তৃষ্ণিকা ভৌমিক

লিঙ্গবৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। অল্পবিস্তর লেখালিখি করি। এই অকালেও যারা স্বপ্ন দেখে এক বৈষম্যহীন পৃথিবীর, আমি তাদেরই একজন।

During Monsoon Assembly session , domestic workers from Maharashtra

২০১৬ সালের শুরুর দিকে একটা সমীক্ষার রিপোর্ট দেখে চমকে উঠেছিলাম। রিপোর্ট অনুযায়ী পরিচারিকার কাজের থেকে অনেকেই বেশ্যাবৃত্তিকে পেশা হিসাবে বেছে নিতে পছন্দ করেছেন, এবং এর পিছনে বেশ্যাবৃত্তির মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপার্জনই একমাত্র কারণ ছিল না। পরিচারিকার কাজের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা শোষণ, অসম্মান, শারীরিক-মৌখিক নির্যাতন ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় কারণ হিসাবে উঠে এসেছিল। তবুও নির্মম বাস্তব থেকে দূরে থাকার বা মুখ ফিরিয়ে থাকার দরুন সেদিন বইয়ের পাতার অক্ষরগুলি হয়তো ততটাও বোধগম্য হয়নি।আবার আমার নিজের আশেপাশের দুনিয়াটার আপাত ভালোমানুষি বা এই পরিচারিকা শ্রেণির মানুষদের সাথে তথাকথিত মানবিক মিথস্ক্রিয়া আমার বোঝাপড়ার সম্পূর্ণ হবার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়েছিল খানিক। মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে দু’চারটে বাড়তি কাজ করিয়ে নেবার ছবিটা চোখের সামনে থাকলেও শুধুমাত্র নিজের মধ্যবিত্ত অবস্থানের জন্য তা চোখ এড়িয়েছে এমনটা নয়। আসলে চোখের সামনে এই শ্রেণি বৈষম্যের বেড়াজাল পেরিয়ে অন্য একটা ছবিও হাজির থেকেছে। যেখানে স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণে লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ করতে বাধ্য হওয়া মেয়েটিকে তার নিয়োগকত্রী ক্রমাগত উৎসাহ দেয় জীবনযুদ্ধের, ছেলেমেয়েকে ঠিক করে লেখাপড়া শিখিয়ে নিজের থেকে ভালো জীবন দেবার, অকর্মণ্য স্বামী কষ্টার্জিত টাকা নিয়ে নয়ছয় করলে বাতলে দেয় টাকা জমিয়ে রাখার উপায়। জাতপাতের সমস্যা কিম্বা নেহাতই ‘ছোটলোক’দের ছোঁয়া এড়াবার জন্য হলেও জলখাবার খেতে দিতে অস্বীকার করবার বদলে সরিয়ে রাখা আলাদা থালা-বাসন, চায়ের কাপ মজুত থাকে এখনো অনেক বাড়িতেই। বৈষম্য থাকলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাটুকু থাকে। আবার কখনো কখনো শ্রেণি-বাস্তবতা ভুলে এই সমাজে মেয়ে হবার দরুন দিনের শেষে সংসার-আপনজনেদের থেকে পাওয়া অপমান, বঞ্চনা এক পঙক্তিতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে কাজের বাড়ির বৌদি আর ‘ঝি’কে। না বলে ছুটি নিয়ে নেওয়া কাজের মেয়ের প্রতি বিচ্ছিরিভাবেই একরাশ বিরক্তি প্রকাশ করতে করতেই আপন মনে নিয়োগকত্রীকে উদ্বিগ্ন স্বরে বলতে শুনেছি, “ ছুটি না নিয়েই বা কী করবে, অতগুলো বাচ্চার খরচ চালাতে এতগুলো বাড়ি কাজ করলে শরীর আর কত দেবে!…” পরের দিন মুখ ঝামটার সাথে কোথাও একটা অন্য সুরও ছিল গলায়। কিম্বা রোজ খ্যাঁক খ্যাঁক করা বৌদির ব্যবহারে বিরক্ত হলেও, সেই বৌদি দু’দিন অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে নিজে থেকেই যেচে চারটে কাজ করে দিয়েছেন কাজের মেয়েটি/বউটি। বেলার দিকে আমাদের রান্নাঘরে বা খাবার ঘরে ঢুকলেই কানে আসে পাশের বাড়ির কাকিমা এবং তার বাড়ির পরিচারিকাদের কথোপকথন। ক্ষমতার সমীকরণ বুঝতে অসুবিধা হয় না, তবে সেসব পেরিয়ে তাদের সুখদুঃখের গল্প বিনিময় যেন অনেক বেশি কানে বাজে।
তবে এসব সম্পর্কের খোলনলচেও দ্রুত বদলে যাচ্ছে সময়ের দ্রুত পরিবর্তনে। ক্ষয়িষ্ণু এই সময়ে দাঁড়িয়ে রেডিমেড আয়া সেন্টারের যুগে সম্পর্কগুলোর মধ্যে থেকে মানবিকতা মুছে যাচ্ছে ক্রমাগত। ইঁদুরে দৌড়ে সামিল জীবনে যেখানে এখন নিজের পরমাত্মীর জন্য ব্যয় করবার মত সময় থাকে না, সেখানে কাজের লোক! বাঁচুক মরুক কী যায় আসে ভাব! টাকা দিলে এরকম অনেক পাবো ভাব, তাই সম্পর্কগুলো বদলে যাচ্ছে শুধুমাত্র কাজ আর টাকা বুঝে নেওয়ায়। পরিচারিকাদের উপর শোষণগুলো কমার বদলে দ্বিগুণ হচ্ছে।  এই সাদা কালো দুনিয়ার কালো দিকটা বুঝতে বা ভাবতে শুরু করি একটু দেরি করেই, গত বছরেরই মাঝামাঝি সময় থেকে।

শুরুটা হয়েছিল বন্দনাকে ফিরিয়ে আনার ঘটনা দিয়ে। ১৪ বছর বয়সী বন্দনা মহাকুর, বাড়ি মেদিনীপুরের দাঁতনে। অত্যন্ত গরীব পরিবারের মেয়ে, দুবেলার খাওয়া-পরার বিনিময়ে কাজ করতে ঢুকেছিল দমদম স্টেশনের কাছে এক শিক্ষক দম্পতির বাড়িতে। তারপরের ঘটনাপ্রবাহ ভয়াবহ। মাসের পর মাস নানা অজুহাতে একদিনের জন্যও বন্দনার ছুটি নামঞ্জুর করা হয়। মাস চারেকের মাথায় মাত্র একবেলার জন্য বন্দনা যেতে পেরেছিল দিদির বাড়ি, উল্টো‌ডাঙ্গার বাসন্তী কলোনিতে। তারও আড়াই মাস বাদে হঠাৎ বন্দনার কাজের বাড়ি থেকে ওর দিদির কাছে ফোন যায় যে বন্দনা তাদের দেড় লাখ টাকার গয়না চুরি করে কোনো এক (কাল্পনিক) ব্যক্তিকে পাচার করে দিয়েছে। হয় দেড় লাখ টাকা ফেরত দিতে হবে বন্দনার পরিবারকে, নয়ত সারাজীবন বন্দনা ওই পরিবারে বিনিপয়সায় ফাইফরমাশ খাটবে। চুরি করার জন্য বন্দনার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ দায়ের করা হয় না থানায়, বা পুলিশের সাহায্যে খোয়া যাওয়া গয়না উদ্ধারের কোন প্রচেষ্টাও করা হয় না। বন্দনা চুরি করার ঘটনা অস্বীকার করে, বন্দনার দিদি- জামাইবাবু বিভিন্ন সময়ে বন্দনার সাথে দেখা করতে গেলে তাদের অপমান করা হয়, একটা গোটা রাত আটকে রাখা হয় বন্দনার দিদি এবং তার শিশু পুত্রকে। তদন্তের জন্য পুলিশের বদলে ওঝা আসে বাড়িতে। তার নির্দেশে লঙ্কাপোড়া জল খাইয়ে, বুকের উপর পা দিয়ে চাপ দিয়ে বন্দনাকে চুরির ঘটনা স্বীকার করবার জন্য চাপ দেওয়া হয়। এর মধ্যে বন্দনার দিদিকে ওর সামনেই মারধোর করা হয়, বন্দনার উপরও ক্রমাগত শারীরিক, মানসিক নির্যাতন জারি থাকে। সব কিছু থেকে বাঁচতে বন্দনা বলে, সেই চুরি করেছে। নিত্যদিনের খাবারটুকু জোটাতে যে পরিবারের হিমশিম খেতে হয়, ছোট মেয়েদের বাড়ির থেকে অনেকদূরে কাজে পাঠিয়ে দিতে হয়, বলার অপেক্ষা রাখে না  দেড় লাখ টাকা তাদের পক্ষে জোগাড় করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সাহায্যের আশায় প্রশাসনিক দপ্তর থেকে, এসব বিষয়ে কাজ করে এমন বিভিন্ন সংস্থা, এনজিওর দরজা থেকে খালি হাতে ফিরতে হয় পড়াশুনো না জানা নিম্নবিত্ত পরিবারের সরল মানুষগুলোকে। পরবর্তী কালে মুনমুন বিশ্বাস, তপতী চ্যাটার্জী, শ্রীরূপা মান্না সহ গণ আন্দোলনের সক্রিয় কর্মীদের হস্তক্ষেপে উপরমহল থেকে বন্দনাকে তার কাজের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে আনার নির্দেশ বার করা গেলেও স্থানীয় থানা গড়িমসি করতে থাকে। থানার সাথে যে ওই দম্পতির ‘সেটিং’ আগে থেকেই হয়ে গেছে, তা বুঝতে রকেট সাইন্স জানবার প্রয়োজন থাকে না।
যাইহোক এরপর বাসন্তী কলোনির বাসিন্দা এবং গণ আন্দোলনের কর্মীদের একটা বড় দল থানায় গিয়ে বন্দনাকে ছাড়িয়ে আনার দাবি জানালে, অনিচ্ছাসত্ত্বেও পুলিশ একপ্রকার বাধ্য হয়ে বন্দনাকে নিয়ে আসে। ১৪ বছরের যে বন্দনাকে পুলিশ স্টেশনে দেখি, তার চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। বন্দনার বিরুদ্ধে সাহা দম্পতি এফআইআর দায়ের করে, প্রমাণ হিসাবে দেয় বন্দনার জামাইবাবুর হাতে লেখা একটি চিঠি যেখানে তিনি বন্দনা চুরি করেছে সে কথা স্বীকার করে নিচ্ছেন। মজার বিষয় হল, বন্দনার বিরুদ্ধে অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়েছিল যে জেনারেল ডাইরির মাধ্যমে, সেই চিঠি এবং বন্দনার জামাইবাবু লিখেছে বলে দাবি করা চিঠির হাতের লেখা হুবহু এক। তবুও বন্দনার বিরুদ্ধে এখনো আদালতে মামলা চলছে। লড়াই জারি আছে বন্দনার তৎকালীন মালিকদের বিরুদ্ধেও।
বন্দনা মহাকুর, দমদম স্টেশনে, ঘরে ফেরার পথে

বন্দনার ঘটনা নিয়ে আগেও সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে বেশ কিছু লেখালিখি হয়েছে, আমিও লিখেছিলাম তবুও এখানে আবার লিখলাম, কারণ আমরা বড্ড তাড়াতাড়ি ভুলে যাই। এই ঘটনা শুনে আমরা যারা শিউরে উঠেছিলাম, আমাদের মধ্যবিত্ত শ্রেণি-অবস্থান নিয়ে অস্বস্তিতে পড়ে ছিলাম, এইসব ছোটোখাটো ঘটনা ভুলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে আমাদের বেশি সময় লাগেনি। গত একবছরে প্রতিনিয়ত এরকম আরও অসংখ্য ঘটনার মুখোমুখি হয়েছি ‘চিত্রাঙ্গদা – একটি লিঙ্গ বৈষম্য বিরোধী উদ্যোগে’র তরফ থেকে পরিচারিকদের নিয়ে তথ্যচিত্রের কাজ করতে গিয়ে (তথ্যচিত্রটি তৈরির কাজ এখনো চলছে), কলকাতা শহর এবং শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় পরিচারিকার কাজের সাথে যুক্ত নারীদের সাথে কথা বলতে গিয়ে।  তাদের মুখেই বারংবার শুনেছি তাদের জীবনের ভয়ঙ্কর বাস্তবতা।
ভোর ৫টা থেকে সাড়ে ৬টা অব্দি শিয়ালদাহগামী যে ট্রেনগুলো দক্ষিণ কলকাতায় পৌঁছয়, সেই ট্রেনগুলোর নাম যাই হোক, তারা ‘ঝি লোকাল’ বলে বেশি বিখ্যাত। কারণ ওই ট্রেন থেকেই প্রতিদিন কয়েক হাজার বিভিন্ন বয়সের পরিচারিকা যাদবপুরসহ বেশ কিছু স্টেশনে নেমে পৌঁছে যান নিজেদের গন্তব্যে। এঁদের অনেককেই রাত থাকতে উঠে পড়তে হয়, ট্রেন ধরবার জন্য আধঘণ্টার হাঁটা পথ পেরিয়ে পৌঁছতে হয় স্টেশনে। তারপর দিনের প্রথম ট্রেন ধরে গন্তব্যে। ট্রেন থেকে নেমেও অনেকটা হাঁটা পথ।একইরকমভাবে দিন শুরু হয় কৃষ্ণনগর, হাসনাবাদ, বনগাঁওসহ বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকা থেকে মফঃস্বল, শহরতলিতে পরিচারিকার কাজ করতে আসা অসংখ্য নারীদের। এরপরও অধিকাংশ বাড়িতে এখনো কাজের লোক বলে বাথরুম ব্যবহার করতে দেয় না, খেতে দেয় না জলটুকু পর্যন্ত। ঠিকা কাজের জন্য কোনো লিখিত চুক্তির ব্যবস্থা নেই বলে বেশিরভাগ দিনই কাজে ঢোকার আগে হওয়া মৌখিক চুক্তি লঙ্ঘন করেই চাপিয়ে দেওয়া হয় বাড়তি কাজ, থাকে না মাসে কোনো  সুনির্দিষ্ট ছুটির ব্যবস্থাও (কিছু কিছু ক্ষেত্রে সপ্তাহে ৩/৪ দিন ছুটির ব্যবস্থা হচ্ছে যদিও)। পরিবারের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে দিনে পাঁচ-ছ’টা বাড়িতে কাজ নেওয়া, প্রত্যেক বাড়িতে দেড় থেকে দু-ঘণ্টা করে টানা কাজ, মাঝখানে নূন্যতম বিশ্রামের অবকাশ মেলে না। একটানা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রান্না করা বা নীচু হয়ে বাসন মাজার ফল পড়ে শরীরের উপর – হাত-পা-কোমরে ব্যথা, সারাক্ষণ জল ঘাঁটার কারণে হাতেপায়ে হাজা, সর্দি-কাশি-জ্বর লেগেই আছে। তার সঙ্গে সময়ে খাবার খেতে না পারার কারণে হওয়া আরও পাঁচটা সমস্যা পরিচারিকার কাজের সাথে যুক্ত মেয়েদের জীবনের নিত্য সঙ্গী। অনেকেরই পরিচারিকা হিসাবে জীবন শুরু করেন এই পেশার সাথে যুক্ত মায়ের হাত ধরে, খুবই ছোটবেলায়। অনেকের বিবাহ-পরবর্তী জীবনে অগুনতি সন্তান মানুষ করবার জন্য, কারোর কারোর এই পেশায় আসতে বাধ্য হবার কারণ কারখানা বন্ধ হয়ে স্বামীর কাজ চলে যাওয়া, কিম্বা নির্মাণ-শ্রমিক স্বামীর কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যাওয়া। ফলত, এই পেশায় যুক্ত অধিকাংশেরই একমাত্র আয়ের উপর টিকে থাকে সংসারের সবক’টা প্রাণ। তবু নেই ‘শ্রমিক’ হিসাবে কোন স্বীকৃতি বা ন্যূনতম সুরক্ষা ব্যবস্থা।বছরের পর বছর ধরে এই কাজগুলি বাড়ির মেয়েরা ‘ভালবেসে’ করে এসেছে, নিজেদের জীবনের ‘পরম দায়িত্ব’ মনে করে এসেছেন কোনো রকম স্বীকৃতি ছাড়াই, কারণ ঘরের কাজের বাজারে কোন বিনিময় মূল্য নেই। এই কাজগুলিই যখন উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত শ্রেণির বাড়িতে অর্থনৈতিক কাঠামোয় সমাজের সবচেয়ে নীচুতলার বাসিন্দারা করতে আসেন, স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের জন্য থাকে আরও খারাপ ব্যবস্থা। একদিকে যেমন কম টাকায় বেশি কাজ করতে বাধ্য করা হয়, অন্যদিকে শ্রমিক হিসাবে মর্যাদা দূরে থাক মানুষ হিসাবে ন্যূনতম সম্মানটুকুও জোটে না। প্রতিদিনই অধিকাংশ কাজের বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় এই পেশার সাথে যুক্ত মেয়েদের, কারুর কারুর উপর চলে শারীরিক নির্যাতনও।
এই লেখা লিখতে লিখতেই খবর পেলাম টিটাগড় থেকে বেলঘরিয়ায় কাজ করতে আসা রহিমা নামের এক পরিচারিকাকে এক মালিকপক্ষ তার নিজেরই মাস মাইনে চুরির অপবাদ দিয়ে প্রথমে মানসিকভাবে হেনস্থা করে এবং তারপর প্রায় অর্ধনগ্ন করে রহিমা টাকা কোথায় লুকিয়ে রেখেছে তার খোঁজ করে। অথচ এই রহিমাই এতদিন পর্যন্ত বিশ্বাস করতেন তাঁর কাজের বাড়ির মালিকরা অসম্ভব ভালো, বাকিদের সমস্যার সাথে নিজেকে মেলাতে পারতেন না। তাই রহিমার এলাকায় পরিচারিকাদের সংগঠিত করবার উদ্যোগে তাঁরই পরিচিত অনেকে উৎসাহ দেখালেও রহিমা দেখাননি। বাসন্তী কলোনির বাসিন্দা মিনু মাঝির মুখ থেকেই শুনেছিলাম কীভাবে সল্টলেকের এক অভিজাত আবাসনের বাসিন্দা – পেশায় পুলিশ (মিনু মাঝির নিয়োগকর্তা) – মিনুকে চুরির অপবাদ দিয়ে নিজের প্রভাব খাটিয়ে দু’রাত লক আপে কাটাতে বাধ্য করেছিল। বন্দনা, রোহিদা কিম্বা মিনু মাঝির ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, আমাদের আশেপাশে প্রতিদিন পরিচারিকার কাজের সাথে যুক্ত মেয়েদের সাথে এইধরনের ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে। জীবিকা নির্বাহ করবার তাগিদে এই মানুষগুলো দিনের পর দিন বাধ্য হচ্ছে এই অন্যায় অত্যাচার মেনে নিতে।
কথোপকথনে এই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানতে পারলেও সামাজিক সঙ্কোচের ভয়ে চাপা পড়ে থাকে যৌন নিগ্রহের ইতিহাসগুলি। প্রশ্ন করে দেখেছি, মৌখিক কোনো উত্তর মেলেনি দু-একজনের কাছ থেকে ছাড়া, কিন্তু চোখমুখ জানান দিয়েছে বাস্তবটা। এসব কখনো খবরের কাগজের পাতায় ছাপা হয় না, ফুটে ওঠে না টিভির পর্দায়। ভুল বললাম, এসব নিয়ে প্রাইম টাইমে খবরও হয়, আবার সে সব অনুষ্ঠানের টিআরপিও হাই হয়। তবে একটু অন্যরকমভাবে, পরিচারিকাদের পরিপ্রেক্ষিত থেকে নয়, মালিক শ্রেণির পরিপ্রেক্ষিত থেকে। ঠিক যেমনটা ঘটেছে নয়ডার মহাগুণ সোসাইটিতে পরিচারিকার কাজে নিযুক্ত জোহরার ঘটনার ক্ষেত্রে। ১১ই জুলাই ২০১৭, মহাগুণ মডার্নে’র শেঠীদের ফ্ল্যাটে আর কাজ না করবার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের বকেয়া দুমাসের মাইনে নিতে অভিজাত আবাসনে সকাল ৮টা নাগাদ প্রবেশ করেন জোহরা। এরপর অন্যদিনের মত দুপুরে খাবার খেতে কিম্বা সন্ধ্যে হয়ে যাবার পরও বাড়ি না ফেরায় উদ্বিগ্ন স্বামী মহাগুণ সোসাইটিতে গিয়ে খোঁজ করলে সেখানে জোহরার সন্ধান পান না। অথচ ওখানকার রেজিস্ট্রার অনুযায়ী জোহরার প্রবেশের সময় নথিভুক্ত করা থাকলেও জোহরা ওখান থেকে কখন বেরিয়েছেন বা আদৌ বেরিয়েছেন কিনা, সে সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায় না। জোহরার নিয়োগকর্তা হরশু শেঠীর জবাবে সন্তুষ্ট হতে না পেরে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হয়, এবং তারা এসে আলাদাভাবে শেঠীদের সাথে কথা বলে জানায় জোহরা কোথায় তা তারা জানে না এবং মিসিং ডায়েরিও করতে বলে। মিসিং ডায়েরি করতে গেলে অন্য কারুর সাথে পালিয়ে গেছে বলে জোহরার স্বামীকে অপদস্ত করা হয়। পরদিন সকালে জোহরার খোঁজে আবার তার পরিবার মহাগুণ মডার্নে গেলে পরিচারিকার কাজ করতে যাওয়া অনেকেই জোহরার নিখোঁজ হয়ে যাবার কথা শুনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জড়ো হতে থাকে। সকাল ৬টা নাগাদ হঠাৎ তারা দেখে আবাসনের নিরাপত্তা কর্মীরা টেনে হিঁচড়ে আবাসনের ভেতর থেকে আতঙ্কিত জোহরাকে বের করে আনছে। পরিস্থিতি সাময়িকভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠলেও আবাসনের বাসিন্দারা বা তাদের কোনো জিনিসপত্র কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। এরপর জোহরা তার সাথে আগের দিন সকাল থেকে ঘটে যাওয়া অত্যাচার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে গেলে পুলিশ দায়সারাভাবে তা নেয়, ঘটনার সম্পূর্ণ বিবরণ ছাড়াই। এরপর মহাগুণ সোসাইটি এবং শেঠী পরিবারের পক্ষ থেকে ধাপে ধাপে বিভিন্ন সময় ওইদিন মহাগুণ সংলগ্ন বস্তির বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে তিনটি এফআইআর নথিভুক্ত হয়, বিশদ বিবরণ সমেত খুনের প্রচেষ্টা থেকে দাঙ্গা পর্যন্ত সমস্ত কিছুর জন্য। প্রসঙ্গত উল্লখ্যে জোহরাসহ মহাগুণে কর্মরত অধিকাংশ পরিচারিকা ওই বস্তিরই বাসিন্দা এবং মূলত বাঙালি। জোহরার অভিযোগকে আমল না দিলেও মহাগুণ সোসাইটির তরফ থেকে করা অভিযোগগুলিকে প্রাধান্য দিয়ে  ১২ তারিখ রাতেই জোহরার ১৫ বছরের নাবালকপুত্রসহ পুলিশ ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করে তুলে নিয়ে যায়। ঘটনা অবশ্যই এখানে শেষ হয়ে যায় না। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে জোহরার প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে উঠে আসে মহাগুণ সোসাইটির বাসিন্দাদের অসহায়তার  কথা, ‘মিনি পাকিস্তানে’র বাসিন্দাদের দ্বারা আক্রান্ত হবার কথা। হ্যা, ঠিক পড়েছেন ‘মিনি পাকিস্তান’। কারণ জোহরা মুসলিম। মুসলিম মানেই পাকিস্তান, বর্তমান ভারতে এর চেয়ে সোজা হিসেব আপনি আর কোথাও পাবেন না। তবে মহাগুণ সংলগ্ন বস্তিতে বসবাসকারীরা মূলত পশ্চিমবঙ্গের পুরনো বাসিন্দা, বাঙালি। এবং তাদের উপর বাঙালি পরিচয় থেকে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশী ছাপ পড়তে বেশি সময় লাগে না ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এবং সরকারের দৌলতে। অভিজাত আবাসনের অভিজাত বাসিন্দাদের স্বার্থরক্ষায় নেমে পড়ে শাসকদলের বাহিনী থেকে ইউনিয়ন মন্ত্রী মহেশ শর্মা অব্দি। মহাগুণের ‘ভীত-সন্ত্রস্ত, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকা’ বাসিন্দাদের নিশ্চিত করা হয় বস্তিবাসী খেটে খাওয়া মান
ুষগুলো উচিত শাস্তি পাবে। তারা যাতে কয়েক বছর জেলের ভিতর থাকে সেই ব্যবস্থা করা হবে।
মহাগুণ সোসাইটি থেকে জোহরা বিবিকে বার করে আনার সময়

এই ঘটনার পরম্পরা কখনই শেষ হবে না। এভাবেই মাঝে মাঝে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা খবরের কাগজ কিম্বা টিভি চ্যানেলের দৌলতে সামনে আসবে, আর বাকি অসংখ্য ঘটনা পরিচারিকাদের জীবনের নির্মম বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে অন্ধকারে হারিয়ে যাবে। কিন্তু কেন? কেন এই পেশায় যুক্ত মানুষগুলোর সাথে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকা ছোটবড় কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয় না? এর পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ পরিচারিকাদের জন্য সেভাবে কোন সংগঠনের অনুপস্থিতি। বেশ কিছু সমাজকর্মীদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে যা বারবার উঠে এসেছে, তা হল, শ্রমিক সংগঠন গড়ে তুলতে উদ্যোগী যে মধ্যবিত্ত শ্রেণি, পরিচারিকাদের সংগঠিত করবার ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব শ্রেণি অবস্থানের সাথে সংঘাতে নামতে হবে। সংগঠিত পরিচারিকারা যদি নিজেদের স্বার্থ বুঝে নিতে শেখে তাহলে শ্রমিক স্বার্থের রক্ষাকর্তাদের স্বার্থেই যে ঘা লাগবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রথমত ঐতিহাসিকভাবেই গৃহশ্রমের সাথে যুক্ত মানুষদের ‘শ্রমিকে’র মর্যাদা না দেওয়া এবং সেই কারণেই সংগঠিত করবার প্রচেষ্টা অনুপস্থিত থেকেছে বরাবর। কিছু কিছু বামপন্থী সংগঠন সংগঠিত করবার উদ্যোগ নিলেও তা খানিক মহিলা সংগঠন গোছের হয়ে থেকে গেছে, শ্রমিক স্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠতে সক্ষম হয়নি। সরকারিভাবেও সর্বভারতীয় স্তরে ন্যূনতম মজুরি আইনের অনুপস্থিতি, কর্মক্ষেত্রে যৌনহেনস্থা আইনের আওতায় প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর অভাব, এবং বিদ্যমান দুর্নীতিগ্রস্থ প্রশাসনিক ব্যবস্থা পরিচারিকার কাজের সাথে যুক্ত নারীদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে।
তবে বিগত কয়েক বছরে কিছুটা হলেও অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, ছত্রিশগড়, ঝাড়খণ্ড, কর্নাটক, কেরালা, মহারাষ্ট্র, উড়িষ্যা, রাজস্থান এবং তামিলনাড়ুর রাজ্য সরকার পরিচারিকাদের জন্য বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ছত্রিশগড় এবং মহারাষ্ট্র বাদে বাকি সাতটি রাজ্যে চালু হয়েছে, যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির দেখাশোনার জন্য পরিচারিকাকে মাসে ন্যূনতম ৫২২৬ টাকা এবং রান্নার জন্য ৫৫৩৮ টাকা দিতে বাধ্য থাকবে নিয়োগকর্তা। এছাড়াও কাজের সময় এক ঘণ্টার বেশি হলে দিতে হবে জল খাবার। কেরালা, মহারাষ্ট্র এবং তামিলনাড়ুতে তৈরি হয়েছে পরিচারিকা ওয়েলফেয়ার বোর্ড ফোর ডোমেস্টিক ওয়ার্কার্স, এই বোর্ডের আওতাভুক্ত হলে পরিচারিকারা তাদের জন্য নির্দিষ্ট সরকারি সুযোগ সুবিধা পাবে। এখনো অধিকাংশ পরিচারিকাই এসমস্ত সুযোগ সুবিধার আওতার বাইরে অবস্থান করছে। পশ্চিমবঙ্গের কথাই ধরা যাক। সুদীর্ঘ বামপন্থী আন্দোলনের ইতিহাস থাকলেও সামাজিক স্তরে গৃহশ্রমিকদের নিয়ে কোনো আন্দোলনের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। অনুপস্থিত সরকারি সুযোগ সুবিধা, আইনকানুনও। অ্যাকশান এইড নামে একটি এনজিওর উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জেলা জুড়ে গড়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ গৃহপরিচারিকা ইউনিয়ন। ট্রেড ইউনিয়ন হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবার জন্য চেষ্টা চলছে। এই এনজিওর উদ্যোগে আয়োজিত পরিচারিকা-নিয়োগকর্তা/ কত্রীদের এক সভায় গিয়ে দুপক্ষের কথাতেই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এল। আজকের নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির কর্মরতা কর্ত্রী‌র যেমন বাস্তবিকই অসুবিধা হয় পরিচারিকা না জানিয়ে ছুটি নিলে, তেমনি আবার পরিচারিকাদের অভিজ্ঞতা বলে, ছুটি নিলে ওভারটাইম কাজ করিয়ে নেওয়া হয়, কিম্বা পরেরদিন এসে আগেরদিনের জমে থাকা বাসনের পাহাড় মাজতে বসতে হয়। ফলে ছুটি আর ছুটি থাকে না। তাছাড়াও অসুখবিসুখ কিম্বা নানান সমস্যা আগে থেকে জানিয়ে আসে না। ফলত, পরিচারিকাদের মতে ছুটি নেবার বিষয়টি সর্বদা আগে থেকে জেনে কাজের বাড়িতে জানিয়ে দেবার ব্যাপারটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অলীক চাহিদা। পরিচারিকাদের সংগঠিত করবার চেষ্টা চলছে পশ্চিমবঙ্গ গৃহপরিচারিকা কল্যাণ সমিতি হিসাবে কলকাতা, হাওয়া, বীরভূম, উত্তর চব্বিশ পরগণাসহ বিভিন্ন জায়গায়। বেগ পেতে হচ্ছে প্রাথমিক বিশ্বাস অর্জন করতে গিয়ে। সারাজীবন ধরে ঠকতে ঠকতে আর কাউকেই তাঁরা বিশ্বাস করতে চান না। একজোট হলে ছবিটা যে অন্যরকম হতে পারে, সেই স্বপ্ন দেখার চোখগুলোতেই অবিশ্বাসের রেশ। আসব বলেও মিটিংএ আসেন না অনেকেই – “যদি অন্য কোথাও নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেয়…’’ সেই ভয়ে। আবার একটু ভরসা পেলে নিজেই নিজের অধিকার বুঝে নেবার লড়াইয়ের চিত্রটা পরিষ্কার দেখতে পান অনেকে, লড়তে উৎসাহী হন, জুটে যেতে চান আরও পাঁচজনের সাথে। কেউ কেউ উদ্যোগ নিয়ে বোঝাতে শুরু করে সহযাত্রী, পরিচিত পরিচারিকাদের।  বেশ কিছু বামপন্থী সংগঠন এখন নতুন করে পরিচারিকাদের নিয়ে সংগঠন গড়ে তুলবার কথা ভাবছে।
পরিচারিকাদের শ্রমিক হিসাবে ন্যায্য অধিকারের লড়াই সংগঠিত করতে প্রয়াস চলছে সারা বিশ্বজুড়েই। যেমন – ২০১৫ সালে মেক্সিকোর পরিচারিকাদের ১৫ বছর ধরে জারি রাখা লাগাতার লড়াইয়ের ফসল হিসাবে প্রথম পরিচারিকাদের ইউনিয়ন স্থাপিত হয়েছে। লেবাননের অভিবাসী পরিচারিকাদের ভয়ঙ্কর অবস্থা এবং সপ্তাহে একটি মৃত্যু হারের (মূলত কাজের বাড়ির বন্দি জীবন থেকে পালাতে গিয়ে মৃত্যু) মত পরিসংখ্যানের উল্টোদিকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ২০১৬ সালের ১’লা মে কয়েকশো পরিচারিকা সোচ্চারে নিজেদের দাবি জানিয়ে পথে নামেন। লেবাননের মত মধ্য প্রাচ্যের এক দেশেও সংগঠিত হতে শুরু করেছেন তারা। এতদিনকার একপেশে চিত্রটা বদলাতে শুরু করেছে। যাদের জীবনে স্বপ্ন দেখার নিষেধ আছে বরাবরের, তাঁরাই পালটে ফেলার স্বপ্ন দেখছেন। সর্বস্তরেই মেয়েদের সংগঠিত করবার ক্ষেত্রে কিছু প্রাথমিক কাঠিন্য থেকে যায়। তা পেরিয়ে পরিচারিকাদের সংগঠিত করবার এই বিভিন্ন উদ্যোগ পরিচারিকদের জন্য ‘শ্রমিক’ হিসাবে মর্যাদা, স্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ, নির্দিষ্ট কাজের সময়, ন্যূনতম মজুরি, সম্মান, প্রয়োজনীয় ছুটি, সুরক্ষা কিম্বা সরকারি সুযোগ সুবিধা ছিনিয়ে কতটা সামাজিক আন্দোলন হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে তা সময়ই বলবে।  তবে সামান্য হলেও এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি, এই অকালেও আশার আলো দেখাচ্ছে।