রূপা আইচ

জীবনের পথে চলতে চলতে, নিজের নারী-অভিজ্ঞতার আগল খোলা… আগল ভাঙ্গার চেষ্টা করা অন্য মেয়ের মনের ‘নারী-কথা’ শুনতে শুনতে… অনেক পথ হাঁটতে রাজি… নারীর আত্মপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে…

“…আমার আত্মপরিক্রমা আমায় নিজেকে চিনতে শেখায়, আমার মতো সব মেয়েদের মনের ঠিকানা খুঁজতে শেখায় … কারণ আমার আত্মলিপি সব বৈষ্য‌মের মাঝে পুরুষতন্ত্রের শোষণ-শাসনের আলো-আবছা এক অবয়বকে আরও স্পষ্ট, আরও উন্মুক্ত করে তোলার অভিপ্রায়ে ঘুরে-ফিরে বেড়ায়… এর আগে আমার আত্মকথায় কল্পনা আর পারাজের কথা বলেছিলাম। ওদের কথা দিয়েই শেষ করি আমার এবারের আত্মলিপি।”  – রূপা
শোষণের অন্য‌ এক চালচিত্র
আমরা মেয়েদের সমস্য‌া নিয়ে কাজ করি। সেই রোববারটা সারাদিন আমাদের একটা জরুরী মিটিং ছিল। বর্ধমান থেকে কল্পনার আসার কথা। শনিবার সন্ধ্য‌ে নাগাদ দিগনগর থেকে সৈকত ফোন করল। কল্পনা যে একটি রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত, ছেলেটিও সেই দলের সক্রিয় কর্মী। ফোন ধরতেই সে উচ্ছসিত গলায় বলতে লাগল, ‘শুনেছ? তোমাদের সংগঠক তো ‘মার মার কাণ্ড’ করে ফেলেছে !’ আমি বুঝলাম ও কল্পনার কথাই বলছে। একটু হেসে শোনার আকুলতায় বলে উঠলাম, ‘তাই! তা কী ‘মার মার কাণ্ড’ করল, একটু শুনি!’ সৈকত বলার অপেক্ষাতেই ছিল। ও যে কথাগুলো বলল, তা সত্য‌ি একটা সাহসিয়ানার গল্প। একটু বিশদে বলি।
গ্রামে গঞ্জে ১০০ দিনের কাজ তো পাওয়া যায় খুবই কম, তার উপর কাজ করলেও দীর্ঘদিন তার টাকা ‘বকেয়া’ পড়ে থাকে। প্রাপ্য‌ টাকা ঠিক মতো পাওয়ার দাবিতে সেদিন কল্পনারা তাদের রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বিডিও অফিসে বিক্ষোভ জানাতে গিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে গ্রামের শ্রমিক মেয়েদের সংগঠিত করে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ছিল কল্পনার ওপর। সেজন্য‌ বেশ কিছুদিন ধরে ও পাড়ায় পাড়ায় বৈঠক করে বেড়াচ্ছিল। কল্পনা আইসিডিএস কর্মী। সেদিন স্কুল থেকে নির্ধারিত সময়ের আধঘন্টা আগে বেরিয়ে গিয়েছিল ও বিক্ষোভে যোগ দিতে।
কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর ও যখন বাড়ি ফিরছে, তখন রাস্তায় প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের কয়েকজন লোক জটলা করে বসেছিল। ও যেতে যেতে শুনতে পায়, ওখান থেকে কেউ একজন গলাটা একটু জোরে তুলে বলছে, ‘মেয়েটার বেশি বাড় বেড়েছে বে।’ বুকটা কল্পনার ছ্য‌াঁৎ করে উঠলেও মনে জোর এনে একটু তাড়াতাড়ি পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরে গিয়েছিল। পরদিন সকালে আবার ডিউটি। সকালে বের হবার সময় কি মনে হ’ল, কল্পনা বরের মোবাইলটা হাতে নিয়ে বেরলো। স্কুলে পৌঁছনোর অনেকটা আগেই দূর থেকে ও দেখতে পেল, স্কুলের আগের রাস্তার মোড়ে একটা বিশাল বড় জটলা (ও আমাকে বলেছিল ১০০-১৫০ জন লোক, পরে সৈকত বলে ৬০ -৭০ জন লোক। যাইহোক, সংখ্য‌াটা মোটেও কম নয়)। কল্পনা ভয় চেপে এগিয়ে গেল। জটলাটা মারমুখী চেহারা নিয়ে এগিয়ে এল ওর দিকে, ঘিরে ধরল ওকে। কয়েকজন মাতব্বর প্রায় ওর ঘাড়ে উঠে বলতে লাগল, ‘কাজে ফাঁকি দিয়ে রাজনীতি করে বেড়াচ্ছো? তোমার চাকরি কি করে খেতে হয়, দ্য‌াখাচ্ছি!’ কেউ একটা বলল, ‘কেন ঠিক মতো কাজ করছ না?’ কল্পনার মনের ভয়টা যেন হঠাৎ কেটে গেল। ও চিৎকার করে বলল, ‘কোথায় কাজে ফাঁকি দিয়েছি প্রমাণ দেখাও দিকি।’ তখন একজন চেঁচিয়ে বলল, ‘এই বেটা, বড্ড বাড় বেড়েছে। বিডিওকে খবর দে তো। আজই শালার এস্‌পার ওস্‌পার করব।’ কল্পনা তখনও সাহসের সাথে জবাব দিল, ‘হ্য‌াঁ, ডাকো তোমাদের বিডিওকে। ওনার সামনেই সব ফয়সালা হয়ে যাক্। স্কুলের কাজ যথেষ্ট ভালভাবে শেষ করার পর তারপর আমি আমার সংগঠনের কাজ করেছি। স্কুল টাইমের পর আমি যা খুশি করতে পারি, তোমরা বাধা দেওয়ার কে?’

ইতিমধ্য‌ে বিডিওকে ওদেরই কেউ হয়তো ফোন করেছিল। তিনি খবরের গুরুত্বটা বুঝেই বোধহয় তাড়াতাড়ি সাইকেল নিয়ে হাজির হন। বিডিওকে আসতে দেখে কল্পনার সাহস বাড়ল। দলের একজন ছেলেকে ফোন করে দ্রুত তার এই বিপদের কথা জানিয়ে দিয়ে বলল, সবাই দল বেঁধে যেন ক্লাবের সামনে চলে আসে। বিডিও এসে কল্পনাকে জটলার হাত থেকে ছাড়িয়ে স্কুলের ভেতর নিয়ে গেলেন। রেজিস্টার চেয়ে পাঠালেন। কিন্তু ভালভাবে দেখেও কল্পনার কাজের কোনো গাফিলতি খুঁজে পেলেন না। তখন স্কুলের সব কর্মচারীকে ডেকে পাঠিয়ে, সবাই যেন নিয়ম মেনে কাজ করে— এই পরামর্শ দিয়ে চলে গেলেন। ইতিমধ্য‌ে কল্পনার দলের ছেলে-মেয়েরাও দল বেঁধে চলে এল। তারা ওকে নিরাপদে বার করে নিয়ে এল।
সৈকতের কাছে এই গল্প শোনার পর যখন মনে মনে কল্পনার সাহস ও বলিষ্ঠতার জন্য‌ গর্ব অনুভব করছি, ঠিক তখনই কল্পনার ফোন এল। ‘দিদি, কাল মিটিং-এ আমি যেতে পারব না।’ আমি বললাম, ‘সেকিরে ! কেন আসতে পারবি না ? কী হয়েছে ? কাল মিটিং-টা খুব ইম্পরট্যান্ট। এটা মিস করা ঠিক হবে না তো !’ ও বলল, ‘সে তো জানি দিদি। কিন্তু কী করব বলুন ? বাড়ির যা পরিস্থিতি— কাল কিছুতেই যেতে পারব না। আপনি এখানে কবে আসতে পারবেন বলুন।’ পরের সপ্তাহের শনি-রবিবার আমার দিগনগরে যাওয়ার প্ল্যান ছিল। বললাম ওকে। ও বলল, ‘আপনি আসুন দিদি। তারপরে সামনাসামনি বলব।’ সারা সপ্তাহটা কল্পনার জন্য‌ একপ্রকার টেনশনেই কাটল। সৈকতকে ফোন করলাম, ও-ও কিছুই বলতে পারল না।
যাই হোক, শনিবার কল্পনার বাড়িতে দুপুরে পৌঁছে গেলেও বিকেল অবধি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হল ওর কথা শোনার জন্য‌। ওর বর বিকেলে বেরিয়ে গেল সেলুনের কাজে, তারপর কল্পনা সুযোগ পেল কথা বলতে, ‘দিদি, বাড়িতে আবার আমার বর নতুন সমস্য‌া তৈরি করছে। এখন আমার দল করা নিয়ে ওর সমস্য‌া।’ কল্পনার থেকে বিস্তারিত যা শুনলাম সে কথা বলছি— দলের সাথে ওর বর আগে থেকে যুক্ত, ও পরে যোগ দেয়। কিন্তু বুদ্ধিমত্তা, কাজকর্ম করা— সব দিক থেকে ও এতটা এগিয়ে যে ওর সংগঠনে ওর বরের থেকে ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে চলে গিয়েছে। পুরুষের মেল-ইগো সহ্য‌ করবে কী করে তা এত সহজে ? তাই আরো বেশি অশান্তি-মারধোর-অপমান। সংগঠনের ছেলেদের জড়িয়ে চরিত্র-হননের নানা কুৎসিত অভিযোগ। সম্পর্ক রাখাই দায় হয়ে উঠেছে। আমি বললাম, ‘সম্পর্ক তো তুই ভাঙতে পারছিস না। অন্তত এগুলো তো ইগনোর কর। তোর নিজের জীবন— ভাললাগা এগুলো অন্তত স্যাক্রিফাইস করিস না প্লীজ।’ কল্পনার চোখের থেকে দু’ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। বলল, ‘জানো না দিদি, মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগে। মনে হয় ধুর, এত অশান্তির চেয়ে সব ছেড়ে-ছুড়ে দিই।’ আমি বললাম, ‘এই গ্রামে বসে তোর মনে হচ্ছে এ কি সমস্য‌ার মধ্য‌ে আমি পড়লাম! আসলে এটাই পুরুষতন্ত্র কল্পনা, এটাই পুরুষের ইগো। এর থেকে কেউই বোধহয় মুক্তি পায় না।’ মনে হ’ল ওকে কলকাতার অহনার জীবনের কথা বলা দরকার।
বললাম, ‘শোন্ কল্পনা, আমার এক বন্ধু অহনার গল্প বলি। শিক্ষিত— ভাল চাকরি করে। মূলত ওর টাকাতেই সংসার চলে। ও আর ওর বর দু’জনেই কবিতা লেখে। হঠাৎ একবার এক বইমেলার আগে, ওদের এক বন্ধুর উৎসাহে দু’জনের কবিতার বই বের হল। কিন্তু তারপর থেকেই শুরু হ’ল সমস্য‌া। অহনার কবিতার প্রশংসা তুলনায় বেশি হয়, ওর বই-ও অনেক বেশি বিক্রি হল বইমেলায় ওর বরের তুলনায়। সেটা শহুরে-শিক্ষিত অর্ণবের পক্ষে সহ্য‌ করা সম্ভব হ’ল না। তোর বর, গ্রামের সরল মানুষ— তবুও স্পষ্ট কথা সে তোকে স্পষ্টভাবে বলতে পারেনি। অন্য‌দিকে অর্ণব শহুরে জটিল জীবনে বড় হলেও সে শিক্ষিত-মার্জিত, কিন্তু সে-ও অহনাকে একথা বলতে পারল না। তাই মানসিক অত্যাচার করতে শুরু করল ওর ওপর। ক্রমশ সেটা চূড়ান্ত অমানবিক ও অসংবেদনশীল একটা জায়গায় গিয়ে পৌঁছলো।
অহনার কথা বলতে বলতে আমিও অস্থির হয়ে পড়ছিলাম। আবারও আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে এল, পুরুষতন্ত্রের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন কল্পনার জীবনকে যেমন বিধ্বস্ত করে, অহনাকেও একই ভাবে করে। এখানে গ্রাম— শহরের দুস্তর ব্য‌বধান কোথায় যেন মুছে যায় ! পুরুষের সাথে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সম্পর্কে কল্পনা ও অহনা নিজের আত্মসম্মান বাঁচাতে সঠিক পথ নিতে পারবে তো ? আমার দুশ্চিন্তা হয়! মেয়েদের হেরে যেতে দেখলে খুব কষ্ট পাই। ওরা মেল-ইগো নিজেদের জীবন দিয়ে উপলব্ধি করেছে— ওদের ওপর আমাকে যে ভরসা রাখতেই হবে।

একটু অন্য‌ভাবে পারাজকে ছুঁয়ে দেখা
আয়নানগরের বিগত সংখ্য‌ায় পারাজের কথা পড়ে আমার অনেক বন্ধু নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। তার মধ্য‌ে এক বন্ধু বলেছিল, পারাজের জীবন যন্ত্রণাময় ভাবছিস কেন ? কেন ওর আচরণকে পুরুষতান্ত্রিক কম্প্রোমাইজ ভাবছিস্? এর পজিটিভিটি সম্পর্কে সে হয়তো কমফর্টেবল ফীল করে। দেখা উচিত। আমি তো অবাক। ‘কোন্ দিক থেকে তুই এর মধ্য‌ে পজিটিভিটি খুঁজে পেলি, বস্ ?’ আমার বন্ধু বলল, ‘দ্য‌াখ্, ট্র্যাডিশনালি যদি দেখিস্, ছেলেরাই মেয়েদের দুর্বল ভাবে, তাই তার সমস্ত দায়িত্ব গ্রহণ করে। কিন্তু মেয়েরা তা ভাবে না। অথচ দ্য‌াখ্, পারাজ ধীমানের দুর্বলতাকে স্বীকার ক’রে, ওদের সম্পর্কের সবটার দায়িত্ব নিজে নিয়েছে— এটা কী ব্য‌তিক্রম নয় ? এটাকে তুই পজিটিভ বল্‌বি না ?’ ক’দিন খুব খারাপ লাগার মধ্য‌ে দিয়ে কাটল। আমি পারাজকে এতোটা ভুলভাবে অ্যাসেস করলাম ! ওর গুণের প্রতি অবিচার করে ওকে ছোট করে দেখলাম ? কিন্তু ওর গুণকে ‘গুণ’ বলে আমি যে রেকগনাইজ করতে পারিনি, তা তো নয়। শুধু তাই নয়, তার জন্য‌েই ওর প্রতি আমার ইমোশন, আমার অনুভূতি এখনও এতো গভীর। তবুও আমার কেন মনে হয়েছিল, ধীমানের অকর্মন্য‌তার প্রতি, দায়িত্বজ্ঞানহীনতার প্রতি পারাজের নীরবতা পুরুষতান্ত্রিক কম্প্রোমাইজ ছাড়া আর কিছু নয় ?
ভাবতে ভাবতে অনেক ভাবনা মনের মধ্য‌ে ভীড় করল— কিন্তু কনক্লুশনটা শেষ অবধি বদলালো না। কেন ? — পারাজ কেন প্রতিবাদ করে না ? স্নেহ-ভালবাসা-প্রেম-অপারগতাকে ধারণ করার দক্ষতা— ইত্য‌াদি-ইত্য‌াদি ? না। অনেক ভেবে দেখেছি। এগুলো থাকতে পারে কিন্তু শুধু এগুলো নয়। আসলে পারাজ ভয় পায়, ইনসিকিওরড বোধ করে। প্রতিবাদ করলে ধীমানের মুখ শুকনো হবে— তার ভয়। প্রতিবাদ করলে ধীমানের আচরণ, কথাবার্তা অস্বাভাবিক হবে, বদলে যাবে— তার ভয়। এমনকি সম্পর্কের সব স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়। পারাজ চায় না ধীমান আপসেট হোক্, ডিপ্রেসড হোক্। সে তাই নিজেকে ধীমানের সমান, এমনকি কখনো কখনো ধীমানের থেকে ছোট ক’রেও রাখে। কিন্তু হায় পুরুষের পৌরুষ ! পারাজের এই মনস্তত্বকে সে ধরতে পারে না, বরং তার অহং তৃপ্ত হয়।
তাও শুধু এটুকু হলেও আমার পারাজকে নিয়ে এতটা কষ্ট হতো না , দুঃখ পেতাম না। আমি যে চোখের সামনে দেখতে পাই কিভাবে পারাজের সব সৃজনশীলতা ধীমানের ‘অহং’ কে তৃপ্ত করতে চেয়ে, তাকে শেলটার দিতে গিয়ে মরে যাচ্ছে, শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমি সহ্য‌ করতে পারি না। এই কম্প্রোমাইজকে আমি দায়িত্ববোধ ব’লে ভাবতে পারি না কিছুতেই। এও এক ধরনের পুরুষতান্ত্রিক বোধের প্রতিফলন। জীবনের বিকাশকে রুদ্ধ করে, মানুষের প্রতি দায়কে বিসর্জন দিয়ে ‘অতৃপ্ত মনে’ কোনো ‘মহান কর্তব্য‌’ কী পালন করা যায়? হ্য‌াঁ, পারেজের মন ‘অতৃপ্ত’। মনে পড়ে ‘অন্য‌ নারী’-র এক আলোচনাসভা। পারাজের আসার কথা। অনুষ্ঠান শুরুর আধঘন্টা আগে এসএমএস। পারাজ জানায়, সে বিধ্বস্ত, ক্লান্ত। কথা বলতেও তার ভাল লাগছে না। ও প্রোগ্রামে আসতে পারবে না। আমি যেন ওকে ফোন না করি। একটু ভাল বোধ করলে ও-ই আমাকে ফোন করবে। নিজেকে সামলাতে ওর প্রায় দু’দিন লেগেছিল। দু’দিন বাদে পারাজ ফোন করে খুব স্মার্টলি জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘প্রোগ্রাম তো ভালই হয়েছে, নারে ?’ পারাজের স্মার্টনেস আসলে মনের অর্গল বন্ধ করে দেওয়া। তার গোপন দুর্বল জায়গায় কাউকেই প্রবেশাধিকার দিতে সে নারাজ। আমার মনে পড়ছিল শরৎচন্দ্রের ‘নিষ্কৃতি’ উপন্য‌াসের ‘শৈলজা’ চরিত্রের কথা। পারাজের আর যাই হোক ‘শৈলজা’ হওয়া মানায় না।
আমার বন্ধু, তুমি সন্দেহ প্রকাশ করছিলে না পারাজের পুরুষতান্ত্রিক পশ্চাৎপদতা নিয়ে? এখনও কী তোমার এই সন্দেহ রইল? জীবনের কোন দৈন্য পারাজকে বিছানায় শুইয়ে দেয়? কথা বলার ক্ষমতা নিঃশেষ করে দেয়, বলতে পারো? পুরুষতন্ত্রের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে পারাজের মতো অধিকাংশ মেয়েদেরই বাঁচার পথ নেই। নেই হয়তো আমারও।
কবে শুরু হবে আমাদের লড়াই? জোট বেঁধে? একা তো হাজারো প্রতিবন্ধকতার মোকাবিলা করা যায় না। একা তো একটা তন্ত্রের ধ্বংস সাধন করা যায় না। কিন্তু এখন? — অপেক্ষা, শুধু অপেক্ষা! তারপর …
সঙ্গের ছবি – ‘লোকবিদ্যা জন আন্দোলন’কারী শিল্পী চিত্রা সহস্রবুদ্ধে

1 thought on “এপিঠে ওপিঠে বিচার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.