মিত্রাভ ব্যানার্জি

”আমার ঢক্কানিনাদ: আমার এক মুসলমান সহযোদ্ধা ভারি অতর্কিতে জীবনের মূল গোলযোগটির সমাধান করেছিলেন, দু বাক্যে, আততায়ীর খররর মেশিনে স্ফুলিঙ্গ ধার চাক্কুর তিক্ষ্ণতায়। ম্যাগাজিনে সেদিন দীপিকা তেমন বস্ত্রাবৃত নন। তবু উদাসীন দৃষ্টি মাত্র খচ্চা করে আলি সাহেব বল্লেন ‘আরে ভুলো মাৎ, হাম হাজি হ্যায়, পর জাহাজি ভি হ্যায়’। মিটে গেল। সেই থেকে আমার পদ্যে পোঁদ শব্দ ব্যাভারে বাধে তা স্বীকার কত্তে লজ্জা পাইনা। কালীপুজোর আধসেদ্দ মটন নিজেও ওড়াই এদিকে পোষ্য সারমেয়কে আহারে বলে হাড্ডিটা চালান কত্তে ভুলিনাতো। দাম্পত্য কলহে মৃত্যু চিন্তায় শিহরিত হই, কলহান্তে ন্যান্সি কলহনের। আপাতত বিশ্বাস কচ্ছি আমাদের চিরাচরিত ফ্যান্টাশিশু ‘বদলে’ আন্দোলনের বা আন্দালুসিয়ার কবিসমাজের কোন হাত নেই। বদল আসে। যারা আনলাম বলে বক্ষ বিজ্ঞাপিত কত্তে পারে তাদের কর্মকান্ড কাব্য কি আন্দোলন বলে খ্যাত হয়। আমার অবিশ্বাস আপাত, ভাবনা আপেক্ষিক। কবিতারাও। এই সেনাদল আপাতসত্যি কিন্তু জাঁহাপনা এচ্চেয়ে সত্যি, এচ্চেয়ে স্থির আমার কাছে আর কিছু নেই এ মূহুর্ত্তে। আমার পানাশালায় নিষ্পাপ সন্ধ্যেতেও ধম্ম জিরাফ যিশুবাবা কাঁচাপেঁয়াজ পাঞ্চ হচ্ছে ভালোই।” – মিত্রাভ

উদ্ভিন্ন বৃহস্পতিবাসী দেবযানীর সংক্ষিপ্ত উপ্ত চুম্বন

সিঁড়ির ফাটলে ওল্লারা
পারস্পরিক, প্রতিবেশি কোন্দল
অর্থলোভ, হিংসে
চিতেবেড়া বা কাপড় মেলার তাগিদে
দেশভ্রমণ বিমুখ।
শ্রীহীন গেরস্তের মহীরুহ, পাঁচিলে তবু
অসংখ্য বল্লম, কাঁচে
রঙিন প্রতি শিখায় বিম্বিত
হলুদ অকর্মণ্য ট্রান্সফর্মার,
লাল বেনুদা রাতে
ট্রিং ট্রিং সাইকেলে বাড়ি ফেরে,
বেগুনী বাবাইরা রোজ
টুং টাং মদ খায় জানে সবাই,
মেরুন সংসারটা নষ্ট করে দিলো রে এ এ,
সবুজ ঠাস বন্ধ জানলায়
উলঙ্গ পদতলে, নীল ইনল্যান্ডে
দূরতম অশ্রাব্য নিন্দে, মন্দ বার্তালাপ।
তবু সে তীক্ষ্ণতা,
হ্যাট হ্যাট বেড়ালেরা, হুশ কাকে
পার হয়ে নিলো সৌম্যে।
এ অসময়ে অস্থানে
স্কুল পালালো কেউ, মুদির দোকানে
ধার বাকি কারো, চণ্ডীমন্ডপে জুতোজোড়া,
মহিলাদের গামছা-বেষ্টনী স্নান
খেলার মাঠ পারে রেললাইন
পারে বরফ কল। বিকেল।
অসভ্য জায়গা ছুঁয়ে দিলো কেউ
কেউ লাথি মারতে শেখালে
কেউ নিরুপদ্রবী ব্যাঙ, ভিখিরিকে ঢিল
মাধুরির শীষ, ডি মাইনর।
কেউ কাঁটাতারে ছড়ে
কি জানি কি অগভীর অসুস্থতায়
চাপা গল্প হয়ে গেল টিকটিকির জিভে।
তবু সে বন্ধ্যাত্ব –
অতিবৃষ্টির বাণ, বেতো পূর্ণিমা,
বিশ্বাসী হোমিওপ্যাথ
পাগলি দেখবি?
থুতু ভর্তি? উঁ উঁ ম্যাক্সি, মোটা মাগী?
শকুন, মৎস্যমুখী, সঅব…
পার করে এল, স্নিগ্ধতায়।
এই অতর্কিতে, অবেলায় দেশ আমার
ত্রিখন্ডিত হলো সীমারৈখিক।
আর আজ সে মরফিন ক্রোধ,
বালি, মাক্কালী, গলিপথ
ললাটে অনামিকা স্পর্শে বললে-
নিনাদে, ঘোষণায়, সুরধ্বনিতে-
‘এই শরমহীন ন্যাংটো’
‘এই পলায়ণ উন্মুখ
‘এই ছদ্ম পৃথিবী জেনো,
‘জেনো প্রিয় জেনো
‘তোমারও হতে পারত।
‘আজ ফিরে যাও হৃতশোক।
‘আজ ফিরে যাও অনিকেত।
‘আজ ফিরে যাও ক্ষুধার্ত।
ধীরপায়ে ফিরে যাও আজ, চিরতরে’।

***

যে নারকীয়
পাখিকে অমরত্ব দিও।
দিও উষ্ণ করুণ স্তন,
ধীর দিও ওম, উত্তাপ দিও তীব্র
ভিক্ষাভান্ডে ভরে।
তার অভ্র পালক, কাঞ্চন শীখ,
ইউরেনিয়াম চঞ্চু,
সৃজন কোরো গ্রীবা,
রাঙিয়ে নিও ঠোঁট।
ভুলে যেও সে পাখিও মৃত্তিকাকামী কেউ।
শিশুকে লালন কোরো।
রৌদ্রে, স্নেহে, পক্ষীসম শোকে
মমতায় ছুঁয়ে থেকো তার জল।
ভিক্ষাপাত্রে চেয়ে
তার সুরাতর্জনী, খরশান জিভ,
স্বর্ণসংকর খুন…
সৃজন কোরো গ্রীবা
রঞ্জন কোরো ওষ্ঠ,
ভুলে যেও সেই শিশুও সন্তানসম্ভাবী।

***

চের্ণোবিল পূর্ববর্তী সম্পূর্ণ বৈদেশিক সত্যি ঘটনা
মা কুলাক নিভিয়ে দিলে চুল্লি,
কাঠ কয়লার ছুটি আজকের মত।
কুলাক বাপ, হাঁড়ি মালসা কুলো
ধুয়ে নিলে সাবান ফেনা জলে।
আস্তে যাতে শব্দ বের না হয়।
সুস্থে যাতে কেউ না পায় টের।
মা কুলাক পর্দা টেনে দিলে,
গুপ্ত জানলা, খিড়কি, খড়খড়ি।
কুলাক বাপ কুটনো ডাল পালা
আগুন জ্বাললে আয়েশ পাবে বলে
আস্তে যাতে শব্দ বের না হয়।
সুস্থে যাতে কেউ না পায় টের।
মা কুলাক উঁকি দিলে চোরচুপে,
ছানা পোনা সব কম্বল তলে স্থির,
শরম নেইকো? বয়েস হয়েছে বুড়ি।
এই বয়েসে উঁকি দেওয়া কার সাজে?
আস্তে যাতে শব্দ বের না হয়।
সুস্থে যাতে কেউ না পায় টের।
কুলাক বাপের চুল পড়ে গেছে কবে,
নুয়ে গেছে পিঠ, চোখেও রোশনি কম।
নীরব আগুন, ম্রিয়মান, ধীর তবু,
তবু সে আগুন আছে তো ঘরের কোনে।
আস্তে যাতে শব্দ বের না হয়।
সুস্থে যাতে কেউ না পায় টের।
মা কুলাক শান্ত এলে কাছে
ঠোঁট ছুয়ে যায় কুলাক বাপের কান।
কুলাক তোমায় শ্বাস তো নিতে হবে,
কুলাক তোদের পেতেই হবে ঘ্রাণ।
আস্তে যাতে শব্দ বের না হয়।
সুস্থে যাতে কেউ না পায় টের।
কুলাক মা ফিসফিস, গলা চেপে
বললে ‘তোমার দিব্যি, মাথা খেয়ো,
‘এ সংসারে ভাল্লাগে না জানো,
এ সরকারে সবের বড্ড দাম’।
আস্তে যাতে শব্দ বের না হয়।
সুস্থে যাতে কেউ না পায় টের।
আস্তে যাতে দেশপ্রেমিক হও।
সুস্থে যাতে দেশও প্রেম করে।।
(ছন্দস্বার্থে কুরকুল বিসর্জিত)

1 thought on “তিনটি কবিতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.