সমীরণ সাধুখাঁ

প্রথম প্রকাশ – এপ্রিল, ২০১৭; প্রকাশক – অগ্নীশ্বর চক্রবর্তী (স্রোতের বিপরীতে)। সঙ্গের ছবি – ছবি – ভি অরুণ (https://rebelpolitikblog.wordpress.com)।


কেন এই প্রকাশনা?

২০১৪ সালে, বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সারা দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে যার শুরু হয়েছিল ‘দেশপ্রেম-দেশদ্রোহ’ বিতর্ককে ঘিরে। তারপর একের পর এক দাদরি, গোমাংস, জেএনইউ, কাশ্মীর, পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদ, যুদ্ধ উন্মাদনা ভারতীয় সমাজ পরিসরে ক্রমাগত জায়গা করে নিয়েছে। বিভাজনের রাজনীতি, উগ্র জাতীয়তাবাদ ইত্যাদিকে হাতিয়ার করে বিজেপি ও তার মূল মদতদাতা সংঘ-পরিবার যখন একের পর এক ঘটনা হাজির করছে ভারতবর্ষের শ্রমিক, কৃষক সহ মেহনতি আমজনতার সামনে, তখন নিঃশব্দে, চোখের আড়ালে আম্বানি বা আদানিরা তাদের মুনাফা বাড়িয়ে তুলছে কোটি কোটি গুণ। অন্যদিকে তীব্র মালিকী শোষণে জেরবার হয়ে যাচ্ছে শ্রমিক, আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে আমাদের দেশের কৃষক। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাও ক্রমাগত দুর্বিষহ হয়ে উঠছে বেকারি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জাঁতাকলে পড়ে। ছাত্রছাত্রীর শিক্ষা হয়ে উঠছে মহার্ঘ্য। এই অবস্থায় আবার আমাদের রাজ্যে সংঘ-পরিবার সহ বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন নেমে পড়েছে দাঙ্গা বাঁধিয়ে মেহনতির ঐক্যে, সাধারণ মানুষের মধ্যে ফাটল ধরাতে। যাতে তারা ও তাদের দোসর পুঁজিপতি মালিকদের শোষণ থেকে যায় চোখের আড়ালে। আমরা ঠিক করেছি জোর গলায় ধারাবাহিক প্রশ্ন তুলব যেকোনো ধর্মীয় মৌলবাদ, ফ্যাসিবাদ, মালিকী জুলুম, সামাজিক অন্যায়, বেকারত্ব, শিক্ষার পণ্যায়ন সহ অজস্র বিষয়ে যা আমাদের স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। জানি আপনাদের পাশে পাবো। যোগাযোগ করুন, মতামত দিন, বিতর্ক চালান একটা সুন্দর সমাজের জন্যে।

সংঘ-পরিবার কিছুদিন ধরেই একথা প্রমাণ করার জন্য একদম উঠেপড়ে লেগেছে যে এদেশে তারাই হচ্ছে প্রকৃত দেশপ্রেমিক। তারা দেশপ্রেম-এর একটা সংজ্ঞা হাজির করছে। সেই সংজ্ঞা যদি কেউ না মানে, তাহলে তারা জোর করে তাদের সেই সংজ্ঞা মানতে বাধ্য করাবে। তাতে যদি তাদের মেরেধরে, মাথায় গজাল মেরে বোঝাতে হয় তাই সই। আর তাতেও যদি তারা না মানতে চায়, তাহলে এ দেশ থেকেই সংঘ-পরিবার তাদের বার করে দেবে। সংঘ-পরিবারের দেশদ্রোহিতার সংজ্ঞা ভয়ানক। সে সংজ্ঞা এমন যে, সেখানে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে শান্তির কথা বলাও দেশদ্রোহিতা। যে সে কথা বলবে, তার মুখ বন্ধ করার জন্য তাকে ধর্ষণ করার ভয় পর্যন্ত দেখানো যেতে পারে। দেশের মধ্যে বিভিন্ন জাতির ওপর সেনাবাহিনীর সন্ত্রাসের বিরোধিতা করা দেশদ্রোহিতা। দেশে ভয়ঙ্কর যে সব কালা কানুন রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা দেশদ্রোহিতা। আদিবাসীদের তাদের বাসভূমি থেকে উৎখাত করার জন্য যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ক্রমাগত চলেছে, তার বিরোধিতা করাও দেশদ্রোহিতা। এরকম একটা বা দুটো উদাহরণ নয়, গত কয়েক বছরে অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে, যেখানে আলোচনাসভা ভয় দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, কারণ বিষয়বস্তু বা বক্তা সংঘ-পরিবারের পছন্দসই নয়। পথনাটিকার প্রতিযোগিতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কারণ কোন একটি পথনাটিকা সংঘ-পরিবারের এই আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সিনেমা-হলে দর্শকদের ওপর মারপিট করা হয়েছে, তারা জাতীয় সঙ্গীত বেজে উঠবার সময় উঠে দাঁড়ায় নি বলে।

সংঘ-পরিবারের যুক্তি হল, কাশ্মীরের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পক্ষে কথা বলা দেশদ্রোহিতা, কারণ তাতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন করা হয়। সংঘ-পরিবারের যুক্তি হল, পাকিস্তানের সাথে শান্তির কথা বলা দেশদ্রোহিতা, কারণ পাকিস্তান ভারতের শত্রু দেশ। মাওবাদীদের ওপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শুধু নয়, এমন কি মাওবাদী দমনের নামে নিরীহ আদিবাসীদের ওপর চলা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরোধিতা করাও দেশদ্রোহিতা, কেননা মাওবাদীরা দেশের বর্তমান কাঠামোকে পাল্টানোর কথা বলছে। এমন কি দেশের আইনের বিরুদ্ধে কথা বলাই দেশদ্রোহিতা।

ঠিক আছে, ধরে নেওযা যাক ওদের কথাই ঠিক। কিন্তু তাই যদি হয়, তাহলে সংঘ-পরিবার কি কম বড় দেশদ্রোহী? বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার সময় সংঘ-পরিবার দেশের আইন মেনেছিল কি? সুপ্রীম কোর্টের রায়কে প্রকাশ্যে অগ্রাহ্য করে, দেশের সংবিধানকে কারা সেসময় বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছিল? সংঘ-পরিবারই তো। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোকে (তা যতই অসম্পূর্ণ হোক) ভেঙ্গে তাকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর জন্য যারা প্রতিদিন প্রকাশ্যে প্রচার করছে, সক্রিয়ভাবে চক্রান্ত চালাচ্ছে, তারা দেশদ্রোহী নয়? যারা দেশের আইনের তোয়াক্কা না করে দেশের মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে বাড়িয়ে তুলে এক ভয়ঙ্কর দাঙ্গা সংঘটিত করার দিকে চলেছে তারা দেশদ্রোহী নয়? সংঘ-পরিবার এই দেশের সংবিধানকে ভাঙ্গতে চাইছে, এই দেশের শাসন কাঠামোকে ভাঙ্গতে চাইছে। এই দেশে যে সামান্য গণতন্ত্র রয়েছে, তাকে কেড়ে নিতে চাইছে। দেশকে ভাঙ্গতে চাওয়ার যুক্তিতে ওরাও তো দেশদ্রোহী, তাই নয় কি? কে দেশপ্রেমিক আর কে দেশপ্রমিক নয় তা ঠিক করার কোন অধিকার সেই সংঘ-পরিবারের আছে কি?

একথা সবাই মানেন যে স্বাধীনতার আগে দেশপ্রেমিকদের সবচেয়ে বড় কর্তব্য ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করা। ব্রিটিশ অধীনতা থেকে মুক্তি ছিল সমস্ত দেশপ্রেমিকের মূল লক্ষ্য। সে সময় কী ছিল সংঘ-পরিবারের ভূমিকা? ইতিহাস সাক্ষী, যে সংঘ-পরিবার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইকে কোনদিনই তার কর্তব্য বলে মনে করে নি। আরএসএসের দ্বিতীয় সরসংঘচালক এম এস গোলওয়ালকর তাঁর বই We And Our Nationhood–এ লিখেছিলেন, “সীমানাগত জাতীয়তাবাদ ও সাধারণ বিপদের তত্ত্ব, যা জাতি সম্বন্ধে আমাদের ধারণার মূল ভিত্তি, আমাদেরকে প্রকৃত হিন্দু জাতীয়তাবাদের ধনাত্মক ও অনুপ্রাণিত করার মতো বিষয়বস্তু থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে, এবং বহু ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’-কে কার্যত ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে পরিণত করেছে। ব্রিটিশ বিরোধিতাকে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের সমার্থকে পরিণত করা হয়েছে। এই প্রতিক্রিয়াশীল দৃষ্টিভঙ্গি স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরো পর্বের ওপর, তার নেতা ও সাধারণ জনগণের ওপর এক ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলেছে।” অর্থাৎ, ব্রিটিশ বিরোধিতা তাঁর কাছে প্রতিক্রিয়াশীল কাজ ছিল।

১৯৪০-এর দশকে সংঘের প্রভাব বেড়েছিল সবচেয়ে বেশি। কিন্তু, অদ্ভুত ব্যাপার হল ৪০-এর দশকে সংঘ-পরিবার কোন ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে ভূমিকা নেয়নি। তাদের প্রভাব বেড়েছিল সাম্প্রদায়িক প্রচার আর দাঙ্গা সংগঠিত করার মধ্যে দিয়ে। সংঘ-পরিবার আজ তেরঙ্গা ঝান্ডা নিয়ে মিছিল করে নিজেদের দেশপ্রেমিক প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ১৯৪৭ সালের আগে চিরকালই সংঘ তার গেরুয়া ঝান্ডাকেই পুজো করেছে, ব্যবহার করেছে। ১৯৩০ সাল থেকে জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলো ২৬শে জানুয়ারীকে স্বাধীনতা দিবস হিসাবে পালন করত, এবং সে নিয়ে ব্রিটিশ বাহিনীর সাথে তাদের সংঘর্ষও হত। ১৯৩০ সাল ছাড়া অন্য কোনো সময় সংঘ-পরিবার ২৬শে জানুয়ারী পালন করে নি; এমনকি সেই দিনটিতেও তারা তুলেছিল গেরুয়া ঝান্ডা। সংঘ-পরিবার এখন গেরুয়া ঝান্ডাকে লুকিয়ে রেখে তেরঙ্গাকে ব্যবহার করছে নিজেদের দেশপ্রেমিক প্রমাণ করার জন্য।

এই সংঘ-পরিবারের থেকে আমাদের দেশপ্রেমের সংজ্ঞা শিখতে হবে?

এদের ভূমিকাকে একটু পাশে সরিয়ে রেখে দেশপ্রেমের বিতর্কের আরেকটা দিক একটু বিচার করা যাক। কোনো দেশের বর্তমান সংবিধান, কাঠামো বা এমনকি অখণ্ডতাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলাই কি দেশদ্রোহিতা? প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে, যে সংঘ-পরিবারের কট্টর সমর্থক ছাড়াও সমাজের একটা অংশ রয়েছে, যারা সংঘ-পরিবারের আক্রমণাত্মক, আগ্রাসী ভূমিকাকে সমর্থন না করলেও মনে করেন যে কাশ্মীর বা যে-কোনো জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পক্ষে দাঁড়ানো মানে দেশের অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্বর বিরোধিতা করা অর্থাৎ দেশদ্রোহিতা। এমনকি দেশের সংবিধান বা শাসনব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলাও দেশদ্রোহিতা।

ভারতবর্ষের সংবিধানে গণতন্ত্র নানাভাবেই সঙ্কুচিত। তা সত্ত্বেও, এদেশের সুপ্রীম কোর্ট একথা বারবারই ব্যাখ্যা করেছে, যে-কোনো বিষয় নিয়ে শুধুমাত্র বক্তব্য রাখা বা এমনকি তার পক্ষে দাঁড়ানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়, তা যতই কটু হোক না কেন, যতই অন্যদের না-পসন্দ হোক না কেন। একমাত্র তখনই তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হতে পারে, যখন সেই প্রচার একটা সমসাময়িক হিংসাত্মক ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে, দেশের আইনকে নিয়ে, সংবিধানকে নিয়ে, বিদ্যমান কাঠামোকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা, এমনকি দেশের অখণ্ডতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা, এমন কি তার পক্ষে দাঁড়ানো আইনি ভাবে দেশদ্রোহিতা নয়। আমাদের দেশে রাষ্ট্রদ্রোহিতার আইনের নানান অপব্যবহার হয়েছে। হওয়ারই কথা, কারণ আমাদের দেশে গণতন্ত্রের অবস্থান সঙ্কুচিত। কিন্তু অপব্যবহার দিয়ে গণতন্ত্রের এই মৌলিক সত্যকে পাল্টে দেওয়া যায় না। সে কারণে, কেউ যদি কাশ্মীরের আত্মনিয়ন্ত্রণের পক্ষে কোন আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখে তা কখনোই দেশদ্রোহিতা হতে পারে না, ভারতবর্ষের বর্তমান আইন অনুযায়ীই।

এবার আইনের গণ্ডীকে অতিক্রম করে গণতন্ত্রের দিক থেকে, ন্যায় বিচারের দিক থেকে একবার ভাবা যাক। কোন দেশের সীমানা কি অপরিবর্তনীয় কোন বিষয় যে তাকে পাল্টানোর কথা বলাই ঘোরতর অন্যায় হয়ে যাবে ? ধরুন, ১৯৭৫ সালের আগে সিকিম ভারতের অংশ ছিল না। ১৯৭৫ সালে সিকিমকে ভারতের অঙ্গীভূত করা হয়। সেটা জোর খাটিয়ে করা হয়েছিল না সিকিমের নেপালী জনগণ স্বেচ্ছায় ভারতের অংশ হয়েছিল সে প্রশ্ন আলাদা। এখন যদি দাবী করা হয় সিকিম ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, এবং এ নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলা মানেই দেশদ্রোহিতা, তাহলে কি তা ঠিক হবে? কেউ যদি মনে করেন সেই সময় ভারতের মধ্যে সিকিমকে অন্তর্ভুক্ত করা ঠিক হয়নি, তাহলে কি তিনি দেশদ্রোহী হয়ে যাবেন? আরেকটু পিছনে ফিরে যান। ১৯৪৭ সালের পর কয়েকটি প্রতিবেশী অঞ্চলকে নিয়ে ভারতবর্ষ তৈরী হয়। তার মধ্যে কয়েকটি অঞ্চল আদপেই ভারতের অংশ ছিল না, যেমন নাগাল্যান্ড। নানাভাবে সেই অঞ্চলগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেই প্রশ্নগুলি তোলাটাই এখন অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

ধরা যাক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যর কথা। ইংরেজরা জোর করে ভারতকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যর অন্তর্ভুক্ত করেছিল। শুধু ভারতীয়রাই নয়, অনেক ব্রিটিশ নাগরিকও ভারতের মুক্তির দাবী করেছিলেন। তাহলে কি তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের মতের সাথে মত মিলিয়ে আমরা বলব, সেই ব্রিটিশ নাগরিকরা দেশদ্রোহী ছিলেন? ব্রিটিশ সরকারের আইনের বিচারে তাঁরা যদি দেশদ্রোহীও হয়ে থাকেন, প্রকৃত গণতন্ত্রের বিচারে তাঁরা কি সেদিন সঠিক কাজ করেননি? কোনো দেশের সীমানাকে পরিবর্তনের পক্ষে কথা বলাই অন্যায় নয়, তাকে বিচার করতে হবে গণতন্ত্রের দিক থেকে। দেশের সাংবিধানিক কাঠামোকেও একইভাবে বিচার করা দরকার। দেশের সাংবিধানিক কাঠামো ক্রমাগত পাল্টাতে পাল্টাতেই একটা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এই পাল্টানোর মধ্যেই অনেকসময় দেশের প্রগতি প্রতিফলিত হয়। ফলে দেশের সাংবিধানিক কাঠামোকে পরিবর্তন করা দরকার, এই কথা বলাটা অন্যায় হতে পারে না। প্রশ্ন হল দেশের প্রগতি বিচার করব কোন দিক দিয়ে, কোন মাপকাঠিতে?

দেশ কি? দেশ কি শুধু একটা ভূখণ্ড? নাকি দেশ মানে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ? পৃথিবীতে ভূখণ্ডগুলো হাজার হাজার বছর ধরে একই অবস্থায় রয়েছে অপরিবর্তিতভাবে। কিন্তু গত ২০০-৩০০ বছর আগে পর্যন্ত মানবসভ্যতার ইতিহাসে দেশ বা জাতি কোন ধারণাই আসে নি। তার মানে দেশ নিছক একটা ভূখণ্ড নয়, দেশ আসলে তৈরী দেশের জনগণকে নিয়ে। দেশের স্বার্থ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের স্বার্থ।

আমাদের দেশের জনগণের শত্রু কে? স্বাভাবিকভাবেই যারা আমাদের দেশের জনগণকে শোষণ করছে। যারা আমাদের দেশের সম্পদকে লুঠ করছে। আমাদের দেশেরই কারখানার মালিক পুঁজিপতি আর জমির মালিকরা আমাদের দেশের শ্রমিক-কৃষক-ক্ষেতমজুরদের শোষণ করছে। কিন্তু, আরো একটা বিদেশী শক্তি রয়েছে যারা শুধু আমাদের দেশের শ্রমিক বা কৃষকদেরই নয়, জনগণের আরো একটা বড় অংশকে শোষণ নিপীড়ন করছে। তারা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিরা এই মুহূর্তে সরাসরি আমাদের দেশ দখল করে নেই বটে, কিন্তু বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানীর মধ্যে দিয়ে, ধারের জালে আমাদের দেশকে বেঁধে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিরা আমাদের দেশের জনগণের সম্পদকে লুঠ করে চলেছে। ওরা একটা যুদ্ধ চালাচ্ছে। প্রতিদিন। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, খনিজ সম্পদ লুঠ করার উদ্দেশ্যে সেই যুদ্ধ। বহুজাতিক সার-বীজ কোম্পানীগুলো সর্বনাশ করছে কৃষকদের, যার ফলে অর্থকষ্ট, জলকষ্টে জেরবার কৃষকদের কাছে আত্মহত্যা ছাড়া আর পথ থাকছে না। এই সাম্রাজ্যবাদী বিদেশী শক্তির লুন্ঠনের বিরোধিতা না করে কি প্রকৃত দেশপ্রমিক হওয়া সম্ভব? সে তো সোনার পাথরবাটি।

সংঘ-পরিবার কোনোদিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় নি, এখনো দাঁড়াচ্ছে না। শুধু তারা কেন, ভারতবর্ষের শাসকশ্রেণীতে থাকা কোনো দলই সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় নি। বরং তারা সবাই সাম্রাজ্যবাদকে মদত দিয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ যে যুদ্ধ চালাচ্ছে তার জন্য তাদের সীমান্ত পেরিয়ে সেনাবাহিনী পাঠাতে হয় নি, কারণ আমাদের দেশের শাসকরাই তাদের জন্য দরজা খুলে রেখে দিয়েছে। সংঘ-পরিবারের দেশপ্রেমের সমস্ত আওয়াজ পাকিস্তানকে ঘিরে। পাকিস্তান আমাদের শত্রু দেশ। সুতরাং পাকিস্তানের সমস্ত কিছুকে বিরোধিতা করতে হবে। মায় তার শিল্পীদেরও বিরোধিতা করতে হবে। এটাই হল তাদের অতিসরলীকৃত দেশপ্রেম। আর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বা জার্মান সাম্রাজ্যবাদ যখন আমাদের দেশকে লুন্ঠন করে তার বেলা তারা তাদের সাহায্য করে চলেছে। আসলে ওরা দেশপ্রেমের কথা বলছে না, দেশপ্রেমের আড়ালে ওরা সাম্প্রদায়িক বিভাজনের কথা বলছে। ওদের দেশপ্রেম আসলে দেশপ্রেমের মোড়কে সাম্প্রদায়িকতা। তেরঙ্গা পতাকা ওড়ালে বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কথা বললেই দেশপ্রেমিক হওয়া যায় না। দেশপ্রেমিক হতে গেলে আগে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের প্রকৃত স্বার্থে দাঁড়াতে হয়।

পাকিস্তান কি ভারতের শত্রু নয়? পাকিস্তান কি ভারতের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে না? পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নি? পাকিস্তান থেকে সন্ত্রাসবাদীরা এসে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি? সেই পাকিস্তানের বিরোধিতা করা কি দেশপ্রেম নয়? সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে আমরা কি পাকিস্তানকে আড়াল করার চেষ্টা করছি?

যখন থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ইত্যাদি দলগুলোকে ব্যবহার করে ভারত ও পাকিস্তান এই দুটো দেশ সৃষ্টি করেছিল, এবং এক ভয়ঙ্কর দাঙ্গার মধ্যে দিয়ে এই দুটো দেশের জন্ম হয়েছিল, তখন থেকেই এই দুই দেশ একে অপরের শত্রু হিসাবে দাঁড়িয়ে গেছে। অথচ এক দিক থেকে দেখলে পরিষ্কারভাবেই এটা সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্ত, যাতে তারা নিজেদের মত আর্থিক শোষণ চালিয়ে যেতে পারে। এই দুই দেশের শাসকশ্রেণীও এই শত্রুতাকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে চলেছে। তারা বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধের জিগির তুলছে, যাতে দেশের জনগণকে তাদের জীবনের প্রকৃত সমস্যাগুলো থেকে ভুলিয়ে রাখা যায়।

এই বিষয়ে সন্দেহ নেই যে পাকিস্তানের শাসকরা সন্ত্রাসবাদকে মদত দিয়েছে, যাতে তারা ভারত ও পাকিস্তানের জনগণের এই বিরোধকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু ভারতের শাসকরা কি সেই অর্থে ধোয়া তুলসীপাতা? ভারত কি প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে নি। একসময় শ্রীলঙ্কার এলটিটিই জঙ্গীদের কি ভারতীয় সেনাবাহিনী ভারতে প্রশিক্ষণ দেয় নি? নেপালে বারবার ভারতবিরোধী বিক্ষোভ হয় কেন? সেদেশের মানুষ প্রধানত হিন্দু, কিছুদিন আগে পর্যন্ত সে দেশটা হিন্দু রাষ্ট্র ছিল। তবু নেপালের মানুষ যখন বিক্ষোভ দেখায় যে ভারতের শাসকরা সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে, সে দেশের অর্থনীতি-রাজনীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে, তখন শুধু মুসলমানদের চক্রান্ত বলে তাকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে কি? আসলে এই দেশগুলোর সম্পর্কের মধ্যে যে তিক্ততা রয়েছে, যে শত্রুতা রয়েছে তার জন্য এই সব দেশের শাসকরাই দায়ী। তাদের প্রয়োজনমত কখনো তারা যুদ্ধজিগির দেয়, আবার কখনো শান্তির পায়রা ওড়ায়। কদিন আগে একটি মেয়ে যখন সোশাল মিডিয়ায় দু দেশের মধ্যে শান্তির কথা বলেছিল তখন এবিভিপি তাকে হুমকি দিয়েছিল, অনেকেই তার কথাকে নিন্দা করেছিল। অথচ কিছুদিন আগেই তো মোদী নিজে শান্তির কথা বলতে নওয়াজ শরিফের কাছে গিয়েছিলেন, তখন মোদী আর নওয়াজ শরিফের দৌত্য নিয়ে কত লেখালেখিই না হল। মোদী শান্তির কথা বললে দোষ নেই, অন্যরা শান্তির কথা বললে দোষ? শাসকরা যখন শান্তির কথা বলবে তখন আমাদের শান্তির জন্য নাচতে হবে, আর শাসকরা যখন যুদ্ধের কথা বলবে তখন আমাদেরও যুদ্ধ-যুদ্ধ করে লাফাতে হবে?

কোনো দেশের জনগণ কোন দেশের জনগণের শত্রু নয়। সব দেশের জনগণই শোষণ, নিপীড়নের শিকার। তাদের সবার শত্রু দারিদ্র, বেকারী, অশিক্ষা, চিকিৎসার অভাব ইত্যাদি। সুতরাং, তাদের অবস্থা এক। তাদের ভাগ নেই। তাদের মধ্যে কৃত্রিমভাবে ভাগ করে রেখেছে শাসকেরা। কোন দেশের যদি শত্রু থাকে তাহলে তারাই যারা সে দেশকে দখল করে, তাকে শোষণ-লুন্ঠন করতে চায়। সেটা বর্তমানে হল সাম্রাজ্যবাদী দেশের শাসকেরা। ভারতের মত দেশগুলোকে শোষণ-লুন্ঠন না করে সাম্রাজ্যবাদীদের উপায় নেই, সে জন্যে সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে এই সব দেশের জনগণের উপায় নেই। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে নিপীড়িত জাতিগুলির প্রকৃত মুক্তি সম্ভব নয়।

কিন্তু ভারতের প্রতিবেশী দেশের জনগণ ভারতের জনগণের শত্রু নয়। এই সব দেশের শাসকেরা নিজেদের ক্ষমতার স্বার্থে এই শত্রুতাকে তৈরী করেছে, জিইয়ে রেখেছে, প্রয়োজনমত বাড়ায়, প্রয়োজনমত কমায়। দুই দেশের সাধারণ মানুষকে, এমনকি সাধারণ সেনাকেও তাদের শাসকেরা বলি দিচ্ছে শাসকদের স্বার্থে।

বিদেশী শোষকদের লুন্ঠনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ক্ষেত্রে দেশপ্রেমের একটা ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু, দেশপ্রেম, দেশাত্মবোধ এগুলো কি এমন কোন আদর্শ যা সব অবস্থাতেই মেনে চলাটাই কাম্য? দেশাত্মবোধ, দেশপ্রেম মানে নিজেদের দেশকে অন্য দেশের তুলনায় শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসানো। যে কোন দেশাত্মবোধক চিন্তা, দেশাত্মবোধক গান লেখার কথা ভাবলে কিন্তু দেখা যাবে এই দিকটাই জোরালোভাবে আসে। বাংলার একটি দেশাত্মবোধক গান আমাদের খুবই পরিচিত – “এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।” মনে হয় সব দেশের দেশাত্মবোধের ধারণার মধ্যে একই বিষয় থাকে, নিজের জাতি, নিজের দেশের শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা। একথা কিন্তু আমরা ক্রমশ বুঝতে পারছি যে প্রতিটি জাতির মধ্যেই, প্রতিটি দেশের মধ্যে অনেক কিছু রয়েছে যা মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। বিশ্বায়ন সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো শুরু করেছিল তাদের স্বার্থে, তাদের মুনাফার স্বার্থে। কিন্তু তা করতে গিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ, মেলামেশা, সংমিশ্রণ তারা অজান্তেই বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে, যদিও এই প্রক্রিয়াটা আসলে পুঁজিবাদই শুরু করেছিল। তার আগে সামন্তযুগে একেকটি অঞ্চলের মানুষ থাকত তার সংকীর্ণ গণ্ডীর মধ্যে। পুঁজিবাদ তাকে ভেঙ্গে দিয়েছিল। বিশ্বায়নের এই পর্যায় তা অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। উৎপাদনের বিষয়টি যদি দেখি, তাহলে দেখবো উৎপাদনের কাঁচামাল আসছে একদেশ থেকে, তার যন্ত্রাংশ তৈরী হচ্ছে আরেকটি দেশে, যন্ত্রাংশগুলি জোড়া দিয়ে চূড়ান্ত যন্ত্রটা তৈরী হচ্ছে হয়তো আরেকটি দেশে। একেকটি গবেষণায় কাজ করছে বহু দেশের বৈজ্ঞানিক একসাথে, সম্মিলিতভাবে। ইন্টারনেটের দৌলতে মুহূর্তের মধ্যে এক দেশের খবর ছড়িয়ে পড়ছে পৃথিবীর অপর প্রান্তে, অন্য দেশের মানুষকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। এই সংমিশ্রণের প্রক্রিয়া মানবসভ্যতাকে এগোতে সাহায্য করছে। এই অবস্থায় কেউ যদি দাবী করে তাদের দেশই শ্রেষ্ঠ, তাদের জাতিই শ্রেষ্ঠ, তাহলে বলা হোক বা না হোক তার মানে হবে, অন্য দেশ, অন্য জাতি তার থেকে নীচুতে অবস্থান করছে। এই মনোভাব এই সংমিশ্রণের প্রক্রিয়ার প্রগতির বিরুদ্ধে কাজ করে। শুধু তাই নয়, তার মধ্যে নিহিত থাকে অন্যদের প্রতি আধিপত্য বিস্তারের আকাঙ্খা।  “আমরা আর্য, আমরা শ্রেষ্ঠ” এই বলেই হিটলার তার ফ্যাসিবাদী অভিযান চালিয়েছিল। আজ আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই ভাষাতেই ঘোষণা করছে, “make America great again”, আর সেই একই ভাষা ব্যবহার করে সাদা চামড়ার বর্ণবিদ্বেষকে চাগিয়ে তুলছে। বর্ণবিদ্বেষী আক্রমণ থেকে আমেরিকায় কাজ করতে যাওয়া ভারতীয়রা রেহাই পাচ্ছে না। সংঘ-পরিবারের ভাষাও এই ভাষাই। এই দেশপ্রেম, এই দেশাত্মবোধ কি আমরা চাইব?


দেশপ্রেম দেশাত্মবোধের আরেকটি দিকও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি দেশের মধ্যে, প্রতিটি জাতির মধ্যে দুটো বিরোধী অংশ থাকে, যারা একে অপরের শত্রু। একটা শোষক শ্রেণী, একটা শোষিত শ্রেণী। পুঁজিপতি আর শ্রমিক। জমিদার আর কৃষক। ধনী কৃষক আর ক্ষেতমজুর। প্রতিদিন এই দুইয়ের যুদ্ধ চলছে – অনেকটাই সাধারণ লোকচক্ষুর অন্তরালে, কিছুটা প্রকাশ্যে। প্রতিদিন এই দুই শ্রেণীর বৈষম্যও ভয়ঙ্করভাবে বেড়ে চলেছে। বিশ্বায়নের এই শোষক পর্যায় এই বৈষম্যকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এত বাড়িয়ে দিয়েছে, যে তাকে কোনোভাবেই আর লুকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। শাসকরা চিন্তিত যে এই বৈষম্য এক ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের জন্ম দিতে পারে। এক দেশের, এক জাতির শোষিত মানুষদের হঠাৎ সাম্রাজ্যবাদী শোষণ-লুন্ঠনের বিরুদ্ধে জাগিয়ে তুলতে যেমন দেশাত্মবোধ সাহায্য করতে পারে, তেমনি তার এক কল্পিত ছবি আবার এই শোষিত শ্রেণীকেই সেই দ্বন্দ্বকে ভুলিয়ে রাখতেও সাহায্য করতে পারে। আর সেটা করা গেলেই শোষকদের লাভ। সে কারণেই কি এত দেশপ্রেম চাগিয়ে তোলার চেষ্টা? ভাবতে হবে না আমাদের? ভাবতে হবে বৈকি।

একটা জাতির মধ্যে শোষক ও শোষিতদের ঐক্যের কথা মিথ্যে, অবাস্তব। প্রকৃত ঐক্য হতে পারে সমস্ত দেশের, সমস্ত জাতির মেহনতী, শোষিত মানুষের মধ্যে। কারণ শ্রমিকশ্রেণীর, মেহনতী জনগণের কোনো জাতি নেই, ধর্ম নেই, জাত নেই। তাদের একটাই পরিচয়, তারা শ্রমিক, তারা শোষিত। তাই গোটা দুনিয়ার শ্রমিক ও মেহনতী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে; সমস্ত শোষক শাসকদের বিরুদ্ধে। দেশপ্রেমের গণ্ডীর মধ্যে আটকে থাকলে এই ঐক্য সম্ভব নয়।

বিভিন্ন দেশের শাসকেরা পৃথিবীর মানুষকে বিভক্ত করে রাখে, দেশের গণ্ডীতে, জাতির গণ্ডীতে। তাদের মধ্যে যুদ্ধ বাধায়। তাদের মধ্যে শত্রুতা বাড়ায়।

পৃথিবীর মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে কোন অলীক বিশ্বমানবতার বোধ নয়, একটা বাস্তব শক্তি – গোটা দুনিয়া জুড়ে শ্রমিকশ্রেণী ও মেহনতী মানুষের ঐক্য।

2 thoughts on “দেশপ্রেম, দেশদ্রোহ ও সংঘ-পরিবার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.