে আগে সাবালক হতে হবে,
পরে মানবিক।

তুমি ঠিক করে দিলে
মাতৃভাষা বলে কিছু নেই,
যা আছে, লেনদেনের ভাষা।

গভীর রাত, দরজা বন্ধ
মরর্টিনের সুগন্ধ ঘুমোচ্ছি আমি ও আমরা,

দেওয়ালের এককোণে তুমি ঝুলে আছো
রুপোলি জরির মতন মিহিজাল ভরে উঠছে ঘরে ঘরে।

(চিত্রণ – দেবী দাস)

1 thought on “বন্ধুর জন্য কয়েক টুকরো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.