এবার বইমেলায় প্রচুর ধ্যাষ্টা‌মো করেও লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়নে টেবিল পাওয়া গেলনা। অগত্যা যে ঢাকাটা দিয়ে টেবিল ঢাকব ভেবেছিলাম সেটা মেলার দেওয়াল ঘেঁষে রাস্তার উপর পেতে, তাতে বইপত্র ঢেলে, এক ফালি বাঁশের উপর বসে, মশা মারতে মারতে বিকিকিনি করার নামে এন্তার বিড়ি প্যাঁদানো গেলো (হুডিনির তাঁবুর কল্যাণে, আহা ওরা বেঁচে থাক)। পরেরদিন কর্তারা ডেকে পাঠিয়ে এহেন বর্বরোচিত আচরণের জন্য নরম গরম ভর্ত‌্‌সনা করে সাঙ্ঘাতিক মরচে ধরা পেরেক বার করা একটুকরো টেবিল এবং দেড়খানা চেয়ারে – ওপার বাংলা থেকে আসা দাদু-ঠাকুরদারা যেমন বলতেন – ‘পোন্দোটা ঠ্য়াকানো’র মত ব্যবস্থা করে দিলেন।  জমাটি তাঁবু ফেলে বুর্জোয়া বাবুসমাজে উঠে আসার ইচ্ছে ছিলনা। কিন্তু বয়েসের সাথে সাথে মশার কামড় খাওয়ার থ্রেশহোল্ড‌ বদলে গেছে। তাছাড়া অত্যল্প সারফেস এরিয়ায় প-অক্ষরের দেহভাগটি রেখে হপ্তাখানেক নাগাড়ে বসতে গেলে নানা অর্থে যে পরিমাণ দমের প্রয়োজন, তাও আজকাল সামর্থ্যের বাইরে বলে বোধ হয়…
এই যে উপরে নিজেদের কথা এত প্যাখনা করে লেখা হল… একে আদর করে বলতে গেলে বলতে হয় ছোট্ট এক পরিচ্ছেদ আত্মজীবনী। আমাদেরও। আমাদের পত্রিকারও – যে পত্রিকা ক্রমশই আমাদের স্বপরিচয়ের অঙ্গ হয়ে উঠছে। তা আত্মজীবনীর কথায় বলতে হয়, ওই দেড়খানা চেয়ারে ভাগাভাগি করে বসতে বসতে, পেরেকে খোঁচা খেয়ে ছোটখাটো রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটাতে ঘটাতে যে কয়েকটি ছোট পত্রিকার সংখ্যাবিশেষ খাবলে খাবলে পড়া হয়ে গেলো, ‘বিনির্মাণ’ আর ‘রাবণ’ তার মধ্যে দুটি।
‘বিনির্মাণ’ মূলত সাহিত্য পত্রিকা। ওঁদের নিজেদের ভাষায় – “ভাষার মেজাজে ভিন্নতর মর্জির প্রয়াস”। সাহিত্য নিয়ে অন্য ধরণের চিন্তাভাবনা করেন ওঁরা। পড়তে গিয়ে চোখ আটকে গিয়েছিল একটি লেখায় – ‘নোনা জমিন’, লেখক অমিতা পট্টনায়ক – স্মৃতিকথা, কিন্তু অসমাপ্ত। বাকিটা কোথায় পড়তে পাওয়া যায় জানতে মনটা ছোঁক ছোঁক করছিল। ‘বিনির্মাণে’র সম্পাদক/সংকলক পার্থসারথি উপাধ্যায়ের কাছেই শুনলাম এই আত্মজীবনীমূলক লেখাটির এখন অব্দি তিনটি খণ্ড লেখা হয়েছে, চতুর্থটি লেখা চলছে। পার্থদার সংকলনে পেশায় গৃহবধূ অমিতা পট্টনায়কের এই লেখা যেমন আবারও একবার এই আলোচনার অবকাশ করে দেয় যে সত্যিকারের ভালো লেখার মূল উৎস কোথায়, তেমনি আবার এও প্রমাণ করে দেয় যে আজও, এই ঝাঁ চকচকে কর্পোরেট লিট-মার্কেটিং-এর যুগেও ছোট পত্রিকার জোর কোথায় এবং কতখানি।
শুনলাম অমিতা পট্টনায়কের আরও লেখা বেরিয়েছে নাকি ‘রাবণ’ পত্রিকায়। টেবিল পাওয়ার আগে ‘রাবণে’র টেবিলে বই রেখেছিলাম। সেই সুবাদে সম্পাদক সোমাইয়া আখতারের সাথে আগেই আলাপ হয়েছিল। ‘রাবণ’ বিশেষভাবেই একটি ‘আত্মকথার ষাণ্মাসিক’। যাঁরা আত্মজীবনী ফর্মটি নিয়ে কাজ করেন বা পড়তে ভালবাসেন (যেমন আমরা), তাঁরা ওঁদের চিন্তাভাবনা ও প্রকাশনার সাথে পরিচিত হলে সমৃদ্ধ হবেন। ওঁদের ২০১২-র অগাস্ট সংখ্যায় অমিতা পট্টনায়কের আরেকটি সুন্দর লেখা পেলাম – ‘চিনাইর দিনগুলি’।
এ মাসের লিটল ম্যাগাজিন বলতে তাই এই দুটি পত্রিকার অংশবিশেষই রইল – পার্থদার খুঁজে পাওয়া ‘নোনা জমিন’-এর মূল্যবান খণ্ডটি, আর সোমাইয়াদির ‘আরশিমহল’ – মণীন্দ্র গুপ্ত, অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, তপন মিত্র আর দেবাশিস বৈদ্যের মুগ্ধ করে দেওয়া স্মৃতিকথামূলক চারটি লেখা। ওঁদের পত্রিকা আমাদের লিটল ম্যাগ আর্কাইভে রাখতে দিলেন বলে পার্থদা আর সোমাইয়াদির কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।
‘বিনির্মাণে’র ২০১৪ ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত ‘নোনা জমিন’ পাওয়া যাবে এই লিংকে। এই লেখার বাকি অংশগুলি পড়তে হলে, এবং ওঁদের অন্যান্য সংখ্যা পড়তে চাইলে ওঁদের সাথে যোগাযোগ গড়ে তুলুন এই ইমেলের মাধ্যমে pakur123@yahoo.co.in।
bin
‘রাবণে’র ২০১২ অগাস্ট সংখ্যায় প্রকাশিত ‘আরশিমহল’ পরিচ্ছেদের লেখাগুলি নামিয়ে নেওয়া যাবে এই লিংক থেকে। ওঁদের বই ও পত্রিকা পড়ার জন্য এবং ওঁদের সাথে যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য এই ইমেলটি ব্যবহার করুন – ravanprakashana@gmail.com ।
ravan
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

2 thoughts on “Little Magazine(s) Of The Month: রাবণ, বিনির্মাণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *