অন্তর্জালের ঝঞ্ঝাটে না গিয়ে কাগজেকলমে পত্রিকা করার একটা ভাল দিক হল দিনে ক’খানা লেখায় ক’টা ‘হিট’ হল তা চেক করার কোনো দায় থাকেনা। একবার বই হাতচালান হয়ে গেলেই হল। ক’জন পাঠক কোন লেখাটা কতবার পড়েছেন সেসব খুঁটিয়ে জানার দায়িত্ববোধ বা স্পৃহা সম্পাদকের থাকুক ছাই না থাকুক, উপায় থাকেনা। জনে জনে ধরে সার্ভে নিতে গেলে অবশ্য অন্য কথা…
আপাতত কথা হচ্ছে এই, যে আয়নানগর ব্লগের যে ক্যাটেগরিতে সবচাইতে কম ‘হিট’ পড়ে সেটা হল আমাদের অনলাইন আর্কাইভ। পুরনো ছোট পত্রিকা – যা তিন-দশ-পনের-পঁচিশ বছর আগে বেরিয়ে এখনও পুরোদমে চলছে, বা হয়তো মরে-হেজে গেছে, হয়তো পাতিরাম ধ্যানবিন্দু সমস্ত আড়ত খুঁজেও তাদের আর পাওয়া যাবেনা। ধরুন আপনি বাংলা সাহিত্যপ্রেমী। এখন কেউ যদি হঠাৎ এক শনিবারের সকালে বিনি মাগনায়, সোজা আপনার দোরগোড়ায়, তেমনই এক নাম না-জানা বা জানা, পড়া বা না-পড়া পত্রিকার অবস্কিওর একটি সংখ্যা এনে হাজির করে, একবারটি কি নেড়েচেড়ে (পড়ুন, স্ক্রোল করে) দেখারও সাধ জাগেনা? আমাদের তো জাগে! অন্তত ল্যাপটপে ডাউনলোডটি করে রেখে দিই ঠিক। পড়ে ওঠা সবসময় তক্ষুনি-তক্ষুনি নিয়ম করে হয়ে ওঠেনা বটে, তবে হঠাৎ করে আবার হয়েও যায় – প্রয়োজনে, সময় কাটাতে – যেমন করে পৃথিবীর বেশিরভাগ বই পড়া হয় আর কি। আবার বেশিরভাগ সময়ই সফ্ট‌ কপিটি উল্টেপাল্টে দেখার পরে উৎসাহিত হয়ে বইটাই কিনে ফেলি। কিন্তু মূল কথা হল, সাধটুকু থাকে।
হয়তো এ বাবদে জয় গোস্বামীই ঠিক কথা বলেছেন – যেদিন লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি আর থাকবেনা সেদিনই তার প্রয়োজন বোঝা যাবে।
যাই হোক, তেমন এক সাধের জায়গা থেকেই আমাদের আয়নানগরের জন্ম। আর সেই সাধের জায়গা থেকেই, অন্যান্য সংখ্যার আয়নানগর-আর্কাইভের থেকে আমাদের এবারের সংখ্যার আর্কাইভের তফাৎ এই, যে ‘হিটে’র তোয়াক্কা না রেখে এবারে আমরা একটির বদলে ছয়টি লিটল ম্যাগাজিন ও লিটল পাবলিকেশনকে (যাঁদের মধ্যে অধিকাংশেরই নাম কোন একজিস্টিং লিটল ম্যাগাজিনের লিস্টে পাওয়া যাবেনা। কি অনায়াসে এঁরা মার্কেটনীতিকে কলা দেখিয়ে চলেছেন – কেউ নিঃশব্দে, কেউ বা সগর্জনে!) – আমাদের স্বল্প পরিসরে ও ততোধিক স্বল্প কর্মক্ষমতাসীমার ভিতরে যেটুকু সম্ভব – তুলে ধরার চেষ্টা করছি। কিন্তু যত না তুলে ধরতে পারছি, না পারছি তার চেয়ে এত অস্বস্তিকর রকমের বেশি…!
আসলে অনলাইন আর্কাইভ করে এক মস্ত বাঘ মেরেছি – এই স্ট্যান্ড পয়েন্ট থেকে আমাদের যে একটা গত বইমেলা-ফেরতা ব্যাপক বিচ্যুতি ঘটল, সেটা নিয়ে প্রতিমুহূর্তে সংকটাপন্ন হচ্ছি। সাহিত্য কি, পত্রিকা কি, লিটল-বিগ বলতে আমরা কি বুঝি – এমনকি লেখা নির্বাচনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়ার যোগ্যতাবিষয়ক নানা এক্জিসটেনশিয়াল প্রশ্ন উঠে আসছে। ভরত যে কোন সাধে জড়ভরত হয়েছিলেন তার কতকটা উপলব্ধি করতে পারছি, ব্রহ্মজ্ঞানটুকু লাভ করতে যা বাকি। আজ যদি কেউ আঙুল তুলে প্রশ্ন করেন, এই গল্পটি কেন, ঐটি কেন নয়, কেন এই কবি আর উনি নন, এই পত্রিকা কেন, কেন নয় হাজার হাজার আরও যে পত্রিকা বাজারে-বন্দরে ডুবছে-ভাসছে তার অন্য কোনো একটি – আমাদের কাছে তেমন চমৎকার কোনো উত্তর নেই। খুঁটে খুঁটে যেমন পাচ্ছি-বুঝছি, তেমনটিই করছি – এই অব্দি। সুবিমল মিশ্র বারো সালে ‘উল্টো দূরবীন’কে দেওয়া ইন্টার্ভিউতে বলেছিলেন –

“লিটল ম্যাগাজিন ঘাঁটতে ঘাঁটতে এমন লেখা হঠাৎ হঠাৎ করে পেয়ে যাই বইকি! চমকে ওঠার মতো লেখা। ঘাবড়ে দেবার মতো। মূলত তরুণদের। […] যা কিছু পেয়েছি, চমকে দেবার মতো, লিটলম্যাগাজিনেই। বিগম্যাগে, তথাকথিত সাহিত্য-সংস্কৃতির মাতব্বর পাক্ষিক কাগজে তো…”

শূন্যস্থানটুকু সুবিমল মিশ্র – এই নামের সাথে পরিচিত পাঠকরা পূরণ করে নিতে পারবেন। কিন্তু ঐ হঠাৎ চমকে যাওয়ার আশাতেই আমাদেরও লিটল ম্যাগ আর্কাইভাল যাত্রা।

আয়নানগরের লেখক-পাঠকদের মধ্যে কেউ কেউ জানেন, গেল জানুয়ারি মাসে আমরা কলকাতা বইমেলা চত্ত্বরে ঘুরঘুর করছিলাম আমাদের প্রথম ছেপে বার হওয়া আয়নানগর বইমেলা সংখ্যা বেচার উদ্দেশ্যে। ‘বেচা’? সাহিত্য কি বেচা যায়? সম্পাদকীয় ডিগনিটি? মরে যাই! বেচারাম বই বেচে, কেনারাম কেনে; এমনিতেও বেচা-কেনা এবং রাম আপাতত আমাদের জাতীয় আইডেন্টিটি, বাকিটা বারোয়ারি ডাস্টবিনে ফুলে ওঠা ছানা – এই তো গল্প! কপাল ভাল, ওরই মধ্যে থেকে-থেকে গাছের কাছে গিয়ে দাঁড়াবার সুযোগ পেলাম। দেখলাম – ইশ! কত ছোট!
১) গল্পের প্রসঙ্গে প্রথমেই যেটা বলার, ‘মালিনী’ পত্রিকার নাম শুনেছেন কি? এবারের বইমেলায় ওঁদের একটি গল্প-সংখ্যা বেরিয়েছে, পড়েছেন কি? পাকেচক্রে না হলে আমরাও পড়তাম না কিন্তু। জানতামই না! অথচ গত একবছর ভার্চুয়াল স্পেসে আমরা ছোট পত্রিকা করে ফাটিয়ে দিচ্ছি… অথচ ‘মালিনী’র এটা ৩৬তম বইমেলা সংখ্যা… অথচ।

লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়নের পিছনের চায়ের স্টলটায় চার-চারটে ভীষণ গরম কাপ হাতে নিয়ে ভয়ানক বিপন্ন মুখে দাঁড়িয়ে আছি। খুচরো খুঁজে পাচ্ছিনা। আমার যে বন্ধুরা আমায় অভিমন্যুর মত একা ঐ চা-পিপাসু রণক্ষেত্রে ঠেলে দিয়েছে তাদের টিকিও খুঁজে পাচ্ছিনা। এদিকে দোকানি আমায় না স্টলের সামনে থেকে নড়তে দিচ্ছেন, না দিচ্ছেন কাপগুলো রাখার মত সূচ্যগ্র জমিটুকু – মিথ্যে বলব না, জমি নেইও বটে – বাড়ানো হাতের পাতায় ঢেকে গেছে। এমন সময় সুকমল ঘোষ – তখনও তাঁকে চিনিনা (এখনও যে চিনি তা নয়, কিন্তু ‘মালিনী’তে তাঁর লেখার মধ্যে দিয়ে এ-ই কয়েক আঙুল বেশি চিনি) – কি ম্যাজিকে ঐ কাস্টমার-ব্যূহ ভেদ করে আমার নাক বরাবর এগিয়ে এসে সো-জা লাল গরগরে একখানি দেশ-প্যাটার্নের পত্রিকা নাড়িয়ে অসম্ভব বিনীত-করুণ মুখে বললেন – তিরিশ টাকা।
না, আমার সম্পাদকীয় ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় চুলবুল করে উঠল না। নারীহৃদয়ের তথাবিখ্যাত এমপ্যাথি জাগরূক হয়ে উঠল না। দাঁত কিড়মিড় করে বললাম – দেখছেন না! খুচরো নেই!
তদ্‌সত্ত্বেও ‘মালিনী’ ৩৬তম বইমেলা সংখ্যা আমার ল্যাপটপের একপাশে সমারোহে শোভা পাচ্ছে। স্বয়ং শ্রী সন্তোষকুমার ঘোষের পৃষ্টপোষকতায় জন্ম যে পত্রিকার, গত পঁয়ত্রিশ বছর ধরে প্রায় একা হাতে ও পরবর্তীকালে সহ-সম্পাদক শ্রীমতি সুস্মেলী দত্তের সহায়তায় যে পত্রিকা প্রকাশ করে চলেছেন সম্পাদক শ্রীমতি মায়া সিদ্ধান্ত, বেচাকেনার এই পৃথিবীতে যে পত্রিকা নতুনদের অকাতরে বরণ করে নেওয়ার দাবি রাখে, আধারে-ভুলাব-না-গো-আধেয়তে-ভুলাব সেই ‘মালিনী’কে দিয়ে আমরা আয়নানগর এপ্রিল ২০১৫ সংখ্যার লিটল ম্যাগাজিন আর্কাইভের খাতা খুললাম। তিরিশ টাকা জোগাড় হয়েছিল, তবু সুকমলবাবুর কাছে আমাদের ঋণ রয়ে গেল।
মালিনী ২০১৫ সংখ্যা থেকে বেছে নেওয়া সাতটি গল্প – ডাউনলোড করে পড়ুন এইখান থেকে

***

২) এবার বইমেলায় গিয়ে হাঙরের মত কবিতাবিষয়ক ছোট পত্রিকা কিনেছি। তার প্রায় সবই আর্কাইভ করতে সাধ জাগে – এবারেই, এখানেই। যদি পারতাম! তাই এবারের কবিতাসম্পর্কিত লিটল ম্যাগাজিন – ‘আদম’, ডিসেম্বর ২০১৪ সম্মাননা সংখ্যাকে বেছে নেওয়ার পিছনে একদিকে রয়েছে একটা চোরা গিল্টের জায়গা – একটা ঘাড় নীচু করা, আড়চোখে তাকিয়ে যেন দেয়ালকে বলছি তেমন বিড়বিড় করে কাকে যেন বলা – “পরেরবার…?” আবার অন্যদিকে দেখতে গেলে, যার এক সংখ্যায় আলোক সরকার, শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায় আর ভূমেন্দ্র গুহ – বাংলার বাণিজ্যবুদ্ধিহীন কবিতাক্ষেত্রের তিন রাখাল একসাথে অন্তরঙ্গে বিরাজ করছেন, তাকে হাত্তা মেরে বরণ করে না নিয়ে উপায়ই বা কি?

তবে সত্যি বলব, ‘আদম’কে বেছে নেওয়ার কারণ শুধু কবিতা নয়। তিন কবিকে কেটেছিঁড়ে পরিবেশনা করার পর সম্পাদক গৌতম মণ্ডল নিয়ে এসেছেন বাংলা লিটল ম্যাগাজিন অলঙ্করণের নায়ক হিরণ মিত্রকে এবং তারও পরে আমাদের আরাধ্য ‘কলিকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণাকেন্দ্রের মত একটি জীবন্ত মহীরূহ প্রতিষ্ঠানে’র জনক শ্রী সন্দীপ দত্তকে। শেষ পাতে রয়েছে ‘অনুবর্তন’ – দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রকাশিত একটি ‘বীজপত্র’ – একটি অনুচ্চকণ্ঠ ‘ভাবান্দোলন’, রয়েছেন পাঁচজন তরুণ কবিও। সন্দীপ দত্তের কথাই যখন উঠল, তখন দু-কলি শোনাই, তাঁরই স্বকণ্ঠে, ‘আদমে’র তরফে ‘সাক্ষাৎকারক’ শ্রী ঐশিক দাশগুপ্তের প্রতি:

“আসলে আমার মনে হয়েছে অনেক কবি কবিতা লেখে, আমরা কতকগুলো নির্দিষ্ট কবিদের কথা বলি। তার বাইরে অনেকে অনেকদিন ধরে লিখছেন। যেমন আমি একটা প্রয়াস নিয়েছিলাম, ‘হার্দ্য’ পত্রিকার মধ্য দিয়ে। […] ভিক্টোরিয়ায় একবার একটা বিরাট সভা হচ্ছে টাকাপয়সার কোনো ব্যাপার নেই। আমাকে বলল সন্দীপ দত্ত লিটল ম্যাগ নিয়ে কিছু বলবেন। আমি দেখলাম কবিতা পাঠ করছে সবাই, শেষদিকে লিটল ম্যাগ। আমি দেখলাম কোনো মানে হয়না। আমি তখন কবিতা পড়লাম। তার উত্তরে উদ্যোক্তাদের একজন বলল – ‘আবে শালা আজকে নতুন একটা আবিষ্কার করা গেল সন্দীপ দত্ত কবি’ […] কবিতামঞ্চে সারাজীবন পড়ে যেতে হবে তবে সে কবি। সারাজীবন অ-কাগজ, বি-কাগজে ছাপার অক্ষরে লিখে যাবেন – তিনি কবি। এই জায়গাটায় একটা অন্তরায় রয়েছে আমাদের ভাবনা-চিন্তায়। আমি কবিতা লিখছি কবে থেকে – কবিতা লেখাটা ওইভাবে নয়, আমি মঞ্চে কবিতা পড়িনি কিন্তু শূন্য দশকে এসে আজকে বলছে সন্দীপ দত্ত কবি। এই মর্মব্যথাগুলো রয়েছে। […] লিটল ম্যাগের জায়গা থেকে, ধর্ম থেকে, আদর্শ থেকে এই কাজগুলো করে যাচ্ছি।”

সন্দীপ দত্ত ও সম্মাননা সংখ্যার পাতায় পাতায় তুলে ধরা বাকি মানুষগুলি, যাঁরা অনেকেই ‘ছোট’ থেকে গেছেন ‘বড়’ হওয়ার পথে নিজেদের মানিয়ে নিতে না পেরে, তাঁদের এইভাবে পাঠকের কাছটিতে নিয়ে আসবার জন্য, আবারও আরেকটি অর্বাচীন লিটল ম্যাগাজিন হিসেবে ‘আদম’কে আমাদের অপরিসীম ধন্যবাদ।
‘আদম’ ডিসেম্বর ২০১৪ সংখ্যাটি এইখান থেকে ডাউনলোড করে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখুন। এটি একটি ঘরে রাখবার মত বই। যোগাযোগ গড়ে তুলুন ‘আদমে’র সাথে – সম্পাদক গৌতম মন্ডলের নম্বরে – ৯৮৩০০২৭৪০৩।

***

৩) এবার বইমেলায় শেষ মুহূর্তে তল্পিতল্পা নিয়ে হাজির হয়েছিলাম। তাই কোনো ঠিকানা মেলেনি। আমাদের গ্রন্থভার হাসিমুখে বহন করেছিলেন নানান বন্ধুরা – ‘অহল্যা’, ‘হুডিনির তাঁবু’, ‘সোঁতা’, ‘মন্থন’, ‘দুর্বার’ এবং আরও অনেকে – যাকে বলে তোমা’-সবাকার-ঘরে-ঘরে কেস। এর মধ্যে প্রথম দুটি ‘টেবিল’কে নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই – আর সেটা বলতে চাই যেকোনো রকম কৃতজ্ঞতার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু জায়গা থেকে। আগে ‘অহল্যা’র কথায় আসি। কৃতজ্ঞতার কথাটুকু দিয়েই শুরু করি, তবে এ কৃতজ্ঞতার রসটি ‘কৃতজ্ঞতা’ – এই শব্দটিতে মাত্র সীমাবদ্ধ নয়।
‘অহল্যা’র গার্গীদিকে আমরা এত জ্বালিয়েছি, আর তা এত নির্লজ্জে-স্বচ্ছন্দে সেটা বলবার নয়। এই টেবিলের নীচে পায়ের কাছে ব্যাগভর্তি বই ঠুসে দিলাম, তো ঐ ছোট্ট টিফিনবাক্সের মুড়ি-গাজরের থ্রি-ফোর্থ হাপিশ করে দিলাম। প্রায় রোজই ওঁদের বসিয়ে রাখা হত, যতক্ষণ না আমাদের মেলা দেখা শেষ হচ্ছে। পৌনে আটটার দিকে প্যাভিলিয়নে ফিরে দেখতাম ওঁরা ব্যাগ-ট্যাগ গুছিয়ে রেডি – আমাদের জন্য বসে রয়েছেন, এদিক-ওদিক চাইছেন…

এবার আসি ‘অহল্যা’ পত্রিকার কথায়। ‘অহল্যা’ আমাদের এবারের আর্কাইভের অন্যান্য পত্রিকাগুলির চেয়ে নানা দিক দিয়ে আলাদা। সর্বোপরি, এটি সাহিত্যপত্রিকা নয়, যদিও প্রবন্ধ-রিপোর্টের পাশাপাশি এতে রয়েছে গল্পকবিতা – যার ভাষা বিশেষত ‘নারীর ভাষা’। তবে আবারও বলি – কোনটা সাহিত্য, কোনটা প্রতিবাদ আর কোনটা ঘোড়ার ডিম এ নিয়ে তাত্বিক বাদানুবাদে যাওয়া আজকাল মাঝেমাঝেই ধৃষ্টতা বলে মনে হয়…
বছর বত্রিশ আগে, মেটিয়াবুরুজের জুটমিল-এলাকায় শ্রমজীবি ও শ্রমিকবাড়ির মেয়েদের নিয়ে ‘স্বাধীনতা, মর্যাদা, সমানাধিকারে’র লক্ষ্যে, সম্পাদক চন্দনা মিত্র, আরতি সেন, ডালিয়া ঘোষ, শ্রীলা চক্রবর্তী, দীপা চাকী এবং আরও অনেকের হাত ধরে ‘অহল্যা’র জন্ম। শস্তার কাগজে ছাপানো, পাতলা লিফলেটের মত চেহারা নিয়ে এই সেলেবিলিটি আর প্যাকেজিং-এর যুগে ‘অহল্যা’র মত পত্রিকারা আমাদের গর্ব, আত্মমন্থন, প্রেরণা ও ভরসার জায়গাগুলিতে এমন একটা জটিল কিন্তু দৃঢ়প্রোথিত খুঁটি হয়ে আছে, যেটা কিছুতেই কথায় বুঝিয়ে ওঠা যাবেনা। বাংলায় মেয়েদের নিজস্ব রাজনৈতিক ও সমাজনৈতিক চিন্তাভাবনা, সৃষ্টিশীলতা, লিঙ্গচেতনা – এসব নিয়ে ভাবতে, কথাকথন করতে গেলে ‘অহল্যা’কে এড়িয়ে যাওয়া মুশকিল।
‘অহল্যা’ একটি আন্দোলন হলেও যে ‘অহল্যা’কে আমরা আমাদের আর্কাইভে ধরে রাখতে চাইছি, তা বিশেষভাবে ‘অহল্যা’ পত্রিকা। কারখানা-কর্মী, আঞ্চলিক বাংলা কথ্যভাষী মেয়েদের এই মুখপত্রটি যাঁদের কথা তুলে ধরতে চেয়েছিল, তিন দশক আগে তাঁদের অধিকাংশজনের অবস্থান তখনও প্রাথমিক পড়াশুনোর লাক্সারি থেকে বহুদূরে। তাই নানা পাঠচক্রের মাধ্যমে, অনেকসময়ই লেখাগুলিকে তাঁদের কথ্যভাষায় ট্র্যান্সলিটারেট করে শুনিয়ে তাঁদের সাথে এই পত্রিকার যোগাযোগের জায়গাটি গড়ে ওঠে। আজ সেই অবস্থা অনেকটাই পাল্টেছে। শ্রমজীবি মহিলারা নিজেরাই ‘অহল্যা’ হাতে তুলে নেন বা তাঁদের মেয়েরা, যাঁরা এখন স্কুলকলেজের ছাত্রী, ‘অহল্যা’ পড়ে শোনান তাঁদের মায়েদের। গত বছরের ‘অহল্যা’র মিলনোৎসবের রিপোর্ট থেকে কয়েক লাইন তুলে দিলাম:

“ভাবনা ছিল সাধারণ মেয়েরা এতে নিজেদের মনের কথা, অভিজ্ঞতা, সমস্যা, সাফল্য-এর কথা লিখবে, অন্যেরটা পড়ে জানবে, মিলিয়ে দেখবে, মত বিনিময় করবে, তর্ক করবে। অতীতে আমাদের পূর্বসূরীরা মেয়েদের অধিকার-মর্যাদা এবং সমাজের একজন হয়ে কিভাবে দায়িত্ব পালন আর লড়াই করেছেন সে ইতিহাসও সবাই জানবে। এইভাবেই একটা অগ্রণী মত এবং অগ্রণী নারীবাহিনী গড়ে উঠবে যারা শুধু নিজেদের কর্ম নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবেনা, যারা পেছনে পড়ে থাকছে তাদের সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাবে।” (‘অহল্যা’র তরফে সুমনা কোলে)

ওঁদের শহীদ দিবস সংখ্যার (নভেম্বর-ডিসেম্বর ২০১৪) অংশবিশেষ তুলে দিলাম আমাদের আর্কাইভে। অন্যান্য লেখার সাথে এতে রয়েছে কবি কামিনী রায়, স্বাধীনতা-আন্দোলনকর্মী কল্পনা দত্ত, প্রবীণ কমিউনিস্ট কর্মী গীতা দাস এবং লেখক-সমাজকর্মী মীনাক্ষি সেনের স্মরণে প্রয়োজনীয় কয়েকটি লেখা, রয়েছে প্রীতিলতা ওয়েদ্দারের নিজের কলমে একটি ছোট্ট আত্মকথার পুনর্মুদ্রণ। ডাউনলোড করে পড়ুন এইখান থেকে। ভাল লাগলে, ইচ্ছে হলে, চন্দনাদির সাথে সরাসরি যোগাযোগ করুন ৯৮৩১১৩১৭২৫ – এই নম্বরে।

***

৪) ‘অহল্যা’ যদি হয় বয়সে ত্রিশোর্ধ, দাবিমুখর, স্থিরলক্ষ্য ‘নারী সমাজের মুখপত্র’, ‘হুডিনির তাঁবু’ তবে তার বাউলবুর্জোয়া যুবসমাজীয় , আপাত-লিঙ্গহীন,  শিল্পমগ্ন অ্যান্টিথিসিস – এখনও নেহাতই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা। এঁয়াদের সাথে প্রথম পরিচয় ফেসবুকে, ‘ঠেকে’র গেছোদিদি দ্যুতি মুখার্জির সৌজন্যে। তারপর তো টেবিলসূত্রে সরাসরি আলাপ, ওঁদের ঋতম সেনের ‘জাগো রাই’ পড়ে ভয়ানক মুগ্ধ হয়ে আরও খানিকটা পরিচয়।
hou1
হাজার এক রকমের শিল্প-খেয়াল বেচেন, বিলিয়ে বেড়ান ওঁরা। ২০১০ নাগাদ একদা হঠাৎ দু-এক ফর্মার পাঁচ-ছ’টা ইয়ে ছাপিয়ে, লিটল ম্যাগাজিন মেলায় টেবিলের তোয়াক্কা না করেই ফুটপাতে ফেলে হকারির মত ওঁদের সাহিত্যব্যবসার সূত্রপাত। ‘ইয়ে’ বলছি কারণ কিছুতেই কোনো বাঁধা পথে ‘বই’ করা যাবেনা এইরকম একটা ধারণা মাথায় গেঁথে ওঁরা কাজ করতে নেমেছেন। ছবি, গান, লেখা, নির্ভেজাল ভাট – শিল্পের কোলাবরেশন-প্রশ্নে ওঁদের কোনো ছুঁৎমার্গ নেই। তারই মধ্যে ‘বই’ কাকে বলে তার সংজ্ঞায়ন করার একটা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ওঁরা। মধ্যে-মধ্যে নিজেরাই একেকটা অদ্ভুত প্রচ্ছদ এঁকে ফেলছেন নিজেদের বইয়েরই – রহস্যগন্ধী, সাইকেডেলিক কিছু ছবি…
hou
কখনও নীল জ্যাকেটে ইঞ্চি-পাঁচেকের পরিসীমার্ধে দু’হাত বাড়িয়ে ইয়ার্কির মত রাগ-ভয়-প্রেম-যৌনতার আঁচড়…
hou2
আবার কখনও মাটির কলসীর মত ঠান্ডা, শান্ত একটা মলাটের ভিতর কি এক লেটেন্ট এনার্জি ভরে চল্লিশ টাকার মাল না তাকিয়েই এমন ফ্রিতে ছুঁড়ে দিচ্ছেন যে কেস খাওয়ার মত ওঁদের তাঁবু থেকে একবার হিঁচড়ে টেনে নিজেকে বার করে আনবার পর অতিষ্ঠ হয়ে স্বীকার করা ছাড়া উপায় থাকছে না – “তোমায় ও তোমাদের না ভাবা অভ্যেস করেছি” – কারণ আমরা তাঁবুর বাইরের লোকগুলো ঐ উদ্দাম স্থান-কালটার বাইরে সরে এসেছি, তা অনেকদিন হল – খানিকটা স্বেচ্ছায়, খানিকটা কেচ্ছায়। এখন হাত কামড়ানো বা মাথার চারদিকে একটা ফুট-দুই-লং রেডিয়াসের জ্যোতির্বলয় জ্বালিয়ে রাখার বৃথা চেষ্টা করা ছাড়া আর তেমন কোনো উপায় নেই আমাদের – ‘হুডিনির তাঁবু’ সেটা বড় বেশি করে মনে করিয়ে দেয়।
hou3
হুডিনির নানা বই থেকে এতগুলো মলাট তুলে দেওয়ার কারণটায় আসি। যত ক’টি শিল্পভাবনায় ওরা খুঁটি পুঁতেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে স্ট্রং বোধহয় ওদের চিত্রকল্পগুলি। হতে পারে সেটা ইমেজ-আর্টের মাফিয়াগিরি, বা হয়তো এর পিছনে কাজ করছে আমাদেরই একটা হুডিনিজড়িত বায়াস, যার নাম কৌস্তভ চক্রবর্তী। কৌস্তভ প্রথম থেকে আয়নানগরের সাথেও যুক্ত থাকায় ওর আঁকার হাতের সাথে আমাদের পুরনো পরিচয় – হয়তো তাই। কৌস্তভের দীর্ঘমেয়াদি একরৈখিকতা চর্চার – যাকে বলে নতিজা (আবার হয়তো শুরুয়াতও বটে) – সেই ‘অসীম’কে আমরা আর্কাইভ করব ভাবছি তা প্রায় এক বছরের উপর হতে চলল, যখন হয়তো ‘অসীম’-এর গোড়াপত্তনটুকুই হয়েছে মাত্র। ‘হুডিনির তাঁবু’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে এই ‘বই’, যা রেখায় ও জীবনে অসীমের রূপ ধরতে চেয়েছে বা তাকে নিয়ে খেলা করতে চেয়েছে, যার জন্য কেউ ‘পাঁচ টাকাও দিতে পারে, পাঁচশোও, কেউ খিস্তি দিতে পারে, কেউ জড়িয়ে ধরে খেতে পারে চুমু’। কৌস্তভ অসীমকে বা অসীম কৌস্তভকে কতটা ধরতে পেরেছে, তার সাক্ষী দেবে ওর বা ‘হুডিনির তাঁবু’র পরবর্তী কাজগুলি। আমরা আপাতত আয়নানগরের পাতায় তাদের পারস্পরিক তাল ঠোকার কিছু উদাহরণ রাখি…
hou4
‘হুডিনির তাঁবু’র তলায় রয়েছেন চান্দ্রেয়ী দে, ঋতম সেন, কৌস্তভ চক্রবর্তী, দীপাংশু আচার্য, অতনু সিংহ, সোমতীর্থ নন্দী, শৈবাল সরকার, অরূপ ঘোষ, মনিদীপা সিংহ এবং আরও অনেকে। ওঁদের গোটা-গোটা বই আপলোড করতে মন চাইছেনা। এই বই কিম্বা অ-বইগুলি হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখার। সন্ধানী পাঠক ফেসবুকে বা এমনিই ওঁদের খুঁজেপেতে পড়ে নেবেন, বা হয়তো এর মধ্যেই পড়ে নিয়েছেন ঠিক, এ আমাদের অনড় বিশ্বাস!

***

৫) হুডিনির সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অথচ আরেক একলষেঁড়ে সহযোদ্ধা, যাদের কলকাতা-বইমেলা ২০১৫ পরিভ্রমণেরও শুরুয়াত ঐ ‘হুডিনির তাঁবু’র ১০০ নং টেবিল থেকেই, তাদের নিয়ে দু’কথা না বললে এই ক্ষ্যাপার গানটা অসমাপ্ত থেকে যায়। ‘Damn you’ কবি অরবিন্দ কৃষ্ণ মেহেরোত্রার বছর পঞ্চাশ আগেকার একটি (ইংরিজি) কাব্যপত্রিকা-আন্দোলন, যার মাত্র চারটি সংখ্যার কয়েকটি ইতিমধ্যেই কালের গর্ভে অদৃশ্য। সেই ড্যামনেশনের আদর্শে, ‘নোটিস বোর্ড কালেক্টিভ’-এর উদ্যোগে সৌরদীপ রায়ের সম্পাদনায় কবিতার চ্যাপবুক ‘Damn you’, issue 1, version 1.0, theme – rangzen – স্পাইরাল বাইন্ডিং-এ পাতা তিরিশেকের প্রিন্ট আউট – কুড়িটি ইংরিজি কবিতা। তাতে পচে যাওয়া দুধ আর লেনিনকে লেখা চিঠি আর বোরখার আর গোধরার আর ভোরবেলাকার অন্ধকার। মলাটের ফটোয় চীন এম্ব্যাসির সাইনবোর্ডের উপর বিক্ষোভ দিয়ে লেখা – ‘Free Tibet’।
আবার ওঁদের অরিত্র সেনগুপ্তর ‘Made in China’ কবিতায় আছে জনপ্রিয় কাউন্সিলর বোসবাবুর ছাত্রজীবনের এক অ্যানেকডোট – এক বারফাট্টাই ট্রেড ইউনিয়ন নেতার সম্পর্কে…
“He was once asked at some leftist convention/ about his views on the human rights violation/ by China in Tibet.
He seemed very, very perplexed/ After a long pause, he replied,/ “Tibet? ummmm…momo, thukpa…all that…/ great contribution to the world food culture../ Human rights and all, that I don’t really know”
Every time Bosebabu finished telling us this story,/ he smiled a little, It was then I realized/ disillusioned communists/ have the saddest smiles.”
‘ড্যাম ইউ’ পত্রিকা বা কাব্যগ্রন্থ বা লিফলেট বা দেয়াললিখনটি (কলকাতা থেকে ফিরবার সময় আমার ব্যাগ গোছাতে গিয়ে আমার মা গোটা কুড়ি বই-কাগজের ফাঁকে যেটাকে পড়ে থাকতে দেখে বিনা প্রশ্নে নিশ্চিন্তে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দিতে যাচ্ছিলেন) তার মুক্ত তিব্বতের স্বপ্ন ব্যতিরেকেও, শুধুমাত্র তার গোঁয়ার অকারুশৈল্পিক ঔদ্ধত্যে আবারও আমাদের প্ল্যানিং-প্যাকেজিং-মার্কেটিংময় পৃথিবীর নাকে ঝামা ঘষে দেয়। ‘ড্যাম ইউ’-এর কবিরা অ্যাক্টিভিস্ট – কেউ কাজে, কেউ স্বপ্নে। বিভিন্ন ভাষাভাষী ওঁরা। কেউ ছাত্র, কেউ ছাত্রাবাস থেকে পালিয়ে ট্যাটু আর্টিস্ট, কেউ আর্ট করতে করতে হঠাতই প্রেতসন্ধানী। কারুর পা দিল্লি শহরে, মাথা পাহাড়ের চুড়োয়, কেউ স্বভাবপ্রেমিক কিন্তু সে প্রেম শাসনে লভ্য নয়, কেউ গদ্যলেখক, কেউ গাঁজাড়ি, কেউ আবার সত্যি সত্যি টেকনিক্যালিই কবি আর কেউ কেউ এখনও ব্যাপারটা ঠিকমত বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু কেমন সে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা? কাকে?

“I    Gyelek     Khedup     Atisang/ Have      stood             alone/ For twenty five years or was it twenty six/ I’m a little confused you see because I’ve forgotten which calendars I follow/ Yours      or      mine/ Always      measured      carefully/ Whether the colloquial I speak can match the shade of my skin or the colour of my eyes” (Sky Burial, Gyelek Khedup Atisang)
‘ড্যাম ইউ’ পড়ুন এইখান থেকে ডাউনলোড করে। কিন্তু আমরা বলব, ওঁদের সাথে যোগাযোগ করুন। একটা ইমেল লিখে ফেলুন damnyou@gmail.com-এ। জোগাড় করুন ওদের বই, পড়ুন, পড়ান, যাতে অর্ধশতাব্দী পরে আবার করে শুরু হওয়া একটা আন্দোলন সময়ের জাঁতাকলে পড়ে দ্বিতীয়বার হারিয়ে না যায়। কারণ, একে তো আপনার কবিতার বইয়ের তাকে এইরকম চেহারার বই আর একটিও নেই, আমরা হলফ করে বলতে পারি। তার উপর কে জানে, বিপ্লব যদি শখ-বৈঠকখানা-ফেসবুক ছাড়িয়ে এইভাবেই পথে নেমে আসে একদিন?
বিপ্লবের কথা উঠল, তাই একটা বাজে গল্প বলি – সৌরদীপদের ‘ড্যাম ইউ’-এর দাম ধার্য করা হয়েছে অরবিন্দ কৃষ্ণ মেরহোত্রার ড্যামনেশনের পথ হুবহু অনুসরণ করে। বই-এর পিছনে দামের জায়গায় ইংরিজিতে তেমনি লেখা আছে ‘Anything commensurate with your dignity and ours’। দিল্লিবাসী সৌরদীপের লক্ষ্মণসদৃশ অবৈপ্লবিক কলেজবালক ভাইটি তার এক বন্ধুর সাথে কয়েক কপি ‘ড্যাম ইউ’ আমাদের হাতে তুলে দিতে এসেছিল কলকাতা বইমেলায়। আমাদের মত ওরাও টেবিলহীন। হুডিনির উদার ছত্রতলে কয়েক কপির ঠাঁই হয়ে গেল। কিন্তু ওদের টেবিল থেকে ফিরতে ফিরতে দেখি এরই মধ্যে আয়নানগরের প্রোফেশনাল বিপ্লবী প্রমোদদা দুই বন্ধুকে বিপ্লবপরিচয়ের প্রথম পাঠ পড়াতে শুরু করে দিয়েছে; মানে তিন কপি ‘ড্যাম ইউ’ তুলে নিয়ে ওদের হাতে একশোটি টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলছে – “এর থেকে এক পয়সাও তোর দাদাকে দিবিনা। চাইলে বলে দিস যে তোদের ডিগনিটিতে এইরকমই বলে…”

***

৬) আজকের শেষ গল্পটি আবারও একটি অন্যরকম পত্রিকার। আজকাল আমাদের পরিচিত অনেকেই, আমাদেরই মত, কাজের সূত্রে বাংলার বাইরে থাকেন। তাঁদের বাঙালি বন্ধুর সাথে সাথে সমমনস্ক অবাঙালি বন্ধুও অনেক। কিন্তু, আমাদেরও যেমন, এঁদের অনেকেরই বাংলা ভাষায় পড়া ও লেখার উৎসাহও রয়ে গেছে ষোলো আনা। তাছাড়া নানা ভাষার বিভেদের ঠিক কতটা সত্যি আর কতটা রাজনৈতিকভাবে চাপানো গা-জোয়ারি – এইজাতীয় প্রশ্নও তুলতে চেয়েছেন কিছু মানুষ। তাই পত্রিকা করতে গিয়ে অনেকেই আজকাল বাইলিঙ্গুয়ালিটি বা মাল্টিলিঙ্গুয়ালিটি কে স্বচ্ছন্দে স্বীকার করে নিচ্ছেন। যেমন করেছে ‘অন্যদিগন্ত’ – সুদীপ সাহা আর সিজার মিশ্রের সম্পাদনায়।

সমসাময়িক সমাজের নানা দিক নিয়ে প্রশ্নোত্তর ও কথোপকথন চালিয়ে যেতে চান এঁরা। আমাদের এই সংখ্যাটিতেই সিজার মিশ্রের লেখায় রয়েছে ‘অন্যদিগন্তে’র সূচনা ও পথ চলার গল্প। ওঁদের সম্পর্কে আরও জানতে, বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে যোগাযোগ করুন ৯৯৩৩৬৮২৮৪২/ ৯৫৩৫৬৮০১১৫ নম্বরে। ‘অন্যদিগন্ত প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা’র অংশবিশেষ ডাউনলোড করে পড়ুন এখান থেকে। ভারতীয় নারী নিধন, কক্সবাজারে বৌদ্ধনিধন, পিঙ্কি প্রামাণিকের ব্যক্তিত্ব ও কেরিয়ারনিধন এইরকম আরও হাজার একটা হত্যাকাণ্ড যা আমরা আমাদের বুদ্বুদীয় জীবনযাত্রার কোল্যাটারাল ড্যামেজ হিসেবে নিত্য অ্যাকসেপ্টপূর্বক চা-বিস্কুট খাই, তাকে ‘জাস্ট নিতে না পারা’ আবারও কিছু অসহায় প্রশ্ন তুলেছেন ওঁরা ওঁদের পত্রিকায়। সঙ্গে রয়েছে আমাদের আর পাঁচটি লিটলের মতই কিছু কবিতা।

2 thoughts on “Little Magazine(s) Of The Month: April 2015

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.