সৌমিত্র গুহ
জন্ম ১৯৭১ সালে। সরকারী চাকুরে ও ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের কর্মী। কবি ও প্রবন্ধলেখক।
চোরাবালি
আমাদের পাগুলো আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছে খালি
অনেক গভীরে আজ টেনে নিচ্ছে সভ্যতার এই চোরাবালি
জনপদ ডুবে যাচ্ছে, নিস্পন্দ সময়ের পাড় ভাঙছে আজ
অসংখ্য রক্তাক্ত হাত আস্তে আস্তে সেরে নিচ্ছে অর্বাচীন কাজ
অথচ সময়টা স্থির ছিল, খুঁজছিল মৃতপ্রায় মানুষের স্তূপ
আমার সমস্ত পাশে দেখি জাগছে ধীরে ধীরে প্রিয় অন্ধকূপ
দুটি হাতে হাসতে হাসতে আমরা আজ দিয়ে যাচ্ছি তালি
আমাদের টেনে নিচ্ছে অনেক গভীরে এই মগ্ম চোরাবালি
সূর্যশিখা
অনন্ত কৃত্রিমতা আমি মুখোশের মত পরে আছি
আমাদের পাড়ার সব শিশুদের ভয়ার্ত চাহনিগুলো দেখি
খানিকটা মজা পাই, খানিকটা সংশয় এসে জমে
সুদূর আকাশে আজ সূর্যশিখা বাড়ে আর কমে…
গ্যাস-চেম্বারে ঢোকার আগে সমস্ত প্রস্তুতি সারি
মাটিতে সাজিয়ে রাখি আমার বিপন্ন তরবারি
কাঁটাতারের গায়ে শিশুদের অশ্রু এসে জমে
সুদূর আকাশে শুধু সূর্যশিখা বাড়ে আর কমে
প্রহেলিকা
একটি বছর এলো । একটি বছর চলে গেল
হে উতরোল সভ্যতা। আমিও ভালো থাকতে পারি
রক্ষা কর মহাকাল আমি আজ নেহাতই আনাড়ি।
অত্যাচার করো সহ্য করব। আমার গ্রন্থাগারখানা
আগুনে পুড়িয়ে দাও। দাউদাউ লেলিহান শিখা
আমার জন্য থাক সময়ের অল্প প্রহেলিকা…
অন্তর্ঘাত
সময়ের চেয়ে বড় অন্তর্ঘাত কখনো দেখেনি কেউ
পাহাড়ের ঢাল বেয়ে সূর্য গড়িয়ে গেল নীচে
তারপর ঢাল বেয়ে চাঁদ উঠল। অনেক উচুঁতে
পাহাড়ের গায়ে সে একটা পতাকা টাঙাল।
অনেক চেষ্টা করল ঘোড়সওয়ারেরা। তাদের বল্লমে
একটি সাইবেরিয়ান হাঁস বিদ্ধ হল। আর মেঘে মেঘে
অনন্ত সাইরেন গুমরে গুমরে কেঁদে উঠল।
আমি শুধু মরা শাদা পালকের ভীড়ে ভাসতে থাকি
একা একা, পৃথিবীর সমস্ত অসমাপ্ত কাব্যের ভিতরে…
(চিত্রণ – স্বর্ণ জানা)
1 thought on “কবিতাগুচ্ছ”