উত্তরবঙ্গের বন-বসতি-মানুষ নিয়ে কাজ। তথ্যচিত্রকার। সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের কবি।

জন্মদিন

যামিনী যাপন হলো,নিশিরাত, চাঁদ-খাওয়া ফিকে অন্ধকারে
ফিরে এলো তারা, জ্যোতিষ্কপিন্ড,আলো ছিটকে পড়লো চীৎকারে
এর পর কোন শীত নেই।কুয়াশা ধ্বংস করে ভেসে এলো উপগ্রহস্বর
শুভ জন্মদিন আসে, হাতল বাদামী, বেড়ে যায় উদ্বিগ্ন বছর
নাকের চুলের মতো, সন্না দিয়ে টেনে তুলতে হয়
ভুলে যেতে হয়, উল্কা আছড়ে পড়া তিন লক্ষ হাজার বিস্ময়
ব্যক্তিগত সময়-সারণীও, আজ বিকেলে কাল সকালের কাজ মনে করা
পেট-বুক জ্বালানো উদ্বেগ, বিনিদ্র রাত ঘিরে ঘুমের উদ্‌ভ্রান্ত প্রহরা
পিঠ থেকে সরে যাচ্ছে লেপ, শীত নেই, পায়ের তলা ঠান্ডা হয়ে আসছে না
মাঠ নেই, কমলালেবুর খোসা হাওয়ায় ভাসিয়ে আর যাত্রা দেখতে যাওয়া না
আর কিছু দেখবে না অত্যাচারিত এই চোখ, শিমুল ফুলের রং, নিরুপায়
বেঁচে থাকা শুধু, অন্ধ, অন্ধ খনিপথে ছুটে আসছে গহন ভৌম জল, আয়
দমবন্ধ হয়ে যাবে তবু মৃত্যু হবে না, আর,শীত নেই, ঘুমের মতন শীত
কেউ আর হাত ধরবে না, ঊষাকালে গাইবে না রবীন্দ্র সঙ্গীত

২০১৪
.
.
নগরপন্থা

বেহুদা বহু বর্ষ পরে, এসো ফিরঙ্গিরঙ্গীন
আলো খিঁচে পয়দা হচ্ছে লীলা, জানলা দিয়ে ঢুকে পড়ছে দেশ
নক্ষত্রদ্রষ্ট সেই ক্রীড়া, অমোঘ দৈবী নির্দেশ
তোমার জন্য নীল হয়ে উঠছে প্রত্যেকের স্ক্রীন
চামড়া খুলে ফেলছে মাটি, বাতাস গন্ধ নিচ্ছে সাদা
বিবরণ ফুটে উঠছে জলে, যিনি রাই তিনি শ্যাম, তুমি কৃষ্ণ আমি রাধা রাধা রা-ধা
আদিগন্ত ছটফট করছে পাল খাবে বলে, এ লগ্নে পৃথিবী মাদী গাই
আর আমরা চারা বাছুর,দন্ডে দন্ডে দুগ্ধ কামড়াই
মাড়ি থেকে আলগা হচ্ছে লালা, অসবর্ণ বোকা থুতু
শোনা হচ্ছে টিভি বিস্ফোরণ—আতু—আতুতু
ল্যাজ নাড়তে নাড়তে দৌড়ে আসছে জিমি সময়
পথপার্শ্বে পাকা, গোলাপী ধ্যাবড়া প্লাস্টিক,হলদেটে কফ, দুরারোগ্য নোলা ও বিস্ময়
উন্মত্ত চিনিনগর, দৌড়োচ্ছে সিগ্‌ন্যাল
খুললেই গড়িয়ে পড়ছে মাল, উল্লেখ্য দোকানের মাল
নর্দমা সাফ হচ্ছে পূণ্যনাম ধরে, নগর লম্বা লাফে দূর
জিনা হ্যায় তো এইসা— চীজ দিয়ে জলপাই দস্তুর

২০১৪
.

কার্নিভ্যাল

যাবতীয় ছায়াগাছ কেটে ফেলা হলে, গড়ায় তেলের মত রোদ
যে বীজ তপ্ত হয় না তার জিন, পালটে যায় সক্কালবেলায়
লৌহ-বেঁকানো তাপ খেলা করে লক্কাবিড়াল
এবার ঢালাই টানা হবে; কালচক্রের মত ঘোরে মিক্সার
মন্ডলে,ক্রেন ওঠে প্রকৃতি নিয়মে, নীল ফুঁড়ে
এভাবে তৈরী হয়, এভাবে তৈরী হয়, এভাবে তৈরী হয়
যা ছিলো না তা, যা আছে বদলে যায় হাল্লানগরী
উদ্দাম!
মাঠ নেই, মাঠের স্বপ্ন নেই, গরু নেই, গোবর
কুড়োনো মেয়েরা নেই
যা ছিলো তা নেই, মূলত থাকে না কোনদিন
কংক্রীট চেটে চেটে বড় হয় নেড়ি কুত্তারা,অক্লেশে গাড়ি
চাপা পড়ে
লালনীল লালনীল হলুদ সোনালি লাল
পাশাপাশি বেড়ে ওঠা, নিও-আটবিক
হাল্লানগরে

শিলিগুড়ি/১৪-১৫ মে,২০১৪,রাত ১২টা ২৫
.

ইতিহাস

চোখ ঘোলাটে হয়ে এলো, বুড়ো ভাঁটিতে বৃষ্টি হয়
ভাসিয়ে নেবার বেলা আটকে আছে থকথকে কাদায়
সর্বশেষ মোহানা বুজে গেছে ভূমি-ব্যবহারে সেই কবে
উপগ্রহ জানে। আঙুল বাড়ালে দিগ্‌নির্দেশ হয় না
মাঠ মরে যাওয়া স্মৃতির হলদে ঘাস, বজরী-চাপা শামুক
রোদ থেকে রেহাই পায় না শিশুরা,মানুষ, গাভী ও উদ্ভিদ
পেচ্ছাপ লাল হয়ে ঘন হতে থাকে, শ্রম ও শ্রমিক
উড়ে যায় কয়লা-পোড়া ধোঁয়ার মতো, দিগন্তে
জেগে ওঠে ধুরন্ধর মৃত্যুঞ্জয় স্কাইলাইন, নরম বেগুনী গোধূলি
তৈরী হয় নিত্য ফোটোশপে, কালো-সাদা, রঙীন, ফুলটুসি
যে কোন দৃশ্যই ছবি হতে পারে, দেয়ালে টাঙালে
মরা ঘোড়ার কঙ্কাল, মরা কারখানা, মরা গাছ, মরা মহল্লা
বিপ্লব যা চিরকাল জ্যান্ত থাকার কথা,কিন্তু থাকে না।

২০১৪

2 thoughts on “সৌমিত্র ঘোষের কবিতা

  1. বড় ভালো । একটা কবিতা-দুর্লভ স্পষ্টতায় লিখুন, আমার পড়তে খুব ভালো লাগবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.